কবিকে দিও না দুঃখ…

3 hours ago 4

এদেশে যত সহজে বিলবোর্ডে অভিনেতাদের হাসি ঝরে, তত সহজে ভেসে ওঠে না কোনো কবির মুখ। যত দ্রুত করতালি ওঠে ক্রিকেট মাঠে, তত দ্রুত ওঠে না শ্রদ্ধা সেই শিক্ষকের জন্য, যিনি প্রজন্মের পর প্রজন্মকে মানুষ করে তোলেন। যত সহজে একজন সাধারণ কন্টেন্ট ক্রিয়েটর ভাইরাল হন, সারাজীবন সাংবাদিকতা করেও তার নাম জানতে পারে না কেউ! প্রশ্ন জাগে—কেন? কেন এই অবমূল্যায়ন?
আমাদের সমাজ এখন ভোগবাদে আচ্ছন্ন। শিল্প, সাহিত্য, শিক্ষা—এসবকে লাভজনক বিনিয়োগ মনে করা হয় না। যে কবি একদিন বিপ্লবের ভাষা বানালেন, যে সাংবাদিক দুর্নীতির বিরুদ্ধে কলম ধরলেন, যে শিক্ষক জ্ঞানের আলো জ্বালালেন—তাদের আয়ের গ্রাফ ব্যবসায়ীর তুলনায় শূন্যের কাছাকাছি। ফলাফল? প্রতিভা টিকে থাকে না, হারিয়ে যায় টিকে থাকার লড়াইয়ে।

রাষ্ট্রীয় নীতিনির্ধারণে সংস্কৃতি ও শিক্ষা বরাবরই পেছনের সারিতে। বাজেটে তাদের স্থান অপ্রতুল, সম্মাননা প্রক্রিয়া পক্ষপাতদুষ্ট। এখানে প্রতিভা নয়, রাজনৈতিক ঘনিষ্ঠতা, তোষণ বা চাটুকারিতা প্রাধান্য পায়। প্রকৃত কবি, প্রকৃত সাংবাদিক, প্রকৃত শিল্পী বা প্রকৃত শিক্ষক হন প্রান্তিক।
একসময় কবিতার বই মানে ছিল উৎসব, নাটক মানে ছিল আন্দোলন, প্রবন্ধ মানে ছিল দিকনির্দেশনা। এখন সস্তা বিনোদনের যুগ। ছোট ভিডিও, ভাইরাল গান, তাৎক্ষণিক হাস্যরস—এই সাময়িক আনন্দের বাজারে গভীর শিল্প বা সত্য সাংবাদিকতার দাম নেই।
সমাধান সহজ নয়, কিন্তু শুরু করা যায় তিন দিক থেকে: রাষ্ট্রীয় প্রণোদনা—শিক্ষক, শিল্পী ও লেখকদের জন্য সঠিক মজুরি ও পৃষ্ঠপোষকতা। পাঠাভ্যাস ও সাংস্কৃতিক চেতনা ফিরিয়ে আনা —শিশু থেকে শুরু করে প্রাপ্তবয়স্ক, সবাইকে বই, শিল্প ও সাংবাদিকতার সাথে যুক্ত করা। সম্মাননার সংস্কৃতি তৈরি—একজন কবি মানে শুধু কবিতা নয়; একজন শিক্ষক মানে শুধু পাঠ নয়; তারা সমাজের আত্মা। এই বোধ জাগ্রত করা দরকার।

কবি বা লেখক যখন রাতের পর রাত না ঘুমিয়ে লেখেন, সাংবাদিক যখন জীবনের ঝুঁকি নিয়ে সত্য তুলে ধরেন, শিক্ষক যখন নিজের সংসারের চাইতে শিক্ষার্থীর ভবিষ্যৎ নিয়ে ব্যস্ত থাকেন—তখন তারা শুধু পেশা নয়, দায়িত্ব পালন করেন। অথচ আমরা শুধু ভোগ করি তাদের সৃষ্টি, কিন্তু খুব কমই দিই স্বীকৃতি। হয়তো সময় এসেছে সেই ঋণ শোধ করার।

