কাজে আসছে না ৬ কোটি টাকার সেতু

12 hours ago 5
একটি সেতুর অভাবে দীর্ঘদিন ধরে উন্নয়ন বঞ্চিত ছিল সিরাজগঞ্জের বেলকুচি উপজেলার ৮-১০টি গ্রামের মানুষ। বর্ষা মৌসুমে নৌকা আর শুকনো মৌসুমে পায়ে হেঁটেই শহর-বন্দরে যাতায়াত করতে হতো এখানকার মানুষদের। তাদের দুর্ভোগ লাঘবে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর প্রায় সোয়া ৬ কোটি টাকা ব্যয়ে ৭২ মিটার দৈর্ঘ্যের একটি সেতু নির্মাণ করে। সেতুটিকে ঘিরে নদী বিধৌত প্রান্তিক মানুষগুলো নানা স্বপ্ন দেখতে থাকে। উৎপাদিত কৃষিপণ্য সহজেই শহরে-বাজারে নিয়ে ন্যায্যমূল্যে বেচবে, ছেলে-মেয়েরা ভালো স্কুল-কলেজে পড়াশোনা করবে, চিকিৎসার জন্য হাসপাতলে যেতে আর কষ্ট হবে না- এমন হাজারো স্বপ্ন বুনতে থাকে তারা।  কিন্তু সেতুটি নির্মাণের চার বছরে অ্যাপ্রোচ সড়ক নির্মাণ না হওয়ায় তাদের স্বপ্ন স্বপ্নই থেকে যায়। সোয়া ৬ কোটি টাকার সেতুটি এলাকাবাসীর কোনো কাজেই আসেনি।  স্থানীয়রা জানান, যমুনার এই ক্যানেলটি পার হয়ে বেলকুচি সদর ইউনিয়নের দেলুয়া, চর দেলুয়া, মধ্য দেলুয়া, রতনকান্দি, সোহাগপুর, বড়ধুলসহ অন্তত ৮/১০ গ্রামের ৩০ হাজরেরও বেশি মানুষ চলাচল করে। বর্ষাকালে নৌকা আর পানি কমলে বাঁশের সাঁকো এবং শুকনো মৌসুমে পায়ে হেঁটে চলতে হতো। অসুস্থ রোগী, স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীরা নানা বিড়ম্বনার মধ্য দিয়ে যাতায়াত করত। এলাকার কৃষিপণ্য পরিবহনে বাড়তি সময় ও টাকা অপচয় হতো। চার বছর আগে এখানে সেতু নির্মাণের নতুন স্বপ্ন দেখে প্রান্তিক এসব মানুষগুলো। কিন্তু চার বছরেও সেতুর উভয়পাশে রাস্তা না হওয়ায় এলাকার মানুষের দুর্ভোগ আগের মতোই রয়ে গেছে। ফলে স্থানীয় জনসাধারণ চরম ক্ষুব্ধ।  স্থানীয় বাসিন্দা তাঁত শ্রমিক শাহীন আহমেদ বলেন, এই জায়াগায় সেতু ছিল না। যখন সেতুর কাজ শুরু হলো মানুষ খুব খুশি হয়েছিল। কিন্তু দেড় দুই বছর ধরে সেতু এই অবস্থায় পড়ে আছে। সেতু আছে রাস্তা নেই। এলাকায় লোকজন নাই দেখে সরকার দেখবে না তা হবে না। ঠিকাদাররা শুধু সেতু করে টাকা নিয়ে গেছে। এই এলাকায় পৌরসভা থেকে শুরু করে যমুনার ওপার থেকেও লোক এখান দিয়ে চলাচল করে। আমরা পৌরসভাকে ট্যাক্স দিচ্ছি। কিন্তু আমাদের উন্নয়ন নেই। আমাদের বের হওয়ার রাস্তাঘাট নেই। আমরা ট্যাক্স দেব কেন। এখানে সেতু অনুযায়ী রাস্তা হোক।  দেলুয়া মসজিদের মুয়াজ্জিন আব্দুর রশিদ বলেন, সড়কটা হলেই ২০/৩০ হাজার মানুষের চলাচলের সুবিধা হবে। এখানে যাদের জমি পড়েছে তাদের পয়সাপাতি দিলেই তারা অন্য জায়গায় চলে যাবে। এর জন্যই রাস্তাটি ঠেকে আছে। শিক্ষক আব্দুল আলীম বলেন, প্রথমে ঠিকাদার মাটি ফেলেছিল। সেগুলো ধুয়ে গেলে, এলাকার মানুষ আবার মাটি ফেলে পায়ে হাঁটার মতো রাস্তা তৈরি করেছে। কিন্তু সেতু দিয়ে কোনো যানবাহন চলাচল করতে পারে না। বেলকুচি স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর সূত্র জানায়, ২০২০ সালে যমুনা নদীর ক্যানেলের ওপর চরদেলুয়া সরকারি প্রাথামিক বিদ্যালয়-বক্কার প্রামাণিকের বাড়ি পর্যন্ত সেতু নির্মাণ প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়। ৬ কোটি ২৫ লাখ ৯৭ হাজার টাকা ব্যয়ে ৯৩২ মিটার চেইনেজ ৭২ মিটার দৈর্ঘ্যের আরসিসি গার্ডার সেতু নির্মাণ শুরু হয় ২০২০ সালের অক্টোবরে। সেতুটি নির্মাণের দায়িত্ব পায় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মঈনুদ্দিন বাঁশি লিমিটেড। ২০২১ সালের মার্চে এটির নির্মাণ কাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল। নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই সেতুটির মূল কাঠামো নির্মাণ হয়। তবে চার বছরেও সেতুটির অ্যাপ্রোচ সড়ক নির্মাণ হয়নি। ব্যক্তি মালিকানাধীন জমি অধিগ্রহণ না করায় অ্যাপ্রোচ সড়ক নির্মাণ করতে পারছে না এলজিইডি।   উপজেলা প্রকৌশলী মুহাম্মদ আলমগীর হোসেন বলেন, দেলুয়া সেতুটির স্ট্রাকচারাল কাজ সম্পন্ন হয়েছে। ঠিকাদার যথারীতি কাজ শুরু করার পরে আশপাশের যেসব স্থাপনা রয়েছে বা জমি রয়েছে তারা বাধা দেয়। যে কারণে কাজটি বন্ধ রয়েছে। পরে আমরা জমি অধিগ্রহণের উদ্যোগ গ্রহণ করি। জমি অধিগ্রহণের প্রক্রিয়া অনেকটা শেষের দিকে। অধিগ্রহণ শেষ হলে বাকি কাজটা ঠিকাদার করে দেবে। অ্যাপ্রোচ রোড থেকে একটি রাস্তা পরবর্তী ডিপিপিতে অন্তর্ভুক্ত করব।
Read Entire Article