সরকারি তিতুমীর কলেজকে স্বতন্ত্র বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তরের ঘোষণার দাবিতে টানা চারদিন আন্দোলন করছেন শিক্ষার্থীরা। গত ২৮ জানুয়ারি বিকেলে আমরণ অনশনে বসার মধ্যদিয়ে এ দফায় কর্মসূচি শুরু করেন তারা। পরদিন দুপুরেই অনশনের সঙ্গে সড়ক অবরোধ ও বিক্ষোভ মিছিল শুরু করেন। তারপর থেকেই রাজধানীর গুলশান থেকে মহাখালী ও মহাখালী থেকে গুলশান অভিমুখের সড়ক বন্ধ।
এবার শিক্ষার্থীরা ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন অবরোধের ঘোষণা দিয়েছেন। শনিবার (১ ফেব্রুয়ারি) বিকেল থেকে তাদের অবরোধ কর্মসূচি শুরু হয়েছে। সন্ধ্যায় গুলশান-১ গোলচত্বর অবরোধও করেন তারা। তবে রোববার (২ ফেব্রুয়ারি) সপ্তাহের প্রথম কর্মদিবসে তারা কঠোরভাবে অবরোধ কর্মসূচি করার ঘোষণা দিয়েছেন।
আজ রোববার বেলা ১১টা থেকে তারা মহাখালী রেলক্রসিং, আমতলী মোড়, গুলশান-১ গোলচত্বরসহ আশপাশের এলাকায় অবরোধ করার কথা জানিয়েছেন। ফলে আজ নগরবাসীকে সড়কে চলাচলের ক্ষেত্রে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হতে পারে।
আরও পড়ুন
- আলটিমেটাম দিয়ে আন্দোলনের যৌক্তিকতা নেই: শিক্ষা মন্ত্রণালয়
- ঢাকা উত্তর সিটিতে অবরোধের ঘোষণা দিলেন তিতুমীর শিক্ষার্থীরা
- সড়ক বন্ধ করে তিতুমীরের শিক্ষার্থীদের আন্দোলন
আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা জানান, শনিবার (১ ফেব্রুয়ারি) বিকেল ৪টা পর্যন্ত তারা শিক্ষা মন্ত্রণালয়কে আলটিমেটাম দিয়েছিলেন। মন্ত্রণালয় সেই আলটিমেটামের মধ্যে কোনো ঘোষণা দেয়নি। উল্টো বিবৃতি দিয়ে ‘সময় বেঁধে দিয়ে আন্দোলনের যৌক্তিকতা নেই’ বলে উল্লেখ করেছে। এতে শিক্ষার্থীরা ক্ষুব্ধ। তারা রোববার ‘বারাসাত ব্যারিকেড টু নর্থ সিটি’ কর্মসূচি করবেন।
বারাসাত ব্যারিকেড টু নর্থ সিটি কর্মসূচিতে তারা আসলে কী করতে চান—এমন প্রশ্নে আন্দোলনে নেতৃত্ব দেওয়া জাবেদ নামে একজন শিক্ষার্থী জাগো নিউজকে জানান, তারা ঢাকা দক্ষিণের সঙ্গে উত্তরের যোগাযোগের যেসব পথ সব জায়গায় অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করবেন। তারা মানুষের দুর্ভোগ চান না। তবে শিক্ষা মন্ত্রণালয় তাদের দাবি-দাওয়া মেনে না নিয়ে উল্টো অবজ্ঞা করছে, তাতে ক্ষুব্ধ হয়ে তারা কঠোর কর্মসূচির দিকে হাঁটতে বাধ্য হয়েছেন।
কর্মদিবসে সড়ক অবরোধে চরম দুর্ভোগের শঙ্কা
এদিকে, সপ্তাহের প্রথম কর্মদিবস রোববার সকাল থেকে মহাখালী ও গুলশান এলাকার সড়ক অবরোধ করলে কর্মজীবী মানুষ চরম দুর্ভোগে পড়বেন। পাশাপাশি মহাখালীতে বেশ কয়েকটি বড় হাপসাতাল রয়েছে। সেখানে যাতায়াত করা রোগী ও স্বজনদেরও হয়রানি বাড়বে। শিক্ষার্থীদের এমন কর্মসূচিতে ক্ষুব্ধ নগরবাসীও।
মিরপুরে ভাড়া বাসায় থাকেন আরাফাত হোসেন। তিনি মহাখালীতে একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন। গত বৃহস্পতিবার মহাখালী থেকে আমতলী মোড়ের সড়কে শিক্ষার্থীরা বাঁশ ফেলে অবরোধ করায় চরম দুর্ভোগে পড়েন তিনি। রোববার অফিসে যেতে আবারও দুর্ভোগ পোহাতে হবে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেন আরাফাত।
তিনি জাগো নিউজকে বলেন, ‘এভাবে দিনের পর দিন রাস্তাঘাট দখল করে আন্দোলন, এটা কোন দেশে হয় বলুন তো? যখন যার ইচ্ছা হচ্ছে রাস্তা দখল করে বিক্ষোভ করছেন। তারা তাদের দাবি আদায়ে ক্যাম্পাসের ভেতরে আন্দোলন করুক, তা না করে রাস্তায় চলে আসছে। পুলিশ তাদের বাধাও দিচ্ছে। এটা কেমন রাষ্ট্র, কেমন আইনশৃঙ্খলা বাহিনী?’