যারা শব্দকে আলো বানায়, রঙকে বিপ্লব বানায়, সত্যকে ঝড় বানায়, জ্ঞানকে আগুনের মতো ছড়িয়ে দেয়—তাদের কেন আজ এত অন্ধকারে রাখা হয়? এদেশের প্রতিটি কবি যখন রাত জেগে লিখেছে, প্রতিটি সাংবাদিক যখন প্রাণের ঝুঁকি নিয়ে সত্য জানিয়েছে, প্রতিটি শিল্পী যখন রঙে-রেখায় মানুষের বেদনা ফুটিয়েছে, প্রতিটি শিক্ষক যখন নিজের সংসার ফেলে অন্যের সন্তানের ভবিষ্যৎ গড়েছে—তখন আমরা কি দিয়েছি তাদের? করতালি না নীরব অবজ্ঞা?

সম্প্রতি বিডি নিউজে প্রকাশিত এক সাংবাদিকের খোলা চিঠি ভাইরাল হয়েছে। হ্যাঁ, সাংবাদিকের খোলা চিঠি ভাইরাল হতে হলে তাঁকে মৃত্যুবরণ করতে হয়, তা না হলে হয়তো এই চিঠি সংবাদের পাতার তলানিতেই থেকে যেত! অবশেষে সাংবাদিক বিভুরঞ্জন সরকারও ভাইরাল হলেন, তবে জীবন দিয়ে…!

বইমেলার ভিড়ের মধ্যে কিছু সম্পর্ক জন্ম নেয়, আবার কিছু সম্পর্ক সময়ের সঙ্গে সযত্নে বেঁচে থাকে। বিভুরঞ্জন দা ছিলেন সেই রকম একজন মানুষ, যার সঙ্গে পরিচয় ছিল কাগজের গন্ধে ভেজা, মলাটের ভিড়ের মাঝের এক উজ্জ্বল আলো। প্রতিবছর বইমেলার মাঠে তাঁর সঙ্গে দেখা হতো—কখনো নতুন বই নিয়ে আলোচনা, কখনো সাহিত্য আর জীবনের গল্প, কখনো শুধু হাসিমুখে একে অপরকে দেখে নেওয়া। যেন এক অলিখিত চুক্তি ছিল আমাদের মধ্যে, বইমেলা মানেই দেখা হবে।

বিভুদা শুধু একজন সাংবাদিক ছিলেন না; তিনি ছিলেন একজন গল্প শোনানো মানুষ। তাঁর কথার ভঙ্গিতে ছিল উষ্ণতা, চোখের দৃষ্টিতে ছিল আন্তরিকতা। আমার প্রতিটি লেখার খবর তিনি নিতেন, প্রশংসা করতেন, কখনো পরামর্শ দিতেন। তাঁর সেই সরল মমতা আর সহজ উপস্থিতি আমার জন্য ছিল এক অমূল্য প্রাপ্তি।

আগামীতে বইমেলা এলেও বিভুদার হাসিমুখ দেখা যাবে না। এই অনুপস্থিতি অদৃশ্য হয়ে থাকা নয়, বরং আরও গভীর উপস্থিতি—স্মৃতির প্রতিটি পাতায়, প্রতিটি অক্ষরে তিনি রয়ে যাবেন। যতবার বইমেলায় যাব, জনসমুদ্রের মাঝেই হয়তো মনে হবে—পাশেই দাঁড়িয়ে আছেন তিনি, ঠিক আগের মতোই। ভুলতে পারছি না সেই দিনগুলো। ভুলতে চাইও না। কারণ কিছু সম্পর্ক সময়কে ছাড়িয়ে চিরকাল বেঁচে থাকে। বিভুরঞ্জন সরকার আমার কাছে ঠিক তেমনই এক অমলিন বন্ধনের নাম।

বিভুদা, বইমেলা এলেই আপনার মুখটা যেন চোখের সামনে ভেসে ওঠে। সেই কাগজের গন্ধ, মলাটের রঙিন ভিড়, আর ভিড়ের মাঝেই আপনার উষ্ণ হাসি—সবটা যেন আজও টাটকা। প্রতিবছর কতবার দেখা হতো, গল্প জমতো, নতুন বই নিয়ে আপনার কৌতূহল থাকত, লেখালেখির খোঁজখবর, আবার মজার ছলে পরামর্শ দিতেন। সেই সহজ-সরল সম্পর্কটাই আজ আমার বুকের গভীরে ভারী হয়ে বসে আছে।
আপনি শুধু সাংবাদিক ছিলেন না, ছিলেন একজন অচেনা আলোর মতো। যার সঙ্গে কোনো জটিলতার সম্পর্ক ছিল না, ছিল কেবল এক ভালোবাসা আর সম্মানের বন্ধন। বইমেলা এলে অনেক মুখের ভিড়ে হয়তো আপনাকে খুঁজবো, কিন্তু জানি—সেই দেখা আর কোনোদিন হবে না।

