২৬ বছর আগের এক হত্যা মামলায় ২৪ বছর ধরে কনডেম সেলে থাকা শরীফা বেগমের মৃত্যুদণ্ড কমিয়ে আমৃত্যু কারাদণ্ড দিয়েছেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ। একইসঙ্গে তাকে দ্রুত কনডেম সেল থেকে সাধারণ সেলে স্থানান্তরের নির্দেশ দিয়েছেন দেশের সর্বোচ্চ আদালত।
বৃহস্পতিবার (১ আগস্ট) প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসানের নেতৃত্বাধীন আপিল বিভাগের বেঞ্চ এ আদেশ দেন। আদালতে আজ শরীফার পক্ষে শুনানি করেন অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ শিশির মনির। এই মামলার আরেক আসামি আব্দুস সামাদ আজাদকেও আমৃত্যু কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত।
সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মোহাম্মদ শিশির মনির মামলাটি শুনানির জন্য উপস্থাপন করে আদালতের দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলেন, ২৪ বছর ধরে এই নারী কনডেম সেলে আছেন। তার সঙ্গে একই মামলায় আব্দুস সামাদ আজাদ নামে আরেক আসামিও এই সময় ধরে কনডেম সেলে। এ মামলাটিতে শুনানি করতে চাই। প্রধান বিচারপতি এসময় মামলাটি ১ আগস্টের কার্যতালিকার শীর্ষ ১০ এর মধ্যে রাখতে সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দেন। তারই ধারাবাহিকতায় আজ সেটি শুনানি নিয়ে আদেশ দেন।
গত ১ জুলাই একটি জাতীয় দৈনিকে ‘ফাঁসির দিন গুনে এক নারীর ২৪ বছর’ শিরোনামে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। প্রতিবেদনে বলা হয়, ২৬ বছর আগে হত্যা মামলায় শরীফা বেগম যখন কারাগারে যান, মেয়ে সূচী আক্তারের বয়স তিন মাস। কারাগারে কয়েকবার মাকে দেখলেও কখনো ছুঁয়ে দেখা হয়নি তার। মায়ের স্নেহ বোঝার আগেই মায়ের বুকে জড়িয়ে থাকার সুখানুভূতি কেমন তাও জানা নেই। একই অবস্থা মা শরীফারও। কারাগারে যাওয়ার পর আর কখনো সন্তানকে বুকে জড়িয়ে ধরা হয়নি তার। কারণ ৫৫ বছরের জীবনের প্রায় ২৪ বছরই ‘কনডেম সেলে’ থাকা শরীফার মামলার বিচারই এখনো শেষ হয়নি।
আরও পড়ুন>
১৯৯৮ সালে গ্রেফারের পর ২০০০ সালের অক্টোবরে বিচারিক আদালতে তার ফাঁসির রায় হয়। সেই থেকে তিনি কনডেম সেলে বন্দি। ২০০৩ সালে হাইকোর্টে তার সাজা বহাল থাকে। এরপর ২১ বছরেও তার আপিল নিষ্পত্তির তথ্য মেলেনি।
কারা কর্মকর্তাদের তথ্য অনুযায়ী, কারা ইতিহাসে আর কোনো নারী আসামিকে এত দীর্ঘ সময় কনডেম সেলে থাকতে হয়নি। এত লম্বা সময় (২৬ বছর) কোনো নারী কারাবাসে ছিলেন কি না, সে তথ্যও মেলেনি।
শরীফার মতো জামালপুরের আবদুস সামাদ আজাদ ওরফে সামাদও একই মামলায় গত ২৪ বছর ধরে কনডেম সেলে বন্দি। এর আগে শেখ জাহিদ নামে খুলনার এক ব্যক্তি ২০ বছর কনডেম সেলে থাকার পর ২০২০ সালে ২৫ আগস্ট আপিল বিভাগের আদেশে খালাস ও পরে মুক্তি পান।
দেশে গুরুতর ফৌজদারি অপরাধে অনেক নারীর মৃত্যুদণ্ডের মতো কঠোর সাজা হলেও সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগ ও আপিল বিভাগে তা রহিত হয়ে যাবজ্জীবন, খালাস কিংবা অন্য মেয়াদের কারাদণ্ড হয়েছে। অর্থাৎ এখন পর্যন্ত কোনো নারীর ফাঁসি কার্যকর হয়নি। কিছু ব্যতিক্রম বাদে ডেথ রেফারেন্স (মৃত্যুদণ্ড অনুমোদন) মামলা সর্বোচ্চ ১৫ বছরের মধ্যে নিষ্পত্তি হয়। আসামি নারী হলে সে সময় আরও কমে যায়। ফৌজদারি আইন ও সুপ্রিম কোর্টের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, যাবজ্জীবন সাজা ৩০ বছর হলেও কারাবাসের রেয়াত মিলে সেটি হয় সাড়ে ২২ বছর। কারও বেলায় নানা কারণে সেটি আরও কমে আসে।
এ নিয়ে সংবাদ মাধ্যমে প্রতিবেদন প্রকাশিত হওয়ার পর প্রধান বিচারপতি উদ্যোগ নিলে শরীফার আপিল শুনানির জন্য কার্যতালিকায় আসে।
এফএইচ/এসআইটি/এএসএম