শ্যামলী থেকে গুলশান-১ এ অফিস করতে আসেন রোজিনা আক্তার। তিনি এক ফেসবুক পোস্টে লিখেছেন, ‘মানসিকভাবে অসুস্থ পোলাপান। ওদের জন্য মানুষ কতটা ভোগান্তি পোহাচ্ছে, তা কি ওরা ভাবে না? ওদের অত্যাচারে তো এখন সবাই ফেসবুকে ওদের গালি দিচ্ছে। তবুও চোখে পড়ে না। সরকারের উচিত এদের রাস্তা থেকে যে কোনোভাবে সরিয়ে দেওয়া।’
রাতেও চলছে অনশন-বিক্ষোভ-অবরোধ
দিনভর বিক্ষোভ মিছিল, সমাবেশ, সড়ক অবরোধ, অনশন করছেন তিতুমীর কলেজের শিক্ষার্থীরা। রাতেও তারা কলেজের প্রধান ফটকের সামনে অবস্থান করছেন। গত কয়েকদিনের মতো শনিবারও রাতে প্রধান ফটকের সামনে মহাখালী থেকে গুলশান সড়কে শিক্ষার্থীরা অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করছেন। আর গুলশান থেকে মহাখালী যাওয়ার রাস্তায় বাঁশ ফেলে ব্যারিকেড দিয়েছেন তারা।
আরও পড়ুন
- তিতুমীর কলেজকে বিশ্ববিদ্যালয় ঘোষণা না দেওয়া পর্যন্ত অনশন চলবে
- সাত কলেজ নিয়ে ‘জুলাই ৩৬ বিশ্ববিদ্যালয়’ প্রতিষ্ঠার প্রস্তাব
ছাত্রদের পাশাপাশি রাতের অবরোধে অংশ নিয়েছেন ছাত্রীরাও। তাছাড়া অনশনরত শিক্ষার্থীরাও তাদের পাশে অবস্থান করছেন। তাদের অনেকের শরীরে স্যালাইন চলছে। কয়েকজন অসুস্থ হয়ে শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে, কেউ কেউ আবার ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে গিয়েছেন। আবার অনেকে চিকিৎসা নিয়ে ফের অনশনে যোগ দিচ্ছেন।
অনশনরত শিক্ষার্থী বেলাল জানান, তারা টানা প্রায় ৭৭ ঘণ্টা অনশন করছেন। এতে তাদের অন্তত ১২-১৩ জন শিক্ষার্থী অনশনে গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। তারপরও সরকার তাদের দাবি মেনে নিচ্ছে না। এতে তিতুমীর কলেজের শিক্ষার্থীরা ক্ষুব্ধ। দ্রুত দাবি মেনে না নিলে কঠোর কর্মসূচিতে যাবেন তারা। তখন অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতির সৃষ্টি হলে এর দায়ভার সরকারকে নিতে হবে।
সাত নয়, এক দফার আন্দোলনে শিক্ষার্থীরা
তিতুমীর কলেজকে বিশ্ববিদ্যালয় করাসহ সাত দফা দাবি থেকে সরে এসে এক দফা দাবিতে অনির্দিষ্টকালের জন্য আমরণ অনশন ও বারাসাত ব্যারিকেড টু নর্থ সিটি (ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন অবরোধ) কর্মসূচি চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন কলেজটির শিক্ষার্থীরা।
শনিবার রাতে আন্দোলনে নেতৃত্ব দেওয়া শিক্ষার্থীদের একজন মাহমুদুল হাসান মুক্তার বলেন, আজ থেকে আমরা আর সাত দফা চাই না। এখন থেকে তিতুমীর কলেজকে বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বীকৃতির এক দফা দাবিতে অনশন ও বারাসাত ব্যারিকেড টু নর্থ সিটি কর্মসূচি চালিয়ে যাওয়া হবে।
তিনি বলেন, শিক্ষা মন্ত্রণালয় যে বিবৃতি দিয়েছে, আমরা সেটি প্রত্যাখ্যান করছি। তিতুমীর বিশ্ববিদ্যালয়ের দাবিতে আমাদের সাত দফা দাবি থেকে এক দফা দাবি ঘোষণা করছি। সেটা হলো- মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বশীল কোনো কর্মকর্তা কলেজে এসে আমাদের বলবেন, আপনাদের দাবি মেনে নেওয়া হচ্ছে। আজ থেকে তিতুমীর কলেজকে বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে ঘোষণা করা হলো। তাহলেই আমরা রাজপথ ছেড়ে আমাদের পড়ার টেবিলে ফিরে যাবো।
এএএইচ/এমকেআর