কক্সবাজার সৈকতে বন্ধ হচ্ছে লাইফগার্ড সেবা, নেপথ্যে কী

1 hour ago 3

কক্সবাজার সমুদ্রসৈকতে বিপদাপন্ন পর্যটকদের উদ্ধার ও সচেতনতায় এক যুগেরও বেশি সময় আগে শুরু হয় বেসরকারি সংস্থা সি-সেইফ লাইফগার্ডের সেবা কার্যক্রম। কিন্তু সংস্থাটির কার্যক্রম থেমে যাচ্ছে। জানা গেছে তহবিল সংকটে সংস্থাটি এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

প্রতিদিন সকাল ৭টা থেকে সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত সুগন্ধা-কলাতলী-লাবণী সৈকতে ‘লাল-হলুদ জার্সি’ পড়া কিছু যুবক উদ্ধার সরঞ্জাম নিয়ে একবুক পানিতে চলে যাওয়া পর্যটকদের তীরের কাছাকাছি চলে আসতে হাঁকডাক দেন। চিরচেনা এই চিত্র আগামী ৩০ সেপ্টেম্বর বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। কর্মসংস্থান হারাবেন ২৭ লাইফগার্ড কর্মীসহ সংস্থার ৩৫ জন।

বিদেশি সংস্থা ‘রয়্যাল ন্যাশনাল লাইফবোট ইনস্টিটিউটের (আরএনএলআই) অর্থায়নে ২০১২ সাল থেকে সি-সেইফ লাইফগার্ড সৈকতে সেবা কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছে। গত এক যুগে ২৭ জন লাইফগার্ড কর্মী সৈকতের কলাতলী থেকে লাবণী পয়েন্ট পর্যন্ত পাঁচ কিলোমিটারে স্রোতের টানে ভেসে যাওয়া অন্তত ৮১৫ পর্যটক-দর্শনার্থীকে উদ্ধার করেছেন।

সি-সেইফ লাইফগার্ডের সিনিয়র কর্মী ও ট্রেইনার মোহাম্মদ ওসমান বলেন, গত সপ্তাহেও সৈকতের সুগন্ধা ও লাবণী পয়েন্টে ভেসে যাওয়ার সময় সাতজনকে উদ্ধার করা হয়।

সংস্থার আঞ্চলিক ব্যবস্থাপক ইমতিয়াজ আহমেদ বলেন, তহবিল সংকটে গত বছরের ডিসেম্বর মাসে সি-সেইফ প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হয়েছিল। পর্যটকদের নিরাপত্তার বিষয়টি মাথায় রেখে কক্সবাজারের জেলা প্রশাসকের তৎপরতায় দাতা সংস্থা প্রকল্পের মেয়াদ গত জুন পর্যন্ত ছয় মাস বাড়ায়। দ্বিতীয় দফায় ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত আরও তিন মাস বাড়ানো হয়। অর্থের জোগান না হওয়ায় চলতি সেপ্টেম্বরেই লাইফগার্ড সেবা বন্ধ হয়ে যাচ্ছে।

লাইফগার্ড হিসেবে সেবা দেওয়া নাইক্ষ্যংছড়ির জয়নাল আবেদীন বলেন, লাইফগার্ডের প্রশিক্ষণ নেওয়ার পর থেকে গত এক যুগ এটা করেই সংসার চালিয়েছি। সমুদ্রে কোনো পর্যটক ভেসে গেলে আমরা ঝুঁকি নিয়ে জীবন বাঁচাই, এখন আমাদের জীবনটাই ঝুঁকিতে পড়ে গেল। আমি ৯৮ পর্যটকের প্রাণ বাঁচাতে পেরেছি। এখন আমাদের বাঁচানোর কেউ নেই।

লাইফগার্ড কর্মী বান্দরবানের লামার আকরাম ত্রিপুরা বলেন, গত প্রায় একযুগ লাইফগার্ড হিসেবে সৈকতে সেবা দিচ্ছি। ২০ হাজার টাকা বেতনে স্ত্রী ও সন্তান নিয়ে শহরের লাইটহাউসে ভাড়া বাসায় থেকে সংসার টানতে হিমশিম খেতাম। আগামী মাস থেকে কীভাবে সংসার চালাব ভেবে পাচ্ছি না।

বিচ ম্যানেজমেন্ট কমিটির তত্ত্বাবধায়ক ও এডিএম মো. শাহিদুল আলম বলেন, তহবিল সংকটের কারণে লাইফগার্ড সেবা সেপ্টেম্বরে বন্ধ হওয়ার বিষয়টি পর্যটন মন্ত্রণালয়কে জানানো হয়েছে। মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা হলো, সৈকত এলাকার হোটেলগুলোর মাধ্যমে লাইফগার্ড সেবা চালু রাখতে হবে।

কক্সবাজার হোটেল ও গেস্ট হাউস মালিক সমিতির সভাপতি আবুল কাশেম সিকদার বলেন, হোটেলসমূহের ব্যবস্থাপনায় লাইফগার্ড পরিচালনার নির্দেশনা পর্যটন মন্ত্রণালয় ও জেলা প্রশাসন থেকে দেওয়া হয়েছে। হোটেল মালিকরা মাসে ১৪-১৫ লাখ টাকার জোগান দিতে পারবে কি না, সন্দেহ আছে।

ট্যুরিস্ট পুলিশ কক্সবাজার রিজিওনের প্রধান অতিরিক্ত ডিআইজি আপেল মাহমুদ বলেন, লাইফগার্ড না থাকলে কত পর্যটকের মৃত্যু হতো, তা সহজে আন্দাজ করা যায়। অক্টোবর থেকে লাইফগার্ড থাকছে না। তখন পরিস্থিতি কী হবে সেটাই ভাবছি।

কক্সবাজার চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি আবু মোরশেদ চৌধুরী খোকা বলেন, পর্যটন অনুষঙ্গ হিসেবে লাইফগার্ড অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এতদিন বেসরকারি সংস্থা চালিয়েছে, এখন সরকারি বা হোটেল কর্তৃপক্ষের অর্থায়নে চলবে কি না সেটা সিদ্ধান্ত নেওয়া এবং বাস্তবায়ন করা সময়সাপেক্ষ বিষয়।

Read Entire Article