কবিগুরু কোন মডেলের গাড়িতে চড়তেন জানেন?

1 month ago 8

কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জীবন যেমন সাহিত্য, সংগীত আর চিত্রকলার মেলবন্ধন, তেমনি তিনি ছিলেন সময়ের অনেকদিকেই আধুনিক ও প্রগতিশীল। সেই আধুনিকতারই একটি নিদর্শন ছিল তার ব্যবহৃত মোটরগাড়ি। তিনি ছিলেন উপমহাদেশের প্রথম সারির সেই বিরল ব্যক্তিত্বদের একজন, যিনি এক শতাব্দীরও বেশি আগে ব্যক্তিগত গাড়ির ব্যবহার শুরু করেছিলেন।

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ছিল হাম্বার গাড়ি। ১৯৩৩ সালের হাম্বার গাড়িটি সম্ভবত সবচেয়ে পছন্দের গাড়ি ছিল বিশ্বকবির। রবীন্দ্রনাথ খুব ভালবাসতেন এই গাড়িতে চড়তে। জীবনের শেষদিনগুলোতেও তিনি এই গাড়ি ব্যবহার করেছেন।

কবিগুরুর কনিষ্ঠ পুত্র এবং বিশ্বভারতীর প্রথম উপাচার্য রথীন্দ্রনাথ ঠাকুর ১৯৩৮ সালে আমেরিকা থেকে কৃষিবিজ্ঞান নিয়ে পড়াশোনা শেষ করে ফেরেন। সেই বছরেরই রথীন্দ্রনাথ ১৯৩৩ সালের মডেলের একজোড়া হাম্বার কিনে ফেললেন ‘এইচএইচ লিলি’ নামক হাম্বার গাড়ির ডিলারের থেকে।

‘এইচএইচ লিলি’ নামক হাম্বার গাড়ির ডিলাররাই সেই সময় পুরো ভারত এবং বর্মাদেশের একমাত্র ডিলার ছিল। থমাস হাম্বার ১৮৬৮ সালে নিজের নামে তৈরি করেন হাম্বার কোম্পানি। এই ব্রিটিশ গাড়ির কোম্পানি ধীরে ধীরে এতই বিখ্যাত হয়, পৃথিবীর অন্যতম সেরা গাড়ি প্রস্তুতকারী সংস্থা হিসাবে নিজেদের প্রতিষ্ঠা করে। কোম্পানির অন্যতম সেরা গাড়ি ছিল ১৯৩৩ সালের হাম্বার স্নাইপ এবং পুলম্যান সেডান। ৪ লিটারের ইঞ্জিন ধারনক্ষম এই গাড়ি যে সেই সময়ের জন্য যথেষ্ট শক্তিশালী ছিল।

রথীন্দ্রনাথ ঠাকুর পার্ক স্ট্রিটের রুটস লিমিটেডের শোরুম থেকে কেনেন গাড়ি দু’টি। সেসময় গাড়ির প্রত্যেকটি ৪০০ পাউন্ড (তখনকার মূল্যে ৫৩০০ ভারতীয় মুদ্রা) দিয়ে কিনেছিলেন তিনি । দু’টি গাড়ির একটি জোড়াসাঁকোতে ছিল, আর একটি নিয়ে যাওয়া হয়েছিল বিশ্বভারতীতে।

শান্তিনিকেতনে কবির ব্যবহৃত গাড়ির নম্বর WB A 8689। যা রথীন্দ্রনাথ ঠাকুরের নামে রেজিস্ট্রেশন করা হয়েছিল ৷ কবিপুত্র রথীন্দ্রনাথ ঠাকুর গাড়ি চালাতেন। এছাড়াও, কবির গাড়ি চালানোর জন্য একজন চালক ছিলেন ৷

কবিগুরু শান্তিনিকেতনে এই গাড়িতে করেই ঘুরে বেড়াতেন। তখন তার শরীরের অবস্থাও খুব ভালো ছিল না। সেই সময় এই গাড়ি শান্তিনিকেতনের পথে দেখলেই লোকে বুঝতেন ভেতরে রবীন্দ্রনাথ বসে আছেন, ঘুরতে বেরিয়েছেন।

কবি তার পছন্দ এবং প্রয়োজনমতো গাড়ির অনেককিছু পাল্টে ফেলেছিলেন। গাড়ির চারপাশে শীতলপাটি লাগিয়েছিলেন, যাতে ভিতরে ঠান্ডা থাকে। এই কাজটি করেছিলেন জাপানি শিল্পী কিন্তারো কাসাহারা। জাপানে তাতামি ম্যাটের বদলে শান্তিনিকেতনে শীতল পাটি ব্যবহার করেছিলেন কিন্তারো কাসাহারা। একই ভাবে গুরুদেবের গাড়ির সিট ও ভিতর ঠান্ডা রাখতে শীতল পাটি দিয়ে মুড়ে দেওয়া হয়েছিল।

কবি যেখানেই যেতেন এই গাড়িতে চড়েই যেতেন। এমনকি ১৯৪১ সালের ২৫ জুলাই যখন অসুস্থ কবি শেষবারের মতো শান্তিনিকেতন ছেড়ে চলে যাচ্ছেন, অর্থাৎ কবির শেষ যাত্রার সঙ্গীও ছিল হাম্বার ১৯৩৩। কবিকে একটি অ্যাম্বুলেন্সের মতো গাড়িতে অর্ধশায়িত অবস্থায় নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল ৷ সেই অ্যাম্বুলেন্সের আগে আগে যাচ্ছিল কবির প্রিয় গাড়িটি। সেই ছবিও রয়েছে বিশ্বভারতীর সংগ্রহে ৷

শুধু কবিই নন, এই গাড়ির যাত্রীদের তালিকায় আছেন সুভাষচন্দ্র বসু, মহাত্মা গান্ধী, আচার্য জগদীশচন্দ্র বসু, জওহরলাল নেহরুর মতো বিখ্যাত মানুষরা। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের প্রিয় এই হাম্বার গাড়িটি এখনো বিশ্বভারতীতে রাখা আছে দর্শনীয় বস্তু হিসেবে।

সূত্র: নিউজ ১৮, আনন্দবাজার

কেএসকে/এএসএম

Read Entire Article