এভারকেয়ারে খালেদা জিয়া, দোয়া-উদ্বেগে রাজনৈতিক অঙ্গন
রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালের সামনে অদ্ভুত এক নীরবতা। হাসপাতালের উজ্জ্বল আলোয় মাঝেমধ্যে ছায়ার মতো নড়ছে বিএনপি নেতাকর্মীদের উদ্বিগ্ন মুখ। মধ্যরাত পেরিয়ে গেলেও হাসপাতালের ফটকে কমেনি মানুষের অপেক্ষা। সেখানে বিএনপি নেতাকর্মীদের পাশাপাশি উদ্বেগ উৎকণ্ঠা নিয়ে ছুটে এসেছেন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উপদেষ্টারা। উদ্দেশ্য একটাই- সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার খোঁজ নেওয়া। অবস্থার উন্নতি নেই, অবনতিও দেখা যায়নি দুই দিন ধরে সিসিইউতে আছেন প্রায় ৮০ বছর বয়সী খালেদা জিয়া। ফুসফুস ও হৃদ্যন্ত্রে সংক্রমণ; দীর্ঘদিনের জটিল রোগগুলো মিলিয়ে পরিস্থিতি সংকটাপন্নই রয়ে গেছে। মেডিকেল বোর্ড প্রতিদিন বৈঠক করছে; চিকিৎসা-পদ্ধতিতে সামান্য পরিবর্তন আনা হচ্ছে। বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, ম্যাডামের অবস্থায় উন্নতি নেই। চিকিৎসকরা আন্তরিকভাবে চেষ্টা করছেন। ইনফেকশনের ঝুঁকির কারণে তিনি এবং মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সিসিইউর ভেতরে না গিয়েই বাইরে থেকে দেখে ফিরে আসেন। চিকিৎসার সার্বিক সমন্বয়ে হাসপাতালেই সারাক্ষণ আছেন ব্যক্তিগত চিকিৎসক ডা. জাহিদ হোসেন। গুলশানের বাসা থে
রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালের সামনে অদ্ভুত এক নীরবতা। হাসপাতালের উজ্জ্বল আলোয় মাঝেমধ্যে ছায়ার মতো নড়ছে বিএনপি নেতাকর্মীদের উদ্বিগ্ন মুখ। মধ্যরাত পেরিয়ে গেলেও হাসপাতালের ফটকে কমেনি মানুষের অপেক্ষা। সেখানে বিএনপি নেতাকর্মীদের পাশাপাশি উদ্বেগ উৎকণ্ঠা নিয়ে ছুটে এসেছেন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উপদেষ্টারা। উদ্দেশ্য একটাই- সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার খোঁজ নেওয়া।
অবস্থার উন্নতি নেই, অবনতিও দেখা যায়নি
দুই দিন ধরে সিসিইউতে আছেন প্রায় ৮০ বছর বয়সী খালেদা জিয়া। ফুসফুস ও হৃদ্যন্ত্রে সংক্রমণ; দীর্ঘদিনের জটিল রোগগুলো মিলিয়ে পরিস্থিতি সংকটাপন্নই রয়ে গেছে। মেডিকেল বোর্ড প্রতিদিন বৈঠক করছে; চিকিৎসা-পদ্ধতিতে সামান্য পরিবর্তন আনা হচ্ছে।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, ম্যাডামের অবস্থায় উন্নতি নেই। চিকিৎসকরা আন্তরিকভাবে চেষ্টা করছেন।
ইনফেকশনের ঝুঁকির কারণে তিনি এবং মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সিসিইউর ভেতরে না গিয়েই বাইরে থেকে দেখে ফিরে আসেন।
চিকিৎসার সার্বিক সমন্বয়ে হাসপাতালেই সারাক্ষণ আছেন ব্যক্তিগত চিকিৎসক ডা. জাহিদ হোসেন। গুলশানের বাসা থেকে প্রতিদিন খাবার পাঠানো হচ্ছে। কাছে রয়েছেন ছোটপুত্রবধূ শামিলা রহমান, গৃহপরিচারিকা ফাতেমা এবং স্টাফ রূপা আক্তার।
মধ্যরাতে হাসপাতালে নেতাদের আনাগোনা
শুক্রবার (২৮ নভেম্বর) বিকেল থেকেই হাসপাতালে অবস্থান করছিলেন বিএনপি মহাসচিব ফখরুল। পরে রাতে যোগ দেন স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আবদুল মঈন খান ও মির্জা আব্বাস।
রাত ১২টার পর হাসপাতালে ফটকে দাঁড়িয়ে মঈন খান সাংবাদিকদের বলেন, মেডিক্যাল বোর্ড তার সর্বশেষ অবস্থা পর্যালোচনা করেছে। যা যা দরকার, তারা করছেন।
