এবার ‘সাংবাদিক কেনার’ কথা অস্বীকার করলেন মতিউরের প্রথম স্ত্রী

3 months ago 47

অবশেষে স্থানীয় সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেছেন আলোচিত ছাগলকাণ্ডে বিতর্কিত জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের কর্মকর্তা মতিউর রহমানের প্রথম স্ত্রী ও নরসিংদীর রায়পুরা উপজেলা চেয়ারম্যান লায়লা কানিজ লাকী।

তিনি দাবি করেছেন, ‘ঢাকার বড় বড় সাংবাদিকসহ নরসিংদী ও রায়পুরার সাংবাদিকদের কিনেই রায়পুরায় এসেছি, সব থেমে যাবে।’ বিভিন্ন মিডিয়াসহ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হওয়া তথ্যটি সঠিক নয়।

বৃহস্পতিবার (৪ জুলাই) সন্ধ্যায় উপজেলা পরিষদের নিজ কক্ষে রায়পুরার স্থানীয় সাংবাদিকদের ডেকে এই কথা বলেন লাকী। এ সময় তার দেওয়া বক্তব্যের ১ মিনিট ১৮ সেকেন্ডের একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়েছে। সেখানে লাকীর সমর্থিত কিছু নেতাকর্মীও উপস্থিত ছিলেন বলে জানা গেছে।

লায়লা কানিজ লাকী তার দেওয়া ভিডিও বক্তব্যে বলেন, ‘২৭ জুন আমি অফিসে এসেছিলাম এবং আমার অফিসের যেসব কাজকর্ম ছিল, সেসব কিছু শেষ করে যথারীতি কারো সঙ্গে কোনো বাক্য বিনিময় না করে পরিষদ থেকে সোজা আমার নিজ গাড়িতে করে অফিস ত্যাগ করি। কিন্তু সেদিন কে বা কারা সাংবাদিক ভাইদের একটা ভুল তথ্য দিয়েছেন, যে আমি ঢাকার সব বড় বড় সাংবাদিকদেরকে ম্যানেজ করেই এখানে এসেছি। এটা আসলে সম্পূর্ণ মিথ্যা কথা। এ রকম কথা বলিনি। তাই যারা মিডিয়াকর্মী ও সাংবাদিকদেরকে এ রকম ভুল তথ্য দিয়েছেন তাদের কাছ থেকে আপনারা সত্য তথ্য নিয়ে উপস্থাপন করবেন। আপনারা সমাজের দর্পণ। আমি আশা করবো আপনারা সত্যটা প্রকাশ করবেন। আমি সবাইকে আবার বলছি আমি এ কথাটা বলি নাই। এটা সম্পূর্ণ মিথ্যা কথা ছিল।’

এদিকে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক নেতা বলছেন, পদপদবি আর রাজনৈতিক ক্যারিয়ারসহ অস্তিত্ব বাঁচানোর জন্য উপজেলা চেয়ারম্যান লায়লা কানিজ লাকী এসব কথা বলছেন।

তারা বলছেন, কবরস্থান ও সাধারণ মানুষের জায়গা দখল করে নরসিংদীতে লাকী পার্ক ও বাড়ি গড়ে তুলেছেন। ভুক্তভোগীরা এরইমধ্যে গণমাধ্যমে বক্তব্য দিয়েছেন। মূলত সামনে রায়পুরা উপজেলা পরিষদ নির্বাচন। সেখানে পুনরায় রায়পুরা উপজেলা চেয়ারম্যানের পদ বাগিয়ে নেওয়াসহ তার স্থাবর অস্থাবর সম্পত্তি বাঁচাতে এই নাটক মঞ্চায়িত করেছেন। কারণ তিনি এর আগেও সাংবাদিক ও আইনজীবীদের নিয়ে বাজে মন্তব্য করেছেন। পরে আবার দুঃখ প্রকাশও করেছেন।

রাজস্ব কর্মকর্তা মতিউরের প্রথম স্ত্রী নরসিংদী রায়পুরা উপজেলা চেয়ারম্যান লায়লা কানিজ লাকী গুলশান, বনানী, ধানমন্ডি ও উত্তরাসহ রাজধানীর অভিজাত এলাকায় বাড়ি-ফ্ল্যাটসহ দেশে বিদেশে ছেলে ও মেয়ের নামে একাধিক বাড়ি-গাড়ি ও শত শত বিঘা জমি ক্রয় করেছেন। গাজীপুরে ১০০ বিঘা জমির ওপর ‘আপন ভূবন’ নামে একটি রিসোর্ট গড়ে তুলেছেন।

শিক্ষক থেকে রাজনীতিবিদ বনে যাওয়া লায়লা কানিজ লাকীর নির্বাচনী হলফনামা থেকে জানা গেছে, বাৎসরিক আয় বাড়ি-অ্যাপার্টমেন্ট-দোকান ও অন্যান্য ভাড়া থেকে ৯ লাখ ৯০ হাজার, কৃষিখাত থেকে ১৮ লাখ, শেয়ার-সঞ্চয়পত্র-ব্যাংক আমানতের লভ্যাংশ থেকে ৩ লাখ ৮২ হাজার ৫০০, উপজেলা চেয়ারম্যানের সম্মানী বাবদ ১ লাখ ৬৩ হাজার ৮৭৫, ব্যাংক সুদ থেকে ১ লাখ ১৮ হাজার ৯৩৯ টাকা। বিভিন্ন ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে তার জমা রয়েছে ৩ কোটি ৫৫ লাখ টাকা। তার কৃষিজমির পরিমাণ ১৫৪ শতাংশ, তার অকৃষিজমির মধ্যে রয়েছে রাজউকে পাঁচ কাঠা, সাভারে সাড়ে ৮ কাঠা, গাজীপুরে ৫ কাঠা, গাজীপুরের পূবাইলে ৬ দশমিক ৬০ শতাংশ ও ২ দশমিক ৯০ শতাংশ, গাজীপুরের খিলগাঁওয়ে ৫ শতাংশ ও ৩৪ দশমিক ৫৫ শতাংশ, গাজীপুরের বাহাদুরপুরে ২৭ শতাংশ, গাজীপুরের মেঘদুবীতে ৬ দশমিক ৬০ শতাংশ, গাজীপুরের ধোপাপাড়ায় ১৭ শতাংশ, রায়পুরায় ৩৫ শতাংশ, ৩৫ শতাংশ ও ৩৩ শতাংশ, রায়পুরার মরজালে ১৩৩ শতাংশ, সোয়া ৫ শতাংশ, ৮ দশমিক৭৫ শতাংশ, ২৬ দশমিক ২৫ শতাংশ ও ৪৫ শতাংশ, শিবপুরে ২৭ শতাংশ ও ১৬ দশমিক ১৮ শতাংশ, শিবপুরের যোশরে সাড়ে ৪৪ শতাংশ, নাটোরের সিংড়ায় ১ একর ৬৬ শতাংশ।

সঞ্জিত সাহা/এফএ/এএসএম

Read Entire Article