ঐকমত্য কমিশনের সুপারিশে তিন ধাপ, যা বললেন আলী রীয়াজ

8 hours ago 5

জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহ-সভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ বলেছেন, অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার কাছে জাতীয় জুলাই সনদ বাস্তবায়নের রূপরেখা বা সুপারিশ জমা দেওয়া হয়েছে, তাতে তিনটি ভাগ রয়েছে। পৃথক তিনটি ভাগে সুপারিশগুলো বাস্তবায়ন করবে সরকার।

মঙ্গলবার (২৮ অক্টোবর) রাজধানীর বেইলি রোডের ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে আয়োজিত প্রেস ব্রিফিংয়ে তিনি সুপারিশ বাস্তবায়নের তিনটি ভাগের বিস্তারিত তথ্য তুলে ধরেন।

অধ্যাপক আলী রীয়াজ বলেন, তিনটি ভাগের প্রথমটি হচ্ছে যেসব বিষয়ে সাংবিধানিক বিষয় সংশ্লিষ্ট নয়, সেসব বিষয়ে সরকার যেগুলো অধ্যাদেশের মাধ্যমে বাস্তবায়ন করতে পারে- সেটা যেন অবিলম্বে সরকারের পক্ষ থেকে বাস্তবায়ন করা হয়।

তিনি বলেন, দ্বিতীয় বিষয় হচ্ছে এর মধ্যে সুপারিশে অনেক কিছুই আছে এগুলো সরকারি নির্দেশ এমনকি অফিস অর্ডার দিয়েও বাস্তবায়ন করা সম্ভব। সেগুলো যেন সরকার দ্রুততার সঙ্গে বাস্তবায়ন করে। এ দুটি বিষয়ে কমিশনের সঙ্গে বৈঠকে অংশগ্রহণকারী রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে কোনোরকম ভিন্ন মত নেই। এটা আলোচনার মধ্যে দিয়ে যখনই ঐকমত্য প্রতিষ্ঠিত হয়েছে, সেটা সরকারকে অবহিত করা হয়েছে। পাশাপাশি আজ কমিশনের পক্ষ থেকে যে সুনির্দিষ্ট সুপারিশ দেওয়া হয়েছে, সেখানে এগুলো চিহ্নিত করা হয়েছে। কোনগুলো অধ্যাদেশের মাধ্যমে আর কোনগুলো অফিস অর্ডারের মাধ্যমে বাস্তবায়ন করা যাবে সেগুলো চিহ্নিত করা হয়েছে।

অধ্যাপক আলী রীয়াজ বলেন, রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনার ক্ষেত্রে আমরা লক্ষ্য করেছি যে, সাংবিধানিক বিষয়গুলোতে অনেক বিষয়ে ঐকমত্য আছে। কিছু বিষয়ে ভিন্নমত আছে। এই সংবিধান সংশ্লিষ্ট বিষয়গুলোকে বাস্তবায়নের একটি আইনি ভিত্তি প্রদান এবং বাস্তবায়নের পথ নির্দেশ করার জন্য আমরা আমাদের তৃতীয় সুপারিশে উল্লেখ করেছি। কীভাবে এগুলোকে বাস্তবায়নের পথে অগ্রসর হওয়া যায় তার সুপারিশ করেছি।

তিনি বলেন, সংশ্লিষ্ট বিষয়ের ব্যাপারে আমরা সরকারকে পরামর্শ দিয়ে বলেছি, দুটো বিকল্প সরকারের হাতে আছে। দুটো বিকল্পই কিছু কিছু জিনিস এক, কিন্তু সামান্য ভিন্নতাও আছে। আমাদের সুপারিশগুলো হচ্ছে এমন, আমরা সরকারকে অনুরোধ করেছি, পরামর্শ দিয়েছি সরকার যেন অবিলম্বে একটি আদেশ জারি করে। এই আদেশের অধীনে সরকার গণভোটের আয়োজন করবে।

আরও পড়ুন
জাতীয় নির্বাচনের দিন বা আগে গণভোটের সুপারিশ
ঐকমত্য কমিশন ঐক্যের বদলে ‘জাতীয় অনৈক্য’ করার প্রচেষ্টা নিয়েছে

জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহ-সভাপতি বলেন, সরকার একটি প্রশ্ন উত্থাপন করেছে, সেটি হলো- আদেশ এবং আদেশের তফসিলে অন্তর্ভুক্ত বিষয়গুলো বাস্তবায়নের ব্যাপারে জনগণের সম্মতি আছে কি না? আমরা যে সুপারিশ করেছি তাতে বলা হয়েছে যে, ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ একই সঙ্গে সংস্কার পরিষদ এবং জাতীয় সংসদ হিসেবে কার্যকর থাকবে। তবে সংবিধান সংস্কার পরিষদ কার্যকর থাকবে ১০ দিন। এই সময়ের মধ্যে সংবিধান সংস্কার পরিষদের সদস্যরা জুলাই জাতীয় সনদে বর্ণিত এবং গণভোটে যদি সব জনগণের সম্মতি পাওয়া যায়, সেই বিষয়গুলো সংবিধানে সংযুক্ত করার জন্য প্রয়োজনীয় সব রকম বিধি বিধান, প্রয়োজনীয় সংশোধন, সংযোজন, বিয়োজন, পরিবর্ধন, পরিমার্জন করবেন।

তিনি বলেন, এর পরে যেটা আমরা বলেছি সেটি হচ্ছে একটি উচ্চকক্ষ প্রতিষ্ঠা করা। সংবিধান, সংস্কার কমিশন এবং জাতীয় ঐকমত্য কমিশন এবং নির্বাচন ব্যবস্থার সংস্কারে কমিশনের পক্ষ থেকে সুস্পষ্ট সুপারিশ ছিল। ভোটের সংখ্যানুপাতে ১০ সদস্যের একটি উচ্চকক্ষ প্রতিষ্ঠা করা, সেই মোতাবেক যদি জনগণের সম্মতি পাওয়া যায়, তবে জাতীয় সংসদ প্রতিষ্ঠার ৪৫ দিনের মধ্যে উচ্চকক্ষ গঠন বিষয়ক প্রয়োজনীয় সংশোধনীর মাধ্যমে তা বাস্তবায়িত হবে।

অধ্যাপক আলী রীয়াজ বলেন, আমাদের আরও একটি বিকল্প প্রস্তাব আছে। আমাদের দ্বিতীয় বিকল্প প্রস্তাব। যেমনটি আমি আগেই বলেছি, শুরুতে যে প্রক্রিয়ার দিক থেকে একটা বড় অংশই একই রকম। একটি ব্যতিক্রম ছাড়া আমাদের দ্বিতীয় বিকল্প এও বলা হচ্ছে যে সরকার একটি আদেশ জারি করবে, সেই আদেশের অধীনে গণভোট অনুষ্ঠিত হবে। গণভোটে একটিমাত্র প্রশ্ন থাকবে। তবে ওই আদেশের তফসিলে যে আটচল্লিশটি বিষয় আছে সেগুলো অন্তর্বর্তী সরকার বিল আকারে প্রস্তুত করে জনগণের সামনে উপস্থাপন করতে পারে। সংস্কারের জন্য যে পরিষদ তৈরি হবে, সেই পরিষদ জাতীয় সনদের স্পিরিটকে ধারণ করে প্রয়োজনীয় সংবিধানের সংশোধন, সংযোজন, পরিমার্জন, পরিবর্ধন করতে পারবে।

তিনি বলেন, নির্বাচনের পর থেকে জাতীয় সংসদ জাতীয় সংসদ হিসেবে কার্যকর থাকবে। যদিও জাতীয় সংসদের সদস্যরাই সংবিধান সংস্কার পরিষদের সদস্য হচ্ছেন। তথাপি আমরা প্রস্তাব করেছি, জাতীয় সংসদের সদস্যরা জাতীয় সংসদের সদস্য হিসেবে এবং সংবিধান সংস্কার পরিষদের সদস্য হিসেবে আলাদাভাবে শপথ গ্রহণ করবেন। সংবিধান সংস্কার পরিষদ তার নিজস্ব রুলস অব প্রসিডিউর তৈরি করবে। জাতীয় সংসদের স্পিকার সংবিধান সংস্কার পরিষদের সভাপতিত্ব করবেন, তার অনুপস্থিতিতে সভাপতিত্ব করবেন ডেপুটি স্পিকার। ওই সভার সভাপতি পরিষদের সভায় সভাপতিত্ব করবেন। তাদের উভয়ের অনুপস্থিতিতে সংস্কার পরিষদে গঠিত সভাপতি প্যানেল থেকে ওই পরিষদের বৈঠকে সভাপতিত্ব করবেন। আমাদের দৃঢ় বিশ্বাস যে, সংবিধান সংস্কার পরিষদ তাদের দায়িত্ব পালনে সক্ষম হবেন এবং কোনো অবস্থাতেই এমন পরিস্থিতির সূচনা হবে না যে, সরকারের দেওয়া বিলগুলোকে স্বয়ংক্রিয়ভাবে বাস্তবায়িত করতে হবে।

এমইউ/কেএসআর/এএসএম

Read Entire Article