তবু এই না-দেখা মানে হারিয়ে যাওয়া নয়। আপনি থাকবেন—প্রতিটি লেখায়, প্রতিটি আলোচনায়, প্রতিটি মেলাতে। যতদিন বইমেলায় হাঁটব, আপনার সেই মৃদু হাসি বাতাসে ভেসে আসবে। ভুলতে পারছি না বিভুদা। ভুলবও না। কারণ কিছু মানুষ সময়ের গণ্ডি পেরিয়ে স্মৃতির পাতায় অমর হয়ে থাকেন। আপনি আমার জীবনে ঠিক তেমন এক অমূল্য চিহ্ন! মানুষের ভিড়, কাগজের গন্ধ, নতুন বইয়ের সাজানো সারি—সবকিছু ঠিক থাকে, শুধু কিছু মুখ হারিয়ে যায়। বিভুরঞ্জন দা তেমনই এক মুখ, যিনি বাকিজীবন হয়ে থাকবেন এক অবিচ্ছেদ্য সঙ্গী।
কত সহজ ছিল তাঁর উপস্থিতি—কিছু হাসি, কিছু গল্প, নতুন বই নিয়ে তর্ক-বিতর্ক, আবার মাঝেমধ্যে আমার লেখার প্রশংসা কিংবা গঠনমূলক পরামর্শ। তিনি ছিলেন শুধু একজন সাংবাদিক নন, তিনি ছিলেন এক নিবেদিত সাহিত্যপ্রেমী, যিনি মানুষকে ভালোবাসতেন বইয়ের মতোই। জানি আর দেখা হবে না! তবু এই না-দেখা মানে হারিয়ে যাওয়া নয়। বিভুরঞ্জন দা রয়ে গেছেন প্রতিটি মেলার বাতাসে, প্রতিটি নতুন বইয়ের পাতায়, প্রতিটি কথোপকথনের মাঝখানে। তিনি আমার জন্য হয়ে আছেন অনুপ্রেরণা, হয়ে আছেন সেই সেতুবন্ধন, যা প্রজন্ম থেকে প্রজন্ম বইয়ের প্রতি ভালোবাসা ছড়িয়ে দেয়। কারণ কিছু সম্পর্ক অনুপস্থিত হয়েও আমাদের জীবনকে গভীর করে রাখে। স্মৃতি যতদিন থাকবে, বিভুদা ততদিন পাশে থাকবেন—অদৃশ্য অথচ অমলিন।

জাতির বিবেকের কাছে একটিই প্রশ্ন, ৭১ বছর বয়সে বিভুরঞ্জন সরকারকে কেন মরতে হলো? এটা এক গভীর ও বহুমাত্রিক প্রশ্ন। কবি, লেখক, সাংবাদিক, শিল্পী, শিক্ষক—এরা সমাজের চিন্তা, সংস্কৃতি, জ্ঞান ও চেতনার নির্মাতা। তবু তাদের সঠিক মূল্যায়ন হয় না, এর পেছনে কয়েকটি বড় কারণ রয়েছে। আমাদের সমাজ ধীরে ধীরে এমন এক অর্থনীতির দিকে গেছে যেখানে দ্রুত অর্থ উপার্জন, বিলাসিতা ও চটকদার জীবনধারার প্রতি ঝোঁক বেশি।

