‘প্যালেস্টাইন’ লেখা হাতব্যাগ নিয়ে হাজির হওয়ার একদিন পর এবার ‘বাংলাদেশ’ লেখা একটি ব্যাগ নিয়ে লোকসভায় হাজির হলেন ভারতের বিরোধী রাজনৈতিক দল কংগ্রেসের নেত্রী ও ওয়ান্নার আসনের সংসদ সদস্য প্রিয়াঙ্কা গান্ধী ভদ্রা। ব্যাগটিতে অবশ্য বাংলাদেশের সংখ্যালঘুদের নিয়ে একটি স্লোগান লেখা ছিল।
ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভির প্রতিবেদন থেকে জানা গেছে, প্রিয়াঙ্কা গান্ধীর নতুন এই ব্যাগে লেখা ছিল ‘বাংলাদেশি হিন্দু ও খ্রিষ্টানদের পাশে দাঁড়ান’। প্রিয়াঙ্কা গান্ধীর এই উদ্যোগে সমর্থন দেন বিরোধী দলের আরও কয়েকজন লোকসভা সদস্য। তারাও একই ধরনের ব্যাগ নিয়ে প্রতিবাদে শামিল হন।
এর আগে সোমবার (১৬ ডিসেম্বর) লোকসভার জিরো আওয়ারে দেওয়া ভাষণে প্রিয়াঙ্কা গান্ধী বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের বিরুদ্ধে কথিত অত্যাচারের বিষয়টি তুলে ধরতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানান। তিনি ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারকে ঢাকার সঙ্গে কূটনৈতিক আলোচনা চালিয়ে হিন্দু ও খ্রিষ্টানদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার আহ্বান জানান।
সেদিন লোকসভায় দেওয়া ভাষণে প্রিয়াঙ্কা গান্ধী বলেন, বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের-হিন্দু ও খ্রিষ্টান-ওপর যে অন্যায় হচ্ছে, তার বিরুদ্ধে সরকারের আওয়াজ তোলা উচিত। বাংলাদেশের সরকারের সঙ্গে আলোচনার ব্যবস্থা করা উচিত ও যারা কষ্ট পাচ্ছেন, তাদের পূর্ণ সহায়তা দেওয়া উচিত।
এদিকে, প্রিয়াঙ্কা গান্ধীর এই পদক্ষেপের কড়া সমালোচনা করেছে ক্ষমতাসীন দল বিজেপি। দলটির অভিযোগ, প্রিয়াঙ্কা ফিলিস্তিন ইস্যুতে সরব কিন্তু বাংলাদেশে হিন্দুদের ব্যাপারে নিশ্চুপ। বিজেপি একে ‘তোষণ ও স্থূল সাম্প্রদায়িক অবস্থান’ বলে অভিহিত করেছে। তাছাগা প্রিয়াঙ্কার বাসভবনে ভারতে নিযুক্ত ফিলিস্তিনি দূতাবাসের প্রতিনিধি আবেদল রাজেক আবু জাজারের পরিদর্শনের বিষয়টি কট্টর হিন্দুত্ববাদী দল বিজেপির এই অভিযোগকে আরও শক্ত করেছে।
এ বিষয়ে বিজেপি নেতা অনুরাগ ঠাকুর এনডিটিভিকে বলেন, ব্যাগটি কি কোনো বার্তা দিলো? তিনি বাংলাদেশি হিন্দুদের বিষয়টি কেন এড়িয়ে গেছেন? এটি একটি বড় প্রশ্ন। এটা ভারতীয় সংসদ। সংসদ সদস্যরা এখানে ১৪০ কোটি ভারতীয়দের উদ্বেগ নিয়ে কথা বলার জন্য নির্বাচিত হন। প্রথমে ছিলেন আসাদউদ্দিন ওয়াইসি, যিনি ‘জয় ফিলিস্তিন’ স্লোগান দিয়েছিলেন। এখন প্রিয়াঙ্কা গান্ধী, সংসদে ‘প্যালেস্টাইন’ লেখা ব্যাগ নিয়ে এসেছেন।
বিজেপির এই সমালোচনার বিষয়ে প্রশ্ন করলে প্রিয়াঙ্কা ক্ষুব্ধ হয়ে বলেন, আমার পোশাক কী হবে তা কে ঠিক করবে? এটা পুরুষতন্ত্রের সাধারণ উদাহরণ যে, নারীদের কী পরতে হবে, সেটাও তারা ঠিক করবেন। আমি এটা মানি না। আমি যা চাই, তাই পরবো।
পরে প্রিয়াঙ্কা বাংলাদেশে হিন্দুদের কথিত দুর্দশার চিত্র তুলে ধরে বিজেপিকে আক্রমণ করেন। তিনি বলেন, তার ব্যাগ নিয়ে তর্ক করার পরিবর্তে মোদী সরকারের উচিত বাংলাদেশে হিন্দু ও অন্যান্য সংখ্যালঘুর ওপর হওয়া অত্যাচার বন্ধ করতে পদক্ষেপ নেওয়া। তাদের (মোদী সরকার) বলুন, বাংলাদেশে হিন্দুদের ওপর হওয়া অত্যাচারের বিষয়ে কিছু করুক, বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে কথা বলুক।
এর আগে সোমবার লোকসভায় দেওয়া ভাষণে প্রিয়াঙ্কা বলেছিলেন, একাত্তরের মহান মুক্তিযুদ্ধে ইন্দিরা গান্ধীর সাহসিকতাপূর্ণ নেতৃত্বে বাংলাদেশ বিজয়ী হয়। আমি ইন্দিরা গান্ধীকে স্যালুট জানাতে চাই। তিনি অত্যন্ত জটিল পরিস্থিতিতেও সাহস দেখিয়েছিলেন ও এমন নেতৃত্ব দিয়েছিলেন, যা বাংলাদেশকে বিজয় এনে দেয়।
প্রিয়াঙ্কা গান্ধীর এমন মন্তব্যের আগে একই দিনে মুক্তিযুদ্ধে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে বাংলাদেশের বিজয়কে ‘ভারতীয় বিজয়’ বলে দাবি করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ব্যাপক সমালোচনা ও প্রতিবাদের মুখোমুখি হয়েছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী।
সূত্র: এনডিটিভি
এসএএইচ