কাউন্টারে বাসের টিকিট শেষ, বাড়তি ভাড়ার অভিযোগ

3 months ago 47

রাজধানীর মোহাম্মদপুরে একটি রেস্তোরাঁয় কাজ করেন নাজমুল ও আদনান। ঈদ উদযাপন করতে যাবেন খুলনার পাইকগাছায়। তাই এসেছেন গাবতলী বাস টার্মিনালে। কিন্তু এসে দেখেন খুলনার কোনো বাসেই সিট খালি নেই। ফলে তাদের যশোরগামী বাসের টিকিট খুঁজতে হয়। সেই টিকিট নিতে গিয়ে পড়েন বিপাকে। ঈদ কেন্দ্র করে টিকিটের দাম দেড়শ থেকে ২০০ টাকা বেশি চাইছে কাউন্টারগুলো।

শুক্রবার (১৪ জুন) দুপুরে গাবতলী বাসস্ট্যান্ডে গিয়ে দেখা যায় এমন চিত্র। এখানে বিভিন্ন কাউন্টার ঘুরে দেখা গেছে, অধিকাংশেরই টিকিট বিক্রি হয়ে গেছে। যেসব বাসের টিকিট রয়েছে, সেগুলো বিক্রি হচ্ছে বেশি দামে।

এসময় নাজমুল ও আদনান নামে দুই যাত্রীর কাছে টিকিট বিক্রি করতে আসেন ‘দ্রুতি পরিবহনে’র একজন কর্মচারী। তাদের কাছে যশোরের মনিহার পর্যন্ত ভাড়া প্রথমে ১৪০০ টাকা, পরে ১২০০ টাকা চান ওই ব্যক্তি। তবে নাজমুল বলেন, ভাড়া তো ৫০০ টাকা করে ১ হাজার টাকা। পরে টিকিট হাতে থাকা ওই ব্যক্তি বলেন, ৫০০ টাকা ভাড়ায় এখন যাওয়া সম্ভব না।

আরও পড়ুন: 

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক টিকিট বহনকারী ওই ব্যক্তি বলেন, এই রুটে ভাড়া ৬০০-৬৫০ টাকা। আমরা চার্ট অনুযায়ী ভাড়া রাখছি। অন্য সময় যাত্রী টানতে কম ভাড়া রাখি, কিন্তু এখন তো বাস ফেরত আসবে ফাঁকা। ৫০-১০০ টাকা ঈদের বকশিশ চাচ্ছি, কেউ দিচ্ছে কেউ দিচ্ছে না। কারও কাছে জোর করছি না।

এছাড়া রাবেয়া পরিবহনের বিরুদ্ধে বাড়তি ভাড়া নেওয়ার অভিযোগ করেছেন যাত্রীরা। দুপুরে পলাশ নামের একজন যাত্রী বলেন, রাজবাড়ির পাংশা অন্য সময় ভাড়া ৪০০ টাকা। এখন রাখা হয়েছে ৬০০ টাকা। ঈদ উপলক্ষে ১০০-২০০ টাকা বেশি রাখছে।

কাউন্টারে বাসের টিকিট শেষ, বাড়তি ভাড়ার অভিযোগ

রাজশাহীগামী যাত্রী খোকন আহমেদ জানান, ৬০০ টাকার টিকিট ৮৫০ টাকা চাওয়া হচ্ছে। বাড়তি টাকা ছাড়া টিকিট পাওয়া যাচ্ছে না।

এ বিষয়ে রাবেয়া পরিবহনের কাউন্টারের বিক্রয়কর্মী শহিদুল বলেন, বেশি ভাড়া নয়, নিয়ম মেনেই যাত্রীদের কাছ থেকে ভাড়া রাখা হচ্ছে।

এদিকে দুপুরে গাবতলী কাউন্টারে আসেন বিআরটিএ চেয়ারম্যান নূর মোহাম্মদ মজুমদার। সার্বিক পরিস্থিতিতে সন্তোষ প্রকাশ করে তিনি বলেন, সরকার নির্ধারিত যে ভাড়া, তার চাইতে বেশি ভাড়া নেওয়ার সুযোগ নেই। আমাদের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট পুরো সময় টার্মিনালে রয়েছেন। অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করা হলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

কাউন্টার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, অধিকাংশ বাসের আজকের দিনের টিকিট শেষ। যাত্রীর চাপ বেশি থাকায় কেউ নতুন বাস নামিয়েছেন। অনলাইনে অগ্রিম টিকিট বিক্রি হয়ে গেছে। চাঁদরাত পর্যন্ত টিকিট বুকিং শেষ। যাত্রী চাইলেও পছন্দের বাসে ভ্রমণ করতে পারছেন না।

গোপালগঞ্জগামী বাস ‘স্টার এক্সপ্রেসে’র সকালে দুটি ও রাত ১০টায় একটা বাস গাবতলী ছেড়ে যায়। শুক্রবারের সব টিকিট আগেই বিক্রি হয়ে যাওয়ায় কাউন্টারে অলস সময় পার করছিলেন ম্যানেজার হৃদয়।

তিনি বলেন, আজকের কোনো টিকিট নাই। যারা অনলাইনে টিকিট কেটেছেন তাদের টিকিট প্রিন্ট করে দিচ্ছি। রাস্তায় ভালোই যানজট আছে। প্রত্যেকটা বাস এক থেকে দেড় ঘণ্টা দেরিতে ফিরছে।

কাউন্টারে বাসের টিকিট শেষ, বাড়তি ভাড়ার অভিযোগ

সোহাগ পরিবহনের কাউন্টার ম্যানেজার নয়নও একই কথা জানান। তিনি বলেন, চাঁদরাত পর্যন্ত কোনো টিকিট নাই। কেউ টিকিট বাতিল করলে সেগুলো বিক্রি হবে। এছাড়া যাত্রীরা কাউন্টারে এসে টিকিট পাবেন না। সকাল থেকে এখন পর্যন্ত ৫টা বাস ছেড়ে গেছে, আরও ৫টা বাস ছাড়বে।

পুরান ঢাকা থেকে আসা যাত্রী সম্পা প্রামাণিক যাবেন যশোর। তিনি বলেন, সব সময় শুনি গাবতলীতে যাত্রী নাই। এখন তো দেখি গাবতলীতে বাসই নেই। সোহাগ পরিবহনে যাওয়ার ইচ্ছা ছিল। কিন্তু এখন লোকাল বাসে যেতে হবে, সেগুলোর ভাড়া বেশি, আবার সার্ভিস খারাপ।

দিগন্ত পরিবহনের কাউন্টার কর্মী জয়নুল বলেন, আজকে যাত্রীর চাপ বেশি। বাস কম। ঢাকায় ফেরার পথে অনেক বাস জ্যামে আটকে আছে। বাস সময় মতো আসতে পারছে না। বেশিরভাগ বাসের টিকিট বিক্রি হয়ে গেছে।

এসএম/জেডএইচ/এএসএম

Read Entire Article