বিশ্বে নানা রকম ভীতি বা আতঙ্কের কথা আমরা শুনেছি। কেউ উঁচু জায়গা দেখে ভয় পান, কেউবা অন্ধকারে থাকতে পারেন না। কিন্তু কখনো কী শুনেছেন, কেউ কলা দেখলেই ভয় পান? এমনই এক অদ্ভুত ভীতির শিকার সুইডেনের লিঙ্গ সমতাবিষয়ক মন্ত্রী পাওলিনা ব্রান্ডবার্গ।
ব্রান্ডবার্গের এই ভীতি—যা ‘ব্যানানাফোবিয়া’ নামে পরিচিত—তার জীবনে এক অদ্ভুত সমস্যার জন্ম দিয়েছে। সম্প্রতি সুইডেনের এক পত্রিকায় দেওয়া সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, ‘এটি হয়তো হাস্যকর শোনায়, কিন্তু আমার কাছে এটি এক ভয়ানক বাস্তবতা। শৈশবে ঘটে যাওয়া এক দুর্ঘটনার পর থেকেই আমি কলার প্রতি এমন অস্বাভাবিক আতঙ্ক অনুভব করি। এখন আমি এই ভীতি কাটাতে পেশাদার সাহায্য নিচ্ছি।’
ব্রান্ডবার্গ যেখানে কাজ করেন বা সফরে যান, সেখানে তার সহকর্মীরা নিশ্চিত করেন যে কোনো জায়গায় কলা যেন উপস্থিত না থাকে। সম্প্রতি ফাঁস হওয়া কিছু ই-মেইল থেকে জানা যায়, তার দপ্তর প্রতিটি অনুষ্ঠান বা বৈঠকের আগে স্পষ্ট নির্দেশনা দেয়, মন্ত্রীর উপস্থিতির আগে জায়গাটি ‘কলামুক্ত’ করতে হবে।
একটি ই-মেইলে উল্লেখ ছিল, ‘মন্ত্রী ব্রান্ডবার্গের মারাত্মক অ্যালার্জি রয়েছে কলার প্রতি। তাই কোনোভাবেই তার আশপাশে কলা রাখা যাবে না।’ এমনকি কনফারেন্স বা ভোজসভাগুলোর ক্ষেত্রেও একই রকম সতর্কতা অবলম্বন করা হয়।
এই কলা ভীতি সুইডেনের জাতীয় পর্যায়ে আলোচনা তৈরি করেছে। সুইডেনের প্রধানমন্ত্রী উলফ ক্রিস্টারসন এ বিষয়ে বলেন, এ ধরনের ভীতি থাকা অস্বাভাবিক কিছু নয়। এটি তার কাজের ওপর কোনো প্রভাব ফেলে না। একজন পরিশ্রমী মন্ত্রীর এই ব্যক্তিগত সমস্যাকে নিয়ে ব্যঙ্গ করা উচিত নয়।
শিক্ষা মন্ত্রী জোহান পেহরসন ব্রান্ডবার্গকে সমর্থন জানিয়ে বলেন, ব্রান্ডবার্গ একজন সাহসী উদারবাদী মানুষ এবং দক্ষ প্রসিকিউটর। তিনি সবসময় দুর্বল নারীদের পাশে শক্তিশালী কণ্ঠে দাঁড়ান। এ ধরনের একটি ছোট বিষয় নিয়ে এত বেশি আলোচনা করা হাস্যকর।
বিরোধী দলের সদস্যরাও ব্রান্ডবার্গের পাশে দাঁড়িয়েছেন। সোশ্যাল ডেমোক্র্যাটিক পার্টির সদস্য টেরেসা কারভালহো, যিনি নিজেও একই ভীতির শিকার। তিনি বলেন, আমরা বিভিন্ন বিষয়ে তর্ক-বিতর্ক করি, কিন্তু এই ক্ষেত্রে আমরা একত্র। কলাভীতি একটি মানবিক সমস্যা এবং আমরা একে সম্মান করি।
কলাভীতি বিষয়ে বিশেষজ্ঞরা বলেন, শৈশবে কোনো ভয়ানক অভিজ্ঞতা থেকে এ ধরনের ভীতি তৈরি হতে পারে। তবে ব্রান্ডবার্গ দেখিয়েছেন, এমন বিরল আতঙ্ক থাকা সত্ত্বেও একজন ব্যক্তি পেশাগত জীবনে সফল হতে পারেন। তার কাজ এবং দায়িত্বের প্রতি নিষ্ঠা তার আতঙ্ককে ছাপিয়ে গেছে।
পাওলিনা ব্রান্ডবার্গ শুধু নিজের জন্য নয়, অন্যদের জন্যও অনুপ্রেরণা হয়ে উঠেছেন। কলাভীতিকে উপেক্ষা করে তিনি তার দায়িত্ব নিষ্ঠার সঙ্গে পালন করে যাচ্ছেন, যা তার জীবনের এক অনন্য উদাহরণ।