শিল্প, সাহিত্য, শিক্ষা—এসবকে “তাৎক্ষণিক লাভজনক” মনে করা হয় না। ফলে যারা জ্ঞানের আলো ছড়ান, তারা আর্থিকভাবে অবমূল্যায়িত থাকেন। রাষ্ট্রীয় নীতিতে সংস্কৃতি, শিক্ষা ও গণমাধ্যমকে অগ্রাধিকার হিসেবে দেখা হয় না। বাজেট কম, প্রণোদনা নেই, পৃষ্ঠপোষকতার অভাব। ফলাফল—যারা এই খাতে কাজ করেন, তারা উপযুক্ত সম্মান পান না। মানুষের চিন্তার গভীরতা বাড়ে বই, শিল্পকলা, সমালোচনামূলক লেখা ও সৎ সাংবাদিকতার মাধ্যমে। কিন্তু পাঠাভ্যাস, শিল্পচর্চা ও সমালোচনামূলক চিন্তাধারা দিন দিন কমছে। এর ফলে সৃষ্টিশীল মানুষদের অবদান বুঝতে ও মূল্য দিতে সমাজ পিছিয়ে পড়ছে।

অনেক সময় গুণগত কাজ নয়, বরং ক্ষমতার সাথে কতটা ঘনিষ্ঠ তার ওপর নির্ভর করে “মূল্যায়ন” হয়। এতে প্রকৃত কবি, সাংবাদিক বা শিক্ষক অবহেলিত হয় আর নিম্নমানের লোক পুরস্কৃত হয়। ডিজিটাল যুগে মানুষ দ্রুত বিনোদন খোঁজে—সংক্ষিপ্ত ভিডিও, সস্তা কন্টেন্ট। গভীর সাহিত্য, গবেষণামূলক লেখা বা মানসম্মত শিল্পকর্ম তাৎক্ষণিক জনপ্রিয়তা পায় না। ফলে শিল্পীর শ্রম দীর্ঘমেয়াদে টিকে থাকে, কিন্তু তাৎক্ষণিক মূল্যায়ন মেলে না।

যারা শব্দকে আলো বানায়, রঙকে বিপ্লব বানায়, সত্যকে ঝড় বানায়, জ্ঞানকে আগুনের মতো ছড়িয়ে দেয়—তাদের কেন আজ এত অন্ধকারে রাখা হয়? এদেশের প্রতিটি কবি যখন রাত জেগে লিখেছে, প্রতিটি সাংবাদিক যখন প্রাণের ঝুঁকি নিয়ে সত্য জানিয়েছে, প্রতিটি শিল্পী যখন রঙে-রেখায় মানুষের বেদনা ফুটিয়েছে, প্রতিটি শিক্ষক যখন নিজের সংসার ফেলে অন্যের সন্তানের ভবিষ্যৎ গড়েছে—তখন আমরা কি দিয়েছি তাদের? করতালি না নীরব অবজ্ঞা?

কারণ আমরা ভুলে গেছি—একটি জাতিকে টিকিয়ে রাখে না শুধু সেতু, রাস্তা বা শপিং মল। একটি জাতিকে বাঁচিয়ে রাখে তার কবিতা, তার সংবাদমাধ্যমের সততা, তার চিত্রকলার প্রতিবাদ, তার শিক্ষকের অনড় নৈতিকতা। অথচ আমরা সেসবকেই সবচেয়ে কম দাম দেই। আমরা তাদের দুঃখ স্বচক্ষে দেখি, কিন্তু তাদের পাশে দাঁড়াই না। এজন্যই বিভুরঞ্জন সরকার লিখে গেছেন–“সত্য লিখে বেঁচে থাকা সহজ নয়”!

ঠিক তাই, সত্য লিখে এদেশে কে, কবে পেয়েছে সম্মান? হ্যাঁ, বিভুদা’র অভাব ছিল, তা বোধকরি পুরোপুরি সম্মানের! কারণ বিভুদার সাথে যতবারই দেখা হয়েছে পিঠাঘর কিংবা বেইলি রোডের কোনো কফিশপে, প্রতিবারই তিনি আগবাড়িয়ে খাইয়েছেন এবং বিল পরিশোধ করেছেন। কখনো মনে হয়নি তিনি অর্থসংকটে ভুগছেন! তাহলে, অভাবটা ছিল কোথায়? নিশ্চয়ই অভাব ছিল তাঁর মনে, তিনি তাঁর যোগ্য সম্মান পাননি এদেশের সরকারমহল বা যাদের জন্য দু'হাত ভরে লিখে গেছেন! অথচ, তাঁর চেয়ে অযোগ্য সাংবাদিকগণ আজ মহাসুখে বগল বাজিয়ে চলেন তাঁরই সামনে, দুঃখটা ছিল তাঁর এখানেই! অবমূল্যায়ন আর কত?

