খাওয়া, মাছের ঘের ও পুকুরে দেওয়া, বাড়ি রং করাসহ দৈনন্দিন নানান কাজে ব্যবহৃত হলেও কাঁচামালের দাম বৃদ্ধি ও লাভ কম হওয়ায় ভালো নেই রাজবাড়ীর চুন তৈরির কারিগররা। বাপ-দাদার পেশাকে টিকিয়ে রাখতে সনাতন থেকে আধুনিক পদ্ধতিতে চুন তৈরি করলেও বাড়েনি আয়। উল্টো কমেছে লাভের পরিমাণ। এ অবস্থায় সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা বা সহজ শর্তে ঋণ পেলে চুন শিল্পকে এগিয়ে নেওয়ার পাশাপাশি এলাকার বেকারত্ব দূরে ভূমিকা রাখবে বলে ধারণা কারিগরদের।
রাজবাড়ীর বালিয়াকান্দির জামালপুরের নলিয়া গ্রামে নলিয়া চুন ঘর ও মেসার্স অনিক-অন্তর ট্রেডার্স এ দুইটি কারখানায় ৩টি মেশিনের সাহায্যে প্রতিদিন প্রায় ৪০ থেকে ৫০ মণ শামুক ও ঝিনুক থেকে চুন উৎপাদন করা হচ্ছে। ঢাকা, যশোর ও খুলনা থেকে বাড়তি দামে শুকনো কাঁচামাল কিনে এনে নিজস্ব পদ্ধতিতে পানি দিয়ে পাউডার বানিয়ে মেশিনের সাহায্যে তৈরি করা হচ্ছে এই চুন। পরবর্তীতে সেই তরল চুন ১ মণ ওজনের বস্তাজাত করে রপ্তানি করা হচ্ছে রাজবাড়ীসহ ফরিদপুর, কুষ্টিয়া, ঝিনাইদহসহ আশপাশের বিভিন্ন জেলায়।
এদিকে প্রতিমণ চুন তৈরিতে কারখানা মালিক ৩৫০ থেকে ৩৬০ টাকা খরচ করে বিক্রি করছেন ৪০০ টাকায়। যা উৎপাদনের তুলনায় খুবই সামান্য। তারপরও বাপ-দাদার পেশা ও চুন শিল্পকে টিকিয়ে রাখতে যুগের পর যুগ চুন তৈরি করছেন রাজবাড়ী জেলার এই দুইটি পরিবার।
স্থানীয় গোপাল ঠাকুর ও মো. লিটন শেখ বলেন, এই চুর্ণকাররা আগে বৈঠা দিয়ে সনাতন পদ্ধতিতে চুন তৈরি করলেও এখন আধুনিক পদ্ধতিতে মেশিনের সাহায্যে চুন তৈরি করেন। কিন্তু তারপরও তাদের অনেক কষ্ট করতে হয়। কারণ চুন তৈরির উপকরণ মিক্স ও তৈরির সময় চোখ, নাক-মুখে যাওয়ার ভয় থাকে। গরম চুন চোখে গেলে চোখ নষ্ট পর্যন্ত হতে পারে। বর্তমানে কাঁচামালের দাম বেশি এবং ব্যবসায় লাভ কমে যাওয়ায় এই চুন শিল্প বিলুপ্তির পথে। ফলে এই শিল্পকে বাঁচিয়ে রাখতে সরকারের পৃষ্ঠপোষকতা ও নজরদারি প্রয়োজন।
চুন তৈরির শ্রমিক মিরাজ বলেন, চুনের শুকনো কাঁচামাল ভাপ দিয়ে গুড়া করে মেশিনের সাহায্যে মিক্স করে চুন তৈরি করেন। পরে সেটি ছেঁকে বস্তাজাত করেন। সব সময় মুখে মাস্ক, হাতে গ্লাবস পড়তে হয়। তারপর নাক-মুখে কাঁচামালের গুড়া যায় এবং গরম চুন ছাঁকার সময় মাঝে মধ্যে হাত-পা ও শরীরে পরে। গরম চুন যেখানে লাগে সেখানে ফোসকা পড়ে যায়। কিন্তু কষ্ট অনুযায়ী তাদের মুজরি খুবই কম এবং বর্তমানে মহাজনও ভালো দাম পায় না। সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত এই কাজ করে মুজরি পান মাত্র ৩০০ টাকা এবং দিনের বাকি সময় অন্য কাজ করে সংসার চালান।
মেসার্স অনিক-অন্তর ট্রেডার্সের মানিক কুমার রায় বলেন, ব্যবসার অবস্থা খুবই খারাপ। দিন যাচ্ছে কাঁচামালের দাম বাড়ছে, কিন্তু তাদের উৎপাদিত চুনের দাম বাড়ছে না। কাজ করতে গিয়ে অনেক সমস্যা হয়। তারপরও বাপ-দাদার ব্যবসা ধরে রাখার চেষ্টা করছেন। তাছাড়া অন্য কাজও শেখেননি। টাকা পয়সা না থাকায় টুকটাক করে চলছেন। কোনো সহযোগিতা পেলে ব্যবসা বড় পরিসরে করতে পারতেন।
রাজবাড়ী বিসিক জেলা কার্যালয়ের সহকারী মহাব্যবস্থাপক চয়ন বিশ্বাস বলেন, তারা উদ্যোক্তাদের প্রশিক্ষণ ও পরামর্শ দিয়ে সহযোগিতা করার পাশাপাশি আর্থিকভাবেও সহযোগিতা করে থাকেন। সেক্ষেত্রে উদ্যোক্তারা তাদের কাছে এলে নীতিমালা অনুসরণ করে সহযোগিতা করতে পারেন।
এফএ/জিকেএস