ক্ষমতার অপব্যবহার করে মিথ্যা তথ্য দিয়ে ১০ কাঠার প্লট নেওয়ার অভিযোগে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদকের) দায়ের করা মামলায় সাবেক প্রধান বিচারপতি এবিএম খায়রুল হককে গ্রেফতার দেখানো হয়েছে। একই সঙ্গে তার জামিনের আবেদন না মঞ্জুর করেছেন আদালত।
বুধবার (১০ সেপ্টেম্বর) ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতের ভারপ্রাপ্ত বিচারক ইব্রাহিম মিয়ার আদালত দুদকের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে এই আদেশ দেন।
এদিন সকাল সাড়ে ৯টার দিকে ঢাকার কেরানীগঞ্জ কারাগার থেকে খায়রুল হককে আদালতে হাজির করা হয়। এরপর তাকে মহানগর দায়রা আদালতের হাজতখানায় রাখা হয়। সকাল ১০টা ৩২ মিনিটে তাকে এজলাসে ওঠানো হয়। শুনানি শেষে আদালত তাকে এ মামলায় গ্রেফতার দেখানোর আবেদন মঞ্জুর করেন।
এদিকে আসামিপক্ষের আইনজীবী মোনাইম নবী শাহিন তার জামিন চেয়ে শুনানি করেন। দুদকের পক্ষের আইনজীবী হাফিজুর রহমান এই জামিনের বিরোধিতা করেন। উভয়পক্ষের শুনানি শেষে আদালত তার জামিনের আবেদন নামঞ্জুর করেন এবং তাকে এই মামরা গ্রেফতার দেখানোর আদেশ দেন।
গত ৬ আগস্ট দুদকের উপপরিচালক আব্দুল্লাহ আল মামুন বাদী হয়ে মামলাটি করেন। এতে খায়রুল হকসহ ৮ জনকে আসামি করা হয়। এ মামলার অপর আসামিরা হলেন- রাজউকের সাবেক চেয়ারম্যান প্রকৌশলী মো. নুরুল হুদা, সদস্য (অর্থ ও এস্টেট) আ.ই.ম গোলাম কিবরিয়া, সদস্য মো. আবু বক্কার সিকদার, সদস্য (পরিকল্পনা) মো. আনোয়ারুল ইসলাম সিকদার, সদস্য (এস্টেট) আখতার হোসেন ভুইয়া, সাবেক যুগ্ম সচিব ও সদস্য (উন্নয়ন) এম মাহবুবুল আলম এবং সদস্য (প্রশাসন ও ভূমি) নাজমুল হাই।
মামলার অভিযোগে বলা হয়, রাজধানীর ২ নম্বর শিক্ষা সম্প্রসারণ সড়কে (নায়েম রোড) পৌনে ১৮ কাঠা জমির ওপর ছয়তলা পৈতৃক বাড়ি রয়েছে সাবেক প্রধান বিচারপতি এবিএম খায়রুল হকের। কিন্তু তিনি দেশের প্রধান বিচারপতির দায়িত্বে থাকাকালে ক্ষমতার অপব্যবহার ও প্রতারণার আশ্রয় নিয়ে হলফনামা দাখিল করে রাজউকের ১০ কাঠা প্লট বাগিয়ে নেন। এর মাধ্যমে তিনি দ্য ঢাকা ইমপ্রুভমেন্ট ট্রাস্ট (অ্যালটমেন্ট অব ল্যান্ডস) রুলস, ১৯৬৯ এর বিধি ১৩ লঙ্ঘনের করেন।
গ্রেফতার দেখানোর আবেদনে আরও বলা হয়, খায়রুল হক প্লট বরাদ্দের শর্ত ভঙ্গ করে নিজের ক্ষমতার অপব্যবহার করেন। রাজউকের কর্মকর্তাদের প্রত্যক্ষ সহায়তায় সুদ মওকুফের কোনো বিধান না থাকা সত্ত্বেও প্লট বরাদ্দের জন্য সাময়িক বরাদ্দপত্রে শর্ত ভঙ্গ করেন। তিনি নির্ধারিত সময়ের মধ্যে সুদসহ কিস্তির টাকা জমা না দিয়ে অবসরের পর অর্থাৎ বরাদ্দের পাঁচ বছর পর সুদবিহীনভাবে টাকা জমা দেন। এক্ষেত্রে রাজউকের প্রচলিত নীতিমালা ভঙ্গ করে বিশেষ সুবিধা গ্রহণ করে সুদ বাবদ চার লাখ ৭৪ হাজার ২৪০ টাকা পরিশোধ না করে সরকারের ক্ষতিসাধন ও আত্মসাৎ করে শাস্তিযোগ্য অপরাধ করেছেন।
গত ২৪ জুলাই সকালে ধানমন্ডির বাসা থেকে খায়রুল হককে গ্রেফতার করে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ। জুলাই আন্দোলনের সময় ঢাকার যাত্রাবাড়ীতে যুবদল কর্মী আবদুল কাইয়ুম আহাদ হত্যা মামলায় ওইদিন রাতে তাকে কারাগারে পাঠানো হয়। পরে গত ৩০ জুলাই বিচারক হিসেবে দুর্নীতি ও বিদ্বেষমূলকভাবে বেআইনি রায় প্রদানের অভিযোগে শাহবাগ থানার মামলায় তার সাতদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন আদালত। এরপর থেকে তিনি কারাগারে রয়েছেন।
এমআইএন/ইএ/জিকেএস