খালেদা জিয়ার অবস্থা নিয়ে তিনি বলেন, তাকে নিবিড় পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে।
মির্জা আব্বাস বলেন, দূরত্ব বজায় রেখেই খালেদা জিয়ার সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করা হয়েছে। তিনি আমাদের চিনেছেন, সালামের রিপ্লাইও দিয়েছেন।
উদ্বেগে মাঠ কর্মীরা, হাসপাতালে ভিড় না করার অনুরোধ
শুক্রবার সন্ধ্যা থেকে ভোররাত পর্যন্ত হাসপাতালে ভিড় করেছেন বিএনপির বিভিন্ন অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা। দূর থেকে দাঁড়িয়ে শুধু খবর জানার চেষ্টা- হাসপাতালের ভেতরে ঢোকার অনুমতি নেই।
এ অবস্থায় বিএনপি মিডিয়া সেলের সদস্য শায়রুল কবির খান অনুরোধ জানিয়েছেন, চিকিৎসায় যেন কোনো বিঘ্ন না ঘটে- তাই হাসপাতালের ভেতরে ভিড় না করার আহ্বান জানানো হয়েছে।
‘বিভিন্ন রিউমার… মন মানছিল না’
বিএনপি নেতা হুম্মাম কাদের চৌধুরী গভীর রাতে হাসপাতালে এসে সাংবাদিকদের বলেন, ম্যাডামের অবস্থা আলহামদুলিল্লাহ ভালো। বিভিন্ন রিউমার শুনে খুব টেনশনে ছিলাম। তাই চলে এসেছি।
দেশবাসীর উদ্দেশে তার অনুরোধ- খালেদা জিয়ার জন্য দোয়া করতে।
অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টাদের উপস্থিতি
রাত ১১টা ৪০ মিনিটে হাসপাতালে পৌঁছান অন্তর্বর্তী সরকারের আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল। এরপরই আসেন উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া। তারা চিকিৎসকদের সঙ্গে কথা বলে সর্বশেষ আপডেট নেন।
প্রধান উপদেষ্টার মানবিক বার্তা ও বিএনপির কৃতজ্ঞতা
এদিন সকালে প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূস খালেদা জিয়ার দ্রুত আরোগ্য কামনা করে বিবৃতি দেন। তিনি বলেন, জাতির গণতান্ত্রিক উত্তরণের এই সময়ে বেগম খালেদা জিয়া মানুষের অনুপ্রেরণার উৎস।
চিকিৎসায় প্রয়োজনীয় সব সহযোগিতার নির্দেশও দিয়েছেন তিনি।
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ওই বার্তাকে ‘সৌজন্যমূলক, মানবিক ও রাষ্ট্রনৈতিক’ আখ্যা দিয়ে কৃতজ্ঞতা জানান।
মীর স্নিগ্ধের প্রত্যাশা
রাতে হাসপাতালে গিয়ে মীর স্নিগ্ধ বলেন, দেশ সংকটের সময় পার করছে। আমরা সবাই চাই- বেগম জিয়া দ্রুত সুস্থ হয়ে ফিরে আসুন।
অবস্থার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, যে তথ্য আপনাদের কাছে আছে, আমার কাছেও তাই।
দেশজুড়ে দোয়া
খালেদা জিয়ার আশু সুস্থতা কামনায় শুক্রবার বাদ জুমা সারাদেশে দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়। বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয় থেকে ইউনিয়ন পর্যায় পর্যন্ত একই আহ্বান- দোয়া করুন, সুস্থ হয়ে যেন ফিরে আসেন ‘গণতন্ত্রের মা’।
শেষ রাতের এভারকেয়ার- প্রার্থনায় ভর করা অপেক্ষা
গভীর রাতে হাসপাতালের সামনে এসে দাঁড়ায় আরও কয়েকজন। বেশিরভাগই চুপ- কেউ ফিসফিস করে কথা বলছেন, কেউ কেবল আকাশের দিকে তাকিয়ে দীর্ঘশ্বাস ফেলছেন। যেন পুরো রাতটাই দাঁড়িয়ে আছে এক অনিশ্চিত প্রতীক্ষায়।
বেগম খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা স্থিতিশীল-সংকটাপন্ন- এ অবস্থায় চিকিৎসকদের নিরলস প্রচেষ্টা আর দেশবাসীর দোয়া, এই দুই-ই এখন সবচেয়ে বড় ভরসা।
কেএইচ/এনএইচআর
What's Your Reaction?