রাজারবাগ পুলিশ লাইনসের উপ-পরিদর্শক মো. ময়নাল হোসেন ভূঁইয়ার ছেলে কলেজ শিক্ষার্থী ইমাম হাসান তাইমকে গুলি করে হত্যার ঘটনায় করা মামলায় গ্রেফতার সহকারী পুলিশ কমিশনার (এসি) তানজিল আহমেদকে আদালতে হাজির করার নির্দেশ দিয়েছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে রাজধানীর যাত্রাবাড়ীতে গুলিবিদ্ধ বন্ধুকে টেনে নিয়ে যাওয়ার সময় ইমাম হাসান তাইমকে গুলি করে হত্যা করা হয়।
একই সঙ্গে গাজীপুরের কোনাবাড়ী থানার পাশে শরীরে ঠেকিয়ে গুলি করে কলেজ ছাত্র মো. হৃদয়কে (২০) হত্যা মামলায় পুলিশের কনস্টেবল মো. আকরাম হোসেনকেও হাজির করার নির্দেশ দিয়েছেন ট্রাইব্যুনাল। আগামী ২০ জানুয়ারি তাদের ট্রাইব্যুনালে হাজির করার নির্দেশ দেন আদালত। ওই দিন এ বিষয়ে পরবর্তী আদেশ দেওয়া হবে।
প্রসিকিউশনের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে এ সংক্রান্ত বিষয়ের শুনানিতে সোমবার (১৩ জানুয়ারি) ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান বিচারপতি মো. গোলাম মর্তুজা মজুমদারের নেতৃত্বে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল এই আদেশ দেন। ট্রাইব্যুনালের অন্য সদস্যরা হলেন- বিচারপতি শফিউল আলম মাহমুদ ও বিচারক মো. মহিতুল হক এনাম চৌধুরী।
আদালতে আজ রাষ্ট্রপক্ষের শুনানিতে ছিলেন প্রসিকিউটর বিএম সুলতান মাহমুদ। সঙ্গে ছিলেন প্রসিকিউটর তানভীর যোহা।
এর আগে উপ-পরিদর্শক মো. ময়নাল হোসেন ভূঁইয়ার ছেলে নারায়ণগঞ্জ সরকারি আদমজীনগর এম. ডব্লিউ কলেজের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী ইমাম হাসান তাইমকে হত্যার অভিযোগে ওয়ারী বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার (ডিসি) মোহাম্মদ ইকবাল হোসেনসহ ৫ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়।
আরও পড়ুন
- তাইম হত্যা: এসি তানজিলকে আজ ট্রাইব্যুনালে তোলা হচ্ছে
- গুলিতে পুলিশ কর্মকর্তার ছেলের মৃত্যু: ডিসিসহ ৫ জনের নামে মামলা
গত ২০ আগস্ট ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট শাকিল আহাম্মদের আদালতে নিহত শিক্ষার্থীর মা মোসা. পারভীন আক্তার এই মামলার আবেদন করেন। আদালত বাদীর জবানবন্দি গ্রহণ করে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনকে (পিবিআই) তদন্তের নির্দেশ দেন।
মামলার অন্য আসামিরা হলেন- এডিসি শাকিল মোহাম্মদ শামীম, এসি তানজিল আহমেদ, যাত্রাবাড়ী থানার ওসি (তদন্ত) জাকির হোসেন ও এসআই শাহাদাৎ আলী।
বাদীর অভিযোগে বলা হয়, গত ২০ জুলাই বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন চলাকালে সরকার কারফিউ জারি করে। ওইদিন দুপুর ১২টা থেকে ২টা পর্যন্ত কারফিউ শিথিল ছিল। ওই সময় তাইম তার দুই বন্ধুর সঙ্গে যাত্রাবাড়ীর কাজলা এলাকায় চা খেতে যান। তখন কিছু আন্দোলনকারী বিক্ষোভ করছিলেন। সে সময় ইকবাল হোসেন, শামীম ও তানজিল আহমেদের নির্দেশে জাকির হোসেন ও তার সঙ্গীরা বিক্ষোভকারীদের ওপর টিয়ারশেল, সাউন্ড গ্রেনেড, রাবার বুলেট ও তাজা গুলি চালান।
প্রাণভয়ে ছাত্র-ছাত্রীরা এলোপাতাড়ি ছোটাছুটি করতে থাকেন। তাইম ও তার দুই বন্ধু লিটন চা দোকানের ভেতর ঢুকে শাটার টেনে দেন। কিন্তু শাটারের নিচের দিকে আধা হাত খোলা ছিল। সেখান থেকে পুলিশ তাদের টেনে বের করে। জাকির হোসেন গুলি থেকে বাঁচতে চাইলে দৌড় দিতে বলেন। তখন তাইম সবার আগে দৌড় দেন। জাকির গুলি করেন। বিনা চিকিৎসায় তাইম সেখানেই মারা যান।
এদিকে গাজীপুরের কোনাবাড়ী থানার পাশে গুলি করে কলেজ ছাত্র মো. হৃদয়কে হত্যার ঘটনায় করা মামলায় পুলিশের এক কনস্টেবল আকরামকে গ্রেফতার করা হয়। গত ৬ সেপ্টেম্বর অভিযান চালিয়ে কিশোরগঞ্জের তারাইল এলাকা থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়।
গ্রেফতার আকরাম গাজীপুর শিল্প পুলিশে কর্মরত ছিলেন। নিহত হৃদয় টাঙ্গাইলের গোপালপুরের আলমগর গ্রামের লাল মিয়ার ছেলে। তিনি হেমনগর ডিগ্রি কলেজে একাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থী ছিলেন। লেখাপড়ার পাশাপাশি তিনি কোনাবাড়ী এলাকায় অটোরিকশা চালাতেন।
পুলিশ জানায়, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় গাজীপুর মহানগরের কোনাবাড়ী এলাকায় গত ৫ আগস্ট সরকারের বিরুদ্ধে মো. হৃদয় বিভিন্ন দাবিতে স্লোগান দেন। এ সময় কয়েকজন পুলিশের উপস্থিতি দেখতে পেয়ে হৃদয় রাস্তার পাশে অবস্থান নেন। ওই সময় শিল্প পুলিশে কর্মরত কিছু পুলিশ সদস্য কোনাবাড়ী এলাকায় দায়িত্ব পালন করছিলেন।
তারা হৃদয়কে রাস্তার পাশ থেকে ধরে নিয়ে চড়-থাপ্পড় মারেন। একপর্যায়ে পুলিশ কনস্টেবল আকরাম অতি উৎসাহী হয়ে তাকে পেছন দিক থেকে গুলি করলে ঘটনাস্থলেই হৃদয়ের মৃত্যু হয়। ওই ঘটনায় নিহতের ফুফাতো ভাই মো. ইব্রাহীম বাদী হয়ে কোনাবাড়ী থানায় একটি হত্যা মামলা করেন।
এফএইচ/ইএ/এমএস