যে দেশে কবি পেটের দায়ে কলম ছেড়ে অন্য পেশায় চলে যায়, যে দেশে সাংবাদিক সত্য লিখে চাকরি হারানোর হুমকি পায়, যে দেশে শিক্ষক সংসার চালাতে টিউশনের বাজারে নেমে যায়, যে দেশে শিল্পী নিজের চিত্র বিক্রি করতে পারে না—সে দেশের কবি, লেখক, সাংবাদিক, শিক্ষক মেঘনায় ঝাঁপ দেবে না তো কে দেবে? আর সে দেশের আগামী প্রজন্মই বা কী শিখবে? শিখবে, চাটুকারিতা আর তোষণ; হারাবে সত্য বলার সাহস।

সময় এসেছে পরিবর্তনের। রাষ্ট্রকে বলুন –সংস্কৃতি, শিক্ষা ও সত্য সাংবাদিকতাকে বাজেটের শেষ পাতায় নয়, প্রথম পাতায় আনুন। সমাজকে বলুন –কবিতা পড়ুন, সত্য সংবাদকে সমর্থন করুন, শিক্ষকের পাশে দাঁড়ান, শিল্পীর চিত্রকর্ম কিনুন, নিজেকে বলুন –করতালির বদলে কর্মতালি দিন। এরা সমাজের প্রহরী, জাতির আত্মা। যদি তারা হারিয়ে যায়, হারাবে আমাদের চেতনা। একদিন হয়তো রঙ থাকবে, কিন্তু শিল্পী থাকবে না; সংবাদ থাকবে, কিন্তু সত্য থাকবে না; স্কুল থাকবে, কিন্তু শিক্ষক থাকবে না। তাহলে আমরা কোন সভ্যতার নাগরিক হয়ে বাঁচব?
যে দেশ তার কবিকে ক্ষুধার্ত রাখে, তার সাংবাদিককে ভয় দেখায়, তার শিল্পীকে অচেনা করে ফেলে, তার শিক্ষককে বঞ্চিত করে—সে দেশ কেবল অর্থে ধনী হতে পারে, আত্মায় নয়। আমাদের ভবিষ্যত প্রজন্ম যদি একদিন প্রশ্ন করে – কেন আমরা তাদের সঠিক মূল্যায়ন করিনি, কী জবাব দেবো?

অনেক সময় বয়ে গেলেও এখনো সময় আছে। সব কলম শুকিয়ে যায়নি, তুলির রঙ মুছে যায়নি, হোয়াইটবোর্ড খালি হয়নি। এখনই যদি আমরা কবি, লেখক, সাংবাদিক, শিল্পী, শিক্ষকের পাশে দাঁড়াই– সঠিক সম্মান, ন্যায্য মূল্যায়ন, সৎ পৃষ্ঠপোষকতা দিতে পারি—তাহলে হয়তো এই প্রজন্মের কবি, লেখক, সাংবাদিক, শিল্পী ও শিক্ষকরা শুধু ইতিহাসে নয়, মানুষের হৃদয়ে অমর হয়ে থাকবেন। কারণ, একটি জাতি শুধু দৃশ্যমান উন্নয়ন দিয়ে নয়—তার স্রষ্টাদের সম্মান দিয়েই সভ্য হয়।
পরিবেশে কবি শামসুর রাহমানের শরণ নিয়ে বেলতে হয়-
কবিকে দিও না দুঃখ, দুঃখ দিলে সে-ও জলে স্থলে
হাওয়ায় হাওয়ায়
নীলিমায় গেঁথে দেবে দুঃখের অক্ষর। কবি তার নিঃসঙ্গতা
কাফনের মতো মুড়ে রাখে আপাদমস্তক, হাঁটে
ফুটপাতে একা,
দালানের চূড়ায় চূড়ায়, দিগন্তের অন্তরালে
কেমন বেড়ায় ভেসে, চাঁদের নিকট যায়, নক্ষত্র ছিটোয় যত্রতত্র
খোলামকুচির মতো। তাকে দুঃখ দিও না, চৌকাঠ থেকে দূরে
দিও না ফিরিয়ে।

লেখক : কবি ও কথাসাহিত্যিক।

এইচআর/জিকেএস

Read Entire Article