জ্বর-সর্দিতে অসুস্থ হয়ে কমিউনিটি ক্লিনিকে গিয়েছিলেন ৬৭ বছর বয়সী খোদেজা বেগম। সেখানে তাকে স্বাস্থ্য পরামর্শ দিলেও ওষুধ দেওয়া হয়নি। ওষুধ না পেয়ে হতাশ হয়ে বাড়ি অসহায় এ বৃদ্ধা।
কমিউনিটি ক্লিনিক থেকে ফেরার পথে খোদেজা বেগমের সঙ্গে কথা হলে তিনি প্রতিবেদককে বলেন, ‘অসুস্থ হলেই এই কমিউনিটি ক্লিনিকে চিকিৎসা নিতে আসি। গরীব মানুষ ওষুধ কেনার সামর্থ্য নেই। এখানে এলে প্রেসার ও জ্বর মেপে দেয়। ওষুধ দেয় না। চাইলে বলে, ওষুধ নেই। আজ নিয়ে ৭ দিন এখানে এসে ওষুধ না নিয়ে ফিরে যাচ্ছি।’
এ চিত্র পাবনার ঈশ্বরদী উপজেলার মুলাডুলি ইউনিয়নের বেতবাড়িয়া কমিউনিটি ক্লিনিকের। ওষুধ না পেয়ে ফিরে যাওয়া খোদেজা বেগমের বাড়ি বেতবাড়িয়া গ্রামে। খোদেজা বেগমের স্বামী কর্মহীন। দিনমজুর ছেলের পরিবারে থাকেন তিনি।
একই অবস্থা দেখা যায় উপজেলার দাশুড়িয়া ইউনিয়নের মারমী কমিউনিটি ক্লিনিকে। মারমী গ্রামের নাজিম উদ্দিন বলেন, ‘আমি নিজে কয়েকদিন এসে ওষুধ না পেয়ে ঘুরে গেছি। এখানে গরীব-দুখী মানুষ চিকিৎসা নিতে আসে। ওষুধ না পেয়ে সবাই হতাশ হয়ে ফিরে যায়। ওষুধ চাইলে ক্লিনিকের ডাক্তার বলে ওষুধ নেই।’
একই গ্রামের আব্দুল মজিদ বলেন, ‘‘আমরা গরীব-দুখী যারা আছি তারা এখানেই চিকিৎসা নিতে আসি। অনেকদিন ধরে ঘুরছি এখানে এসে ওষুধ পাই না। ওষুধ চাইলেই বলে, ‘ওষুধ আসে না, আমরা কোথা থেকে দিবো।’ তাই এখানে এসে খালি হাতে ফিরে যেতে হয়। এখানকার বিনামূল্যের ওষুধ পেলে আমাদের খুব উপকার হয়।’’
- আরও পড়ুন
- ফলকে নাম কেন, এটি কি আমার বাপের টাকায় করা
- চুয়াডাঙ্গায় মায়ের মৃত্যুর খবরে প্রাণ গেলো ছেলেরও
- কৃষকের গাভি হত্যার অভিযোগ, মৃত্যুর কারণ জানতে হচ্ছে ময়নাতদন্ত
উপজেলার ২৮ কমিউনিটি ক্লিনিকের প্রায় সবগুলোরই একই চিত্র। ৫-৬ মাস ধরে ওষুধ সরবরাহ বন্ধ রয়েছে ক্লিনিকগুলোতে। ফলে দুর্ভোগে পড়েছেন গ্রামের হতদরিদ্র মানুষ। এসব কমিউনিটি ক্লিনিকে এসে শুধু পরামর্শ নিয়ে খালি হাতে ফিরতে হচ্ছে রোগীদের। শুধু শুক্রবার বাদে সপ্তাহে ছয় দিন কমিউনিটি ক্লিনিক সকাল ৯টা থেকে ৩টা পর্যন্ত খোলা রাখা হয়। এখানে প্যারাসিটামল, অ্যান্টাসিড, ফলিক অ্যাসিড, জিংক, ভিটামিন বি কমপ্লেক্স, ক্যালসিয়াম, প্যান্টাপ্রাজলসহ ২৭ ধরনের ওষুধ পাওয়া যায়। কমিউনিটি ক্লিনিকে হেলথ কেয়ার প্রোভাইডার (সিএইচসিপি) ছাড়াও একজন স্বাস্থ্য সহকারী (এইচএ) ও পরিবার কল্যাণ সহকারী (এফ ডব্লিও এ) নিয়মিত স্বাস্থ্যসেবা দেওয়ার কথা থাকলেও বেশিরভাগ কমিউনিটি ক্লিনিকে স্বাস্থ্য সহকারী ও পরিবার কল্যাণ সহকারী নিয়মিত বসেন না। ফলে প্রত্যন্ত গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর জন্য নির্মিত এসব সেবাকেন্দ্রে কাঙ্ক্ষিত সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন মানুষ।
