মেহেরপুরে অপেক্ষা কফি হাউজে আক্রমণ ও ভাঙচুর চালিয়েছে মিমি নামের এক মদ্যপ তরুণী। মিমি মেহেরপুর সদর উপজেলার গোভীপুর গ্রামের দত্ত পাড়ার মাদক ব্যবসায়ী মৃত নিজামের মেয়ে।
বৃহস্পতিবার (১৪ নভেম্বর) রাতে মেহেরপুর শহরের পৌর কমিউনিটি সেন্টারের অভ্যন্তরে অবস্থিত অপেক্ষা কফি হাউসে এই তাণ্ডব চালান মাদকাসক্ত মিমি।
প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা যায়, মেহেরপুরের বহুল আলোচিত এবং বিচারাধীন হোটেল আটলান্টিক পর্নোগ্রাফি ও চাঁদাবাজি মামলার এজহারভুক্ত ২ নম্বর আসামি ছন্দা খাতুনের সঙ্গে কফি হাউসে আসেন মিমি। একপর্যায়ে কফি হাউজের বাইরে অন্ধকারাচ্ছন্ন এক কোনায় যেয়ে বসেন তারা। এ সময় কফি শপের মালিক শফি তাদেরকে অন্ধকার জায়গায় বসতে বারণ করে। তখন তারা চিল্লাচিল্লি ও গালাগালি করে উঠে যায়। কিছুক্ষণ পর মিমি সাত-আট জন ছেলেকে সঙ্গে করে নিয়ে আসে দোকানে আক্রমণ করতে। উপস্থিত সকলে তাকে নিবৃত করে এবং রিকশায় করে বাড়ি পাঠিয়ে দেয়। কিছুক্ষণ পর সে আবার তার মা নুন্তিকে সঙ্গে নিয়ে অপেক্ষা কফি হাউসে আসে। এ সময় মদ্যপ মিমি কফি হাউজে ভাঙচুর ও দোকানিকে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করে।
সে সময় সেখানে কিছু পুলিশ সদস্য উপস্থিত থেকে কফি পান করলেও উদ্ভূত ঘটনা দেখে তারা দ্রুত স্থান ত্যাগ করে। কফি হাউজের স্বত্বাধিকারী শফিসহ কয়েকজন থানা পুলিশে ফোন দেন। মেহেরপুর সদর থানা থেকে মাত্র ৫ মিনিটের দূরত্বে কফি হাউজটির অবস্থান হলেও প্রায় ঘণ্টাখানেক পরে পুলিশের একটি টিম সেখানে এসে উপস্থিত হয়। তবে টিমে কোন নারী পুলিশ সদস্য উপস্থিত না থাকাতে সুযোগ বুঝে মিমি ও তার মা তৎক্ষণাৎ স্থান ত্যাগ করে।
ঘটনার পর মাদকাসক্ত মিমি সম্পর্কে কালবেলার প্রাথমিক অনুসন্ধানে জানা যায়, মিমি গোভীপুর গ্রামের নিজাম ও নুন্তি দম্পতির সন্তান। তার বাবা নিজাম একজন তালিকাভুক্ত মাদক ব্যবসায়ী ছিলেন। একসময় তিনি বিষ পান করে মারা যান। আর তার মাদকাসক্ত মেয়ে মিমির প্রথম বিয়ে হয় হরিরামপুর গ্রামের এক ছেলের সঙ্গে। ছাড়াছাড়ি হয়ে গেলে দ্বিতীয় বিয়ে করে রায়পুর গ্রামে। তবে উশৃঙ্খলতার কারণে সেখানেও সংসার করতে পারেনি। কিছুদিন ধরে মেহেরপুরের বহুল আলোচিত ও সমালোচিত হোটেল আটলান্টিকা পর্নোগ্রাফি ও চাঁদাবাজি মামলা কাণ্ডের এজহারভুক্ত আসামি ছন্দার সঙ্গে তার অবাধ চলাচল।
অপেক্ষা কফি হাউজের দুই কর্মচারী বাচ্চু ও মুকুল বলেন, মেয়েটা চেয়ার ভাঙচুর করেছে। ব্লেড দিয়ে গলা কেটে দিবে বলে আমাদের তাড়া করেছে। তখন আমরা দৌঁড়ে পালিয়ে গেছিলাম। পরে আবার মেয়েটা ওই কোনাতেই যেয়ে বসেছিল।
অপেক্ষা কফি হাউজের মালিক মো. শফিকুর রহমান শফি কালবেলাকে বলেন, বিগত ১০ বছরে কখনোই আমার কফি হাউসে এরকম ন্যাক্কারজনক ঘটনা ঘটেনি। আমি শুধু বলেছিলাম অন্ধকার জায়গায় মেয়েদের বসা নিষেধ। এরপর মেয়েটি দুই দফায় ঘণ্টাব্যাপী গালাগালি ও তাণ্ডব চালায়। আর বলতে থাকে আমি তোকে মারবো। মারতে না পারলে আমি এখানেই আত্মহত্যা করব। হয় ব্লেড দিয়ে নিজের গলা কেটে ফেলবো অথবা নিজের গায়ে আগুন জ্বালিয়ে দেব, আর তুই মার্ডার কেসের আসামি হবি। এমনিতেই এখন ব্যবসার অবস্থা খারাপ। আর তার এই কাণ্ডে রাত ৯টার পর থেকে আমার দোকানে আর কোনো বেচা বিক্রি হয়নি। আমি মেয়েটির দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই।
মেহেরপুর সদর থানার ওসি আমানুল্লাহ আল বারি কালবেলাকে বলেন, ঘটনা জানতে পেরে আমাদের টিম সেখানে গেছিল। তবে ততক্ষণে ভাঙচুর চালানো নারীটি স্থান ত্যাগ করে চলে গেছে। কফি শপের মালিকের প্রতি আমার পরামর্শ থাকবে তিনি যেন অতি দ্রুত থানাতে লিখিত অভিযোগ অথবা একটি সাধারণ ডায়েরি দায়ের করেন। এরপর তদন্ত সাপেক্ষে আমরা ব্যবস্থা নেব।