বাংলাদেশ রেলওয়ে কমলাপুর স্টেশনে যাত্রী ভোগান্তী অনেকটাই মানবসৃষ্ট। রেলওয়ে বিভাগের একটি চক্র নিজেরা আর্থিক সুবিধা নিতেই পরিকল্পিতভাবে টিকিটপ্রাপ্তিসহ নানা ধরনের হয়রানি করে থাকে। এদের মধ্যে নাটের গুরু কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশন মাস্টার মাহমুদুল হাসান।
সরেজমিনে কমলাপুর স্টেশনে শনিবার (২১ ডিসেম্বর) দুপুর আড়াইটার পর গিয়ে দেখা যায়, স্টেশন মাস্টার বিকেল তিনটার পর তার দাপ্তরিক টেবিলে বসেন। দশ মিনিট বসেই তিনি উধাও হয়ে যান। তখন তার টেবিলের সামনে অপেক্ষমাণ সন্দীপের বাসিন্দা মো. আবু সাঈদ ও নাঈম হোসেন নামের দুজন। বড় একটি রাজনৈতিক দলের শীর্ষ এক নেতার রেফারেন্সে তারা আগাম টিকিট নিতে এসেছেন। তাদের শুধু জানতে চাওয়া কত নম্বর কাউন্টারে তারা টিকিট কাটবেন। এরই মধ্যে কমলাপুর স্টেশনে সন্ধ্যা ৫টার দিকে যোগদান করেন নতুন স্টেশন ম্যানেজার শাহাদাত হোসেন। স্টেশন মাস্টার মাহমুদুল হাসান এবং স্টেশন ম্যানেজার একই কক্ষে বসেন। সন্ধ্য সাড়ে ৬টার পর দীর্ঘক্ষণ অপেক্ষার পরও স্টেশন মাস্টার না আসায় দুই টিকিট প্রত্যাশী চেঁচামেচি শুরু করলে এর কিছুক্ষণ পরই স্টেশন মাস্টার মাহমুদুল হাসান এসে তাদের নিয়ে টিকিট কাউন্টারের কথা বলে দেন।
অপরদিকে একজন গণমাধ্যমকর্মী তূর্ণা নিশিতা রেলের একটি সিঙ্গেল কেবিনের টিকিট সংগ্রহের বিষয়ে স্টেশন ম্যানেজারকে জানালে তিনি নতুন এসেছেন জানিয়ে এ ব্যাপারে স্টেশন মাস্টারের কাছে সমাধানের কথা বললে স্টেশন মাস্টার মাহমুদুল হাসান ম্যানেজারকে বলেন, তূর্ণা নিশিতা এবং সোনার বাংলা ট্রেনের কেবিন দিতে জিএমের অনুমতি লাগবে। অথচ এ গণমাধ্যমকর্মীকে শুক্রবার (২০ ডিসেম্বর) পূর্বের ম্যানেজার সাজেদুল আলম শনিবার সন্ধ্যার পর টিকিট দেওয়ার কথা বলেছেন।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে সাবেক কমলাপুর রেলওয়ের একজন স্টেশন ম্যানেজার বলেন, রেলওয়ের কেবিন দিতে পারেন স্টেশন ম্যানেজার। যেহেতু শাহাদাত হোসেন নতুন যোগদান করেছেন তাই তিনি কিছু না বুঝে দায়িত্ব নিতে চাননি। আর এ সুযোগে স্টেশন মাস্টার মাহমুদুল হাসান বিষয়টির অপব্যাখ্যা করেছেন নিজের ফায়দা হাসিলের জন্য।
টিকিটপ্রপ্তির জন্য অপেক্ষমাণ সন্দীপের বাসিন্দা মো. আবু সাঈদ বলেন, স্টেশন মাস্টার মাহমুদুল হাসান আমাদের বিকেল তিনটার সময় দশ মিনিটের কথা বলে বসিয়ে রেখে চলে যান। কিন্তু সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার পরও তিনি আসেননি। আমরা বহু ডাকাডাকির পর তিনি এসে আমাদের টিকিট কাটার কাউন্টারের কথা বলে দেন। তিনি শুধু নিজে ফায়দা নিতে কৃত্রিমভাবে সংকট তৈরি করে যাত্রী ভোগান্তি সৃষ্টি করছে।
কমলাপুর রেলওয়ের স্টেশন মাস্টার শাহাদাত হোসেন বলেন, আমি এই স্টেশনে আজই (শনিবার) যোগদান করেছি। তাই টিকিটের বিষয়টি এখনো আমি তেমন কিছুই জানি না। এ ব্যাপারে আপাতত স্টেশন মাস্টার ভালো বলতে পারবেন।
এসব বিষয়ে স্টেশন মাস্টার মাহমুদুল হাসান বলেন, সোনার বাংলা ও তূর্ণা নিশিতা রেলের কোনো কেবিন জিএমের অনুমতি ছাড়া কমলাপুর স্টেশন থেকে আমরা দিতে পারি না। অন্য রেলের কেবিন দিতে পারলে তূর্ণা নিশিতা ও সোনার বাংলায় না দিতে পারা একই ঘটনায় দ্বৈত নিয়ম কিনা এমন প্রশ্নে তিনি কোনো সদুত্তর দিতে পারেননি।
কমলাপুর স্টেশনের টিকিট কাউন্টারের একজন কাউন্টারম্যান নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, স্টেশন মাস্টার মাহমুদুল হাসান কমলাপুর স্টেশনে অল্প কিছুদিন আগে যোগদান করেছেন। আর তিনি যোগদানের পরই একটি সিন্ডিকেট তৈরি করেছেন। এই চক্রটি যাত্রীদের টিকিট প্রাপ্তিতে পরিকল্পিতভাবে হয়রানির করে নিজেরা আর্থিক সুবিধা পাওয়ার পথ সুগম করছে। বিষয়টি নিয়ে এরই মধ্যে নানা গুঞ্জন চলছে।