শ্রাবণের শেষ সময়ে কক্সবাজারে শুরু হয়েছে ভারী বর্ষণ। গত কয়েকদিন ধরে থেমে থেমে হচ্ছে বৃষ্টি। ৩০ জুলাই (মঙ্গলবার) ভোর ৬টা হতে ৩১ জুলাই (বুধবার) ভোর ৬টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় জেলায় ২৭০ মিলিমিটার (মিমি) বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। বৃষ্টি অব্যাহত থাকায় পাহাড় ধসের আশংকার কথা জানিয়েছে আবহাওয়া অফিস।
আবহাওয়া অধিদপ্তর কক্সবাজার কার্যালয়ের সহকারী আবহাওয়াবিদ মো. আবদুল হান্নান বলেন, গত এক সপ্তাহ ধরে কক্সবাজারে মাঝারি ও ভারী বৃষ্টিপাত অব্যাহত রয়েছে। ৩০ জুলাই সকাল ৬টা থেকে ৩১ জুলাই সকাল ৬টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় সর্বোচ্চ ২৭০ মিমি বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। মঙ্গলবার সন্ধ্যা ৬টা থেকে বুধবার সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত বৃষ্টিপাতের পরিমাণ ২৩৪ মিমি। আর বুধবার (৩১ জুলাই) সকাল ৬টা হতে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত ১২ ঘণ্টায় বৃষ্টিপাত রেকর্ড হয় ৭০ মিমি।
তিনি আরও জানান, মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে উত্তর বঙ্গোপসাগর এলাকায় গভীর সঞ্চালনশীল মেঘমালা সৃষ্টি হওয়ায় দমকা ও ঝড়োহাওয়া বয়ে যেতে পারে। কক্সবাজারসহ চারটি সমুদ্রবন্দরকে ৩ নম্বর স্থানীয় সতর্কতা সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে। অব্যাহত বৃষ্টিপাতে কক্সবাজারের পাহাড়ী এলাকার কোথাও কোথাও পাহাড় ধসের সম্ভাবনা রয়েছে। তবে, অব্যাহত ভারী বর্ষণে প্রশাসনের প্রচারণা স্বত্বেও ঝুঁকিপূর্ণভাবে বসবাসকারি লোকজন নিরাপদ স্থানে সরে যাচ্ছে না।
পৌর মেয়র মাহবুবুর রহমান চৌধুরী বলেন, মঙ্গলবার সন্ধ্যা থেকে মোষলধারে বৃষ্টি নামে। সারারাতের বৃষ্টিতে তলিয়ে যায় শহরের নিম্নাঞ্চল ও অলিগলি।
দেখা গেছে, কক্সবাজার জেলা শহরের পাহাড়তলী, বৈদ্যঘোনা, খাজা মঞ্জিল, লাইট হাউজ, আদর্শগ্রাম, ইসলামপুর, কলাতলী, ঝরঝরি পাড়া ও শুকনাছড়িসহ উপজেলা সমূহের বিভিন্ন পাহাড়ী এলাকায় খাদ এবং পাদদেশে চরম ঝুঁকিপূর্ণভাবে বসবাস করছে অন্তত ১০/১২ হাজার পরিবারের লাখো মানুষ। যাদের বাড়িঘর ভারী বর্ষণে ধসে পড়ার আশংকা রয়েছে।
শুধু কক্সবাজার শহর নয়, জেলার ঈদগাঁও, পেকুয়া, উখিয়া, টেকনাফ, রামু, চকরিয়া ও মহেশখালীর বিভিন্ন এলাকায় পাহাড়ের খাদ এবং পাদদেশে ঝুঁকিপূর্ণভাবে বসবাস করছে অন্তত লক্ষাধিক মানুষ। অব্যাহত ভারী বর্ষণে জীবনের ঝুঁকি জেনেও এসব আবাসস্থল হতে কেউ সরে না।
কক্সবাজার শহরের বৈদ্যঘোনায় উচু পাহাড়ের খাদে বসবাসকারি জলবায়ু উদ্বাস্তু পেকুয়ার মগনামা এলাকার আনোয়ারা খাতুন (৪০) বলেন, গত ১৫ বছর আগে জলোচ্ছ্বাসে বসত বাড়িসহ ভিটে-মাটি হারিয়ে মাথা গোজার ঠাঁই হিসেবে কক্সবাজার শহরে এসে আশ্রয় নিয়েছি। উপায় না থাকায় ঝুঁকি জেনেও পাহাড়ের খাদে আমরা অসংখ্য পরিবার বাস করছি। পাহাড় ধসে মৃত্যুর খবর শুনলে ভারী বর্ষণে আমরাও আতংকে থাকি। সমতলে আশ্রয় নেয়ার মতো কেউ না থাকায় সরে যেতে পারি না।
চকরিয়ার ঢেমুশিয়া এলাকার নুরুল আবছার বলেন, দিনমজুরী করে সংসার চালাতাম। গত একযুগ আগে মাতামুহুরী নদীর ভাঙনে ভিটে মাটি হারিয়েছি। নদীর পাড়ে থাকা ১৫ শতক ভিটে মাটিতে মাথা গোজার ঠাঁইয়ের পাশাপাশি কিছু সবজী চাষ আর হাঁস-মুরগী পালন করে সংসার মোটামুটি ভালোই কাটতো। কিন্তু বন্যা আর নদী ভাঙনের কবলে পড়ে ভিটে মাটিসহ সহায় সম্বল সবই হারিয়েছে আজ উদ্বাস্তু। ফলে, চরম ঝুঁকি জেনেও পাহাড়ের পাদদেশে বাস করতে হচ্ছে। ভারী বর্ষণে রাত কাটে নির্ঘুম। একটা অজানা আতংক তাড়িয়ে বেড়ায়।
দুর্যোগকালীন পরিস্থিতি মোকাবিলায় সবধরনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে উল্লেখ করে জেলা প্রশাসক মুহম্মদ শাহীন ইমরান বলেন, ইতিমধ্যে পাহাড়ে ঝুঁকিপূর্ণভাবে বসবাসকারিদের নিরাপদে সরে যেতে মাইকিংসহ নানা প্রচারণা চালানো হয়েছে। অব্যাহত ভারী বর্ষণের মধ্যে ঝুঁকিপূর্ণ বাসকারীরা যদি সরে না আসে তাহলে প্রশাসন অভিযান চালিয়ে তাদের আশ্রয়কেন্দ্রে নিয়ে আসবে।
জেলা প্রশাসক বলেন, দুর্যোগকালীন পরিস্থিতি মোকাবিলায় প্রশাসনের পক্ষ থেকে একটি নিয়ন্ত্রণ কক্ষ চালু থাকবে। আশ্রয়কেন্দ্রে আসা লোকজনের খাবার সরবরাহ এবং তাদের জানমালের নিরাপত্তায় ব্যবস্থা নিতে প্রশাসন সবধরনের প্রস্তুতি রেখেছে বলেও উল্লেখ করেন তিনি।
সায়ীদ আলমগীর/এএইচ
এসএএল/এমএস