এলাকার ১০ হাজার ফোন নম্বর মুখস্থ দৃষ্টি প্রতিবন্ধী মিজানের

16 hours ago 6

ব্রহ্মপুত্র নদ দ্বারা বিচ্ছিন্ন কুড়িগ্রামের রৌমারী উপজেলার বন্দবেড় ইউনিয়নের টাঙ্গারিপাড়া গ্রামের দৃষ্টি প্রতিবন্ধী যুবক মিজানুর রহমান মিজান (৩০)। জন্মান্ধ হলেও এক বিস্ময়কর উদাহরণ সৃষ্টি করেছেন তিনি। এখন এলাকার অন্যতম মোবাইল ব্যাংকিং ব্যবসায়ী এই মিজান। নাম বললে কিংবা ফোন নম্বরের শেষ দুটি সংখ্যা শুনেই তিনি পুরো নম্বর বলে দিতে পারেন। অনায়াসে ফ্লেক্সিলোড বা মোবাইল ব্যাংকিং লেনদেন সম্পন্ন করেন।

জানা গেছে, দরিদ্র দিনমজুর মনতাজ আলী ও মমিনা বেগম দম্পতির ছেলে মিজান দুই ভাইবোনের মধ্যে ছোট। কয়েক বছর আগে বড় বোন মরিয়মের বিয়ে হয়েছে। সংসারের হাল ধরতে অন্ধত্বকে জয় করে ২০১৭ সালে তিনি শুরু করেন মোবাইল রিচার্জ ও বিদ্যুৎ বিল পরিশোধের সেবা। অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা করা মিজান দৃষ্টি প্রতিবন্ধী হয়েও অদ্ভুত স্মৃতিশক্তির কারণে এরই মধ্যে প্রায় নয় হাজারের বেশি মোবাইল নম্বর মুখস্থ করেছেন।

মিজানের দোকান ওই ইউনিয়নের টাপুরচর বাজারে। তিনি একটি ছোট দোকানঘর ভাড়া নিয়ে প্রতিদিন সকাল থেকে রাত পর্যন্ত ব্যবসা পরিচালনা করে আসছেন। স্থানীয় ব্যবসায়ী ও সাধারণ মানুষ মিজানের কাছেই ফ্লেক্সিলোড ও টাকা লেনদেন করতে আসেন। কখনো ভুল লেনদেন বা অর্থ হারানোর ঘটনা ঘটেনি। এভাবেই দিনে গড়ে ২০০-৩০০ টাকা আয় হয় তার। প্রতিবন্ধী ভাতা থাকলেও অতিকষ্টে সংসার চালান তিনি।

এলাকার ১০ হাজার ফোন নম্বর মুখস্থ দৃষ্টি প্রতিবন্ধী মিজানের

স্থানীয় দোকানি মোকছেদ আলী, আকবর হোসেনসহ কয়েকজন জানান, মিজানের দোকানে একবার লেনদেন করলে তিনি নম্বর মুখস্থ করে ফেলেন। পরবর্তীতে মানুষের কণ্ঠ শুনেই তাকে চিনে ফেলেন এবং ওই ব্যক্তির ফোন নম্বর বলতে পারেন। অন্ধ হলেও তিনি টাকা চেনেন, নোট যদি ছেঁড়া বা জাল থাকে সেটা সঙ্গে সঙ্গে বুঝে ফেলেন।

আরও পড়ুন
গাভির দুধ বিক্রি করে সংসার চলছে মাগুরার সেই আছিয়ার পরিবারের
মুন্সি এনায়েতের হাত ধরে ভাগ্যবদল জন্মান্ধ গফুর মল্লিকের
শেষ বয়সে খুপরিতে দিন কাটছে প্রবাসীর, পাশে নেই স্ত্রীসহ স্বজনরা

মিজানুর রহমান বলেন, ২০১৭ সাল থেকে ফ্লেক্সিলোড, বিদ্যুৎ বিল পরিশোধসহ মোবাইল ব্যাংকিং করে আসছি। এখন পর্যন্ত কোনো ভুল হয়নি। একটা নম্বর একবার শুনলেই মুখস্থ করে ফেলি। তবে একটা দোকানঘর পেলে পুঁজিটা একটু বাড়াতে পারতাম, সংসারে কিছুটা সচ্ছলতা আসত।

টাপুরচর হাটের ইজারাদার মোস্তফা মোর্শেদ বলেন, আমরা চেষ্টা করছি হাটের খাস জমিতে মিজানকে একটা দোকানঘর দেওয়ার জন্য। প্রশাসনের সহযোগিতা পেলে দ্রুতই বন্দোবস্ত করা হবে।

রৌমারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) উজ্জ্বল কুমার হালদার জানান, দৃষ্টি প্রতিবন্ধী মিজানের মতো কর্মঠ মানুষ আমাদের সমাজের সম্পদ। তাকে স্বাবলম্বী করতে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে প্রয়োজনীয় সহায়তা দেওয়া হবে।

এফএ/এএসএম

Read Entire Article