বেতবাড়িয়া কমিউনিটি ক্লিনিকের সদস্য আব্দুস সামাদ জাগো নিউজকে বলেন, এ কমিউনিটি ক্লিনিকে যেসব ওষুধ আসতো এগুলো ৫-৬ মাস ধরে আসছে না। ফলে গ্রামের দরিদ্র মানুষের স্বাস্থ্যসেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। অতিদ্রুত কমিউনিটি ক্লিনিকগুলোতে ওষুধ সরবরাহ করা প্রয়োজন।
মারমী কমিউনিটি ক্লিনিকের পরিবার কল্যাণ সহকারী মোছা. রোকেয়া খাতুন বলেন, কমিউনিটি ক্লিনিকে ৫-৬ মাস ধরে ওষুধ সরবরাহ বন্ধ রয়েছে। গত এক বছর ধরে জন্মনিয়ন্ত্রণের ওষুধ সরবরাহ করা হচ্ছে না। বিশেষ করে জন্মনিয়ন্ত্রণ ট্যাবলেট সুখী, জন্মনিয়ন্ত্রণ ইনজেকশন সরবরাহ বন্ধ রয়েছে। ফলে জন্মনিয়ন্ত্রণে কার্যত কোনো সেবা দিতে পারছি না।
মারমী কমিউনিটি ক্লিনিকের হেলথ কেয়ার প্রোভাইডার (সিএইচসিপি) আলেয়া ফেরদৌস জাগো নিউজকে বলেন, আমরা ৫-৬ মাস ধরে ওষুধ পাচ্ছি না। ওষুধের স্বল্পতা কারণে রোগী কমে গেছে। সাধারণ সর্দি-জ্বর,কাশি, আমাশয়সহ বিভিন্ন রোগের ওষুধ রোগীরা পাচ্ছেন না। অনেক হতদরিদ্র রোগী আছেন যারা ওষুধ কিনে খেতে পারেন না। তাই দ্রুত কমিউনিটি ক্লিনিকগুলোতে ওষুধ সরবরাহ করা প্রয়োজন। যাতে হতদরিদ্র সাধারণ মানুষ চিকিৎসা সেবা থেকে বঞ্চিত না হন।
বেতবাড়িয়া কমিউনিটি ক্লিনিকের হেলথ কেয়ার প্রোভাইডার (সিএইচসিপি) জালাল উদ্দিন বলেন, প্রতিদিন এ ক্লিনিকে ৭০ থেকে ১২০ জন রোগী স্বাস্থ্যসেবা নিতে আসতো। কিন্তু গত ৬ মাস ধরে নতুন ওষুধ সরবরাহ বন্ধ থাকায় খুবই বিব্রতকর অবস্থায় পড়েছি। ওষুধ না থাকায় রোগী কমে গেছে কয়েক গুণ। রোগীরা এসে ওষুধ না পেয়ে ফিরে যান। তারা যাওয়ার সময় নানা কটু কথা বলেন। অনেক হতদরিদ্র মানুষ ওষুধ না পেয়ে কেঁদে ফেলেন।
ঈশ্বরদী উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার-পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মো. আলী এহসান জাগো নিউজকে বলেন, শুধু ঈশ্বরদী নয় সারাদেশের যত কমিউনিটি ক্লিনিকে আছে। সব কমিউনিটি ক্লিনিকের যে ট্রাস্ট (হেড অফিস) রয়েছে সেখান থেকে জানুয়ারি মাসে ওষুধ সরবরাহ করা হয়। এটি ছিল গত অর্থ বছরের। গত জুলাই মাস থেকে নতুন অর্থ বছর শুরু হয়েছে। নতুন অর্থবছরে ট্রাস্ট অফিস থেকে আবারো ওষুধ ক্রয় করে তা কমিউনিটি ক্লিনিকগুলোকে সরবরাহ করবে। ততদিন আমাদের অপেক্ষা করতে হবে।
এমএন/জিকেএস