চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (চাকসু) নির্বাচনের গঠনতন্ত্র সংস্কার, নির্বাচনী কার্যক্রম থেকে প্রক্টর ও রেজিস্ট্রারের অব্যাহতি দাবি করে উপাচার্য বরাবর স্মারকলিপি দিয়েছে শাখা ছাত্রদল। তবে, নির্বাচনের কোনো কার্যক্রমে না থেকেও অব্যাহতি চাওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার অধ্যাপক অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম।
সোমবার (২৫ জুলাই) দুপুরে গঠনতন্ত্র সংস্কার ও প্রক্টর-রেজিস্ট্রারের অব্যাহতি চেয়ে ছাত্রদল স্মারকলিপি দেয়। এতে বলা হয়, এখন পর্যন্ত প্রশাসন কালক্ষেপণ করে তফসিল ঘোষণা করতে পারেনি, যা নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার বিষয়ে নানা প্রশ্নের জন্ম দিচ্ছে। এছাড়া সম্প্রতি প্রকাশিত চাকসুর গঠনতন্ত্রে কিছু অসঙ্গতি, অস্পষ্টতা, এমফিল-পিএইচডির সংযুক্তি এবং নারী শিক্ষার্থীদের প্রতি বৈষম্যমূলক ধারা অন্তর্ভুক্ত হওয়ায় শিক্ষার্থীরা উদ্বিগ্ন ও ক্ষুব্ধ। প্রশাসন শিক্ষার্থীদের মতামত উপেক্ষা করে একতরফা সিদ্ধান্ত নিয়েছে, যা শিক্ষার্থীদের অধিকার ও গণতান্ত্রিক চেতনার পরিপন্থি। একটি কার্যকর চাকসু গঠনের স্বার্থে সব অংশীজন ও শিক্ষার্থীদের মতামত অনুযায়ী নির্বাচনের প্রার্থিতার ক্ষেত্রে কেবল স্নাতক ও স্নাতকোত্তর শিক্ষার্থীদেরই রাখতে হবে। বয়সসীমা ৩০ বছর প্রত্যাহার করে এমফিল-পিএইচডি শিক্ষার্থীদের প্রার্থিতার সুযোগ বন্ধ করতে হবে। অবিলম্বে দপ্তর সম্পাদক ও সহ-দপ্তর সম্পাদক পদ নারী-পুরুষ উভয়ের জন্য উন্মুক্ত করতে হবে।
বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের বিরুদ্ধে পক্ষপাতদুষ্ট কাজের অভিযোগ তুলে স্মারকলিপিতে বলা হয়, প্রক্টর ও রেজিস্ট্রারের কর্মকাণ্ডে দলীয় পক্ষপাতদুষ্ট আচরণ পরিলক্ষিত হচ্ছে, যা অত্যন্ত হতাশাজনক। বর্তমান চবি প্রশাসন দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে প্রক্টর একটি ছাত্র সংগঠনকে বিশেষ সুবিধা দিয়ে অন্যদের সঙ্গে বিমাতাসুলভ আচরণ করছেন। ছাত্রপ্রতিনিধির নামে নিজের আশীর্বাদপুষ্ট ছাত্র সংগঠনের নেতাদের বিভিন্ন জায়গায় দায়িত্ব দিয়েছেন। নানা সময়ে তিনি ওই ছাত্র সংগঠনের মুখপাত্রের মতো আচরণ করেছেন। গত কয়েক মাসে তিনি তার পছন্দের ছাত্র সংগঠনের হয়ে নানা স্থানে ক্যাম্পেইন চালিয়েছেন।
স্মরলিপিতে আরও বলা হয়, বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রারও তার কর্মকাণ্ডে দলীয় পক্ষপাতমূলক আচরণ ফুটিয়ে তুলেছেন। প্রক্টরের নারী বিদ্বেষী মনোভাব, বিতর্কিত ভূমিকা এবং প্রকাশ্য দলবাজি একটি সুষ্ঠু চাকসু নির্বাচনের পথে বড় প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করতে পারে। তাই চবি ছাত্রদল মনে করে, শিক্ষার্থীদের কাছে প্রশাসনের বিশ্বাসযোগ্যতা ও আস্থা ফিরিয়ে আনার স্বার্থে এবং সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ চাকসু নির্বাচনের লক্ষ্যে প্রক্টর ও রেজিস্ট্রারকে নির্বাচনী কার্যক্রমের সব দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেওয়া প্রয়োজন।
এ বিষয়ে চবির ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম জাগো নিউজকে বলেন, ‘ছাত্রদলের এরা মূর্খ ও অছাত্র। কেনানা ছাত্র হলে চাকসু সম্পর্কে সামান্য ধারণা রাখতো। চাকসু ছাত্রদের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কিন্তু এটা সম্পর্কে তারা ধারণা রাখে না। ছাত্রদল কাল্পনিকভাবে একটা স্টেটমেন্ট দিয়েছে, যেটা রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। একজন মানুষ যদি কমিটিতে থাকে, তাহলে তার অব্যাহতির প্রশ্ন উঠতে পারে। আমি যেখানে কমিটিতেই নেই...।’
তিনি বলেন, ‘উপাচার্য এবং উপ-উপাচার্য আমাকে বারবার বলেছেন চাকসু নির্বাচন কমিটিতে কাজ করতে কিন্তু আমি তা রাজি হইনি। কেননা রেজিস্ট্রারের দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি চাকসু নিয়ে কাজ করা আমার পক্ষে সম্ভব না। ছাত্রদল যেটা করেছে তা মূর্খতার পরিচয়। আমি আইনজীবীর সঙ্গে কথা বলে ব্যবস্থা নেবো।’
সোহেল রানা/এসআর