কিংবদন্তিতুল্য সংগীতশিল্পী ফেরদৌসী রহমানের আজ (২৮ জুন) ৮৫ তম জন্মদিন। জন্মদিনের শুভেচ্ছা বিনিময়ের পর তার কাছে জানতে চাওয়া হয়- এবারের জন্মদিনটি কেমন করে কাটাচ্ছেন? শোকাতুর কণ্ঠে তিনি জানালেন, এবারের জন্মদিনে তার মনে কোনো আনন্দ নেই। সম্প্রতি তার ভাই সংগীতশিল্পী মুস্তাফা জামান আব্বাসীর প্রয়াণের শোকে এখনো তিনি আচ্ছন্ন হয়ে আছেন।
এবারের জন্মদিন নিয়ে ফেরদৌসি রহমান জাগো নিউজকে আরও বলেন, ‘আমার জীবনে যতগুলো জন্মদিন এসেছে, তার মধ্যে এবারের জন্মদিনে আমার মনটা ভীণষ খারাপ লাগছে। কারণ খুব অল্প সময়ের মধ্যে পরপর আমি আমার সবচেয়ে কাছের তিনজন মানুষকে হারিয়েছি। আমার স্বামী রেজাউর রহমান চলে গেলেন গত বছর আগস্ট মাসে। এরপর হারালাম আমার ভাবীকে।’
ভাইয়ের মৃত্যুর প্রসঙ্গে টেনে এ শিল্পী বলেন, ‘সবশেষ গত মাসে আমার ভাই সংগীতশিল্পী মুস্তাফা জামান আব্বাসী পরপারে চলে গেছেন। এত এত প্রিয়জন হারানোর শোক নিয়ে আমি বেঁচে আছি। এর মাঝে জন্মদিন পালনের কথা ভাবতে পারছি না। তবু আমাকে যারা ভালোবাসেন তারা এ দিনটি নিয়ে উচ্ছাস প্রকাশ করছেন। কিন্তু জন্মদিন উপলক্ষে এবার কোনো আয়োজন কিংবা আনুষ্ঠানিকতা নেই। তবে আমার জন্মদিন উপলক্ষ্যে চ্যানেল আইয়ের একটি অনুষ্ঠানে গিয়েছি। যদিও সেখানে যেতে আমার মন চাইছিল না। অনেক অনুরোধ করেছিলেন তারা। ফলে না গিয়ে আর পারিনি।’
আরও পড়ুন:
- ‘লাগাইয়া পিরিতের ডুরি’ গানের স্রষ্টা খোয়াজ মিয়া আর নেই
- আল্লাহ তাকে স্বপ্নের ঘোড়া উপহার দেবেন: মনু মিয়ার মৃত্যুতে খায়রুল
শারীরিক অবস্থার কথা জানতে চাইলে ফেরদৌসী রহমান বলেন, ‘অনেক দিন ধরে খুব একটা ভালো নেই। ভাই মারা যাওয়ার পর মন ও শরীর বেশ খারাপ। সবাই আমার জন্য দোয়া করবেন।’
ফেরদৌসী রহমানের হাত ধরেই বাংলাদেশ টেলিভিশনে যাত্রা শুরু হয় গান শেখার অনুষ্ঠান ‘এসো গান শিখি’। তিনি সবার কাছে খালামণি হিসেবেও পরিচিত। প্রায় পাঁচ দশক ধরে তার সংগীত জগতে পদচারণা চলছে। পল্লীগীতি, রবীন্দ্রসংগীত, নজরুলসংগীত, আধুনিকসহ সব ধরনের গানই তিনি করেছেন।
ফেরদৌসী রহমানের পিতা ছিলেন পল্লীগীতি সম্রাট আব্বাস উদ্দিন। ছোটবেলায় গানে হাতে খড়ি হয় তার পিতার কাছে। পরবর্তীতে ওস্তাদ মোহাম্মদ হোসেন খসরু, ইউসুফ খান কোরেইশী, কাদের জামেরী, গুল মোহাম্মদ খান প্রমুখ সংগীতজ্ঞের কাছে তালিম নিয়েছেন। খুব অল্প বয়স থেকে তিনি মঞ্চে পারফরম্যান্স শুরু করেন। মাত্র ৮ বছর বয়সে রেডিওতে খেলাঘর নামের অনুষ্ঠানে অংশ নেন।
ফেরদৌসী রহমানের উল্লেখযোগ্য কিছু গানের মধ্যে- ‘কথা বলো না বলো ওগো বন্ধু’, ‘আমি কার জন্য পথ চেয়ে রব, আমি রূপনগরের রাজকন্যা’, ‘প্রাণ সখিরে ঐ শোন কদম্বতলে’, ‘যে জন প্রেমের ভাব জানে না’, ‘আমি সাগরেরও নীল নয়নে মেখেছি’, ‘ও মোর সোনার বন্ধুরে’, ‘পদ্মার ঢেউ রে’, ‘যার ছায়া পড়েছে মনের আয়নাতে’, ‘ও কী ও বন্ধু কাজল ভ্রমরা’, ‘গান হয়ে এলে’, ‘যেন একমুঠো রজনীগন্ধা’, ‘কি করে তোমাকে ভুলবো’, ‘ওকি গাড়িয়াল ভাই’ ইত্যাদি।
এমএমএফ/এমএস