এবার আন্দোলন ফিলিপাইনে, দুর্নীতি-স্বজনপ্রীতির বিরুদ্ধে ক্ষোভে ফুঁসছে জনতা

3 hours ago 3

এবার আন্দোলন শুরু হয়েছে ফিলিপাইনে। সেখানে দুর্নীতি-স্বজনপ্রীতির বিরুদ্ধে ক্ষোভে ফুঁসছে জনতা, প্রস্তুতি চলছে বড় বিক্ষোভ আয়োজনের।

দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশটিতে সাম্প্রতিক অস্বাভাবিক বৃষ্টিপাত ভয়াবহ দুর্ভোগ তৈরি করেছে। তবে এতে শুধু জনজীবন বিপর্যস্তই হয়নি, বরং বন্যা নিয়ন্ত্রণ প্রকল্পে দুর্নীতির অভিযোগকেও সামনে এনেছে।

প্রচণ্ড বৃষ্টিতে লাখ লাখ মানুষ যাত্রাপথে আটকে পড়েছে, রাস্তায় গাড়ি ভেসে গেছে, শহরগুলো নদীতে পরিণত হয়েছে। এছাড়া ইঁদুরবাহিত রোগ লেপ্টোস্পাইরোসিস ছড়িয়ে পড়ছে ভয়াবহভাবে।

আরও পড়ুন>>

৩৬ বছর বয়সী স্কুলশিক্ষিকা ক্রিসা টোলেন্তিনো বহুদিন ধরেই বন্যাকে জীবনের অংশ হিসেবে মেনে নিয়েছেন। তিনি প্রায় প্রতিদিন নৌকায় করে প্লাবিত রাস্তায় চলাচল করেন। এভাবেই তিনি রাজধানী ম্যানিলার কাছে নিচু এলাকার শহর আপালিতে পৌঁছান। একই নৌকায় তিনি কাজে যান, আবার ক্যানসারের চিকিৎসার জন্য ক্লিনিকেও যান। তার কথায়, বছরে মাত্র দুই মাস শুকনো রাস্তা দেখতে পান।

কিন্তু এখন তিনি ক্ষুব্ধ। ‘আমার মনে হচ্ছে আমাদের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করা হয়েছে। আমি কঠোর পরিশ্রম করি, অল্প খরচ করি, প্রতি মাসে বেতনের টাকা থেকে কর কেটে নেওয়া হয়। তারপর শুনতে হয়, সেই টাকা দুর্নীতিবাজ রাজনীতিবিদরা ভোগ করছেন’ বলেন টোলেন্তিনো।

এই অভিযোগ এখন গোটা ফিলিপাইনজুড়ে প্রতিধ্বনিত হচ্ছে। মানুষ প্রশ্ন তুলছে- কোটি কোটি টাকার সড়ক, সেতু, বাঁধ নির্মাণে খরচ হলেও বন্যা নিয়ন্ত্রণে সরকার ব্যর্থ কেন?

টিকটক, ফেসবুক ও এক্স-এর মতো সামাজিক মাধ্যমগুলোতে ক্ষোভ উগরে দিচ্ছে সাধারণ মানুষ। অভিযোগ উঠেছে- প্রভাবশালী রাজনীতিবিদ ও ঠিকাদাররা ভুয়া প্রকল্প বানিয়ে টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন।

ফিলিপাইনের প্রেসিডেন্ট ফার্দিনান্দ ‘বংবং’ মার্কোস জুনিয়র নিজেও বিষয়টি স্বীকার করেছেন। তিনি একটি বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ পরিদর্শনে গিয়ে দেখেন, প্রকল্পটি আদৌ নেই। পরে পরিকল্পনামন্ত্রী জানান, বরাদ্দ করা সরকারি অর্থের ৭০ শতাংশ দুর্নীতিতে লোপাট হয়েছে।

এতে হাউস স্পিকার পদত্যাগ করেছেন (যদিও তিনি অভিযোগ অস্বীকার করেছেন), সিনেটের প্রধানকেও অপসারণ করা হয়েছে। কারণ, একটি সরকারি টেন্ডার পাওয়া ঠিকাদার তার নির্বাচনী প্রচারে অর্থ দিয়েছিলেন, যা বেআইনি।

জনরোষ আরও বেড়েছে রাজনীতিবিদ ও ঠিকাদার পরিবারের সন্তানের বিলাসবহুল জীবন দেখে। তাদের ‘নেপো বেবিস’ বলে কটাক্ষ করা হচ্ছে। অনেকে সামাজিক মাধ্যমে নিজেদের বিদেশ ভ্রমণ, দামি পোশাক ও গাড়ির ছবি দিয়ে সমালোচনার মুখে পড়েছেন।

বিশাল বিক্ষোভের ডাক

এ অবস্থায় আগামী ২১ সেপ্টেম্বর দুর্নীতিবিরোধী একটি বিশাল বিক্ষোভের ডাক দেওয়া হয়েছে। দিনটি আবার ১৯৭২ সালে ফার্দিনান্দ মার্কোস সিনিয়রের সামরিক আইন জারির বার্ষিকী। তার ছেলেই এখন দেশের প্রেসিডেন্ট। ১৯৮৬ সালে দুর্নীতিবিরোধী আন্দোলনই মার্কোস সিনিয়রকে ক্ষমতা থেকে সরিয়ে দিয়েছিল।

মার্কোস জুনিয়র সাংবাদিকদের বলেছেন, আমি যদি প্রেসিডেন্ট না হতাম, তবে হয়তো আমিও তাদের সঙ্গে রাস্তায় নামতাম। তিনি দুর্নীতিবাজদের উদ্দেশে আরও বলেছেন, তাদের জানাও কতটা ক্ষতি করেছে তারা। চিৎকার করো, প্রতিবাদ করো, তবে শান্তিপূর্ণভাবে।

সূত্র: বিবিসি
কেএএ/

Read Entire Article