কাদের আত্মহত্যার ঝুঁকি বেশি?

22 hours ago 3

প্রতিটি জীবনের মূল্য অপরিসীম, তবু বিশ্বে প্রতি বছর হাজার হাজার মানুষ নীরবে আত্মহত্যার পথ বেছে নেন। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, প্রতি বছর প্রায় ৮ লাখ মানুষ আত্মহত্যা করেন। এই ভয়াবহ বাস্তবতা মনে রেখে ১০ সেপ্টেম্বর পালিত হয় বিশ্ব আত্মহত্যা প্রতিরোধ দিবস। এ উপলক্ষে জাগো নিউজের কথা হয় প্রমিসেস মেডিকেলের কাউন্সেলিং সাইকোলজিস্ট ও সাইকোথেরাপিস্ট নুজহাত ই রহমানের সঙ্গে। তিনি আত্মহত্যা প্রতিরোধ ও মানসিক স্বাস্থ্যের গুরুত্ব নিয়ে বলেছেন। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন মামুনূর রহমান হৃদয়।

১. জাগো নিউজ: মানুষ কেন আত্মহত্যার চিন্তায় পড়ে?

নুজহাত ই রহমান: মানুষ আত্মহত্যার চিন্তায় তখনই পড়ে যখন সে গভীর হতাশা, অসহায়ত্ব বা মানসিক চাপের মধ্যে থাকে। এ ধরনের পরিস্থিতিতে মনে হয় জীবন থেকে আর কোনো আশা নেই। এর পেছনে নানান কারণ থাকতে পারে। যেমন: ডিপ্রেশন, অতিরিক্ত মানসিক চাপ, আর্থিক সমস্যা, পেশাগত চাপ, সম্পর্কের টানাপোড়েন, শৈশবের ট্রমা, লজ্জা বা অপরাধবোধ। কখনো কখনো সামাজিক বিচ্ছিন্নতা, একাকিত্ব, মাদকাসক্তি বা শারীরিক অসুস্থতাও আত্মহত্যার চিন্তার দিকে নিয়ে যেতে পারে। মূলত, যখন মানুষ নিজের জীবনের ভার বহন করতে অক্ষম মনে করে এবং অন্য কোনো উপায় দেখতে পারে না, তখন সে আত্মহত্যার কথা ভাবতে পারে।

২. জাগো নিউজ: কোন বয়স ও পেশার মানুষদের মধ্যে আত্মহত্যার ঝুঁকি বেশি দেখা যায়?

নুজহাত ই রহমান: বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে কিশোর-কিশোরী থেকে তরুণদের মধ্যে আত্মহত্যার ঝুঁকি বেশি। বিশেষ করে ১৫ থেকে ২৪ বা ৩০ বছরের মধ্যে ঝুঁকি বেশি। কারণ এই বয়সে মানসিক চাপ অনেক বেশি এবং আবেগ নিয়ন্ত্রণ কম থাকে। স্কুল বা কলেজে বুলিং, পারিবারিক অস্থিতিশীলতা, পরিবারের প্রত্যাশার চাপ, পরীক্ষার ফলাফল না পাওয়া এগুলো কিশোর-কিশোরীর আত্মহত্যার বড় কারণ। এছাড়া কর্মজীবন শুরু করা তরুণদের হতাশা, অর্থনৈতিক চাপ, প্রেম বা সামাজিক সম্পর্কের ওঠাপড়া এবং নিরাপত্তাহীন পেশাগত পরিবেশও ঝুঁকি বাড়ায়।

৩. জাগো নিউজ: কেন অনেকেই সমস্যার কথা কাউকে বলেন না?

নুজহাত ই রহমান: সমস্যার কথা বলা থেকে মানুষ বিরত থাকে মূলত সমাজের দৃষ্টিভঙ্গি বা সোশ্যাল স্টিগমা’র কারণে। তারা মনে করে, মানসিক অসুবিধা প্রকাশ করলে দুর্বল হিসেবে চিহ্নিত হবেন বা পেশাগত ও সামাজিক সুযোগ থেকে বঞ্চিত হবেন। পরিবারেও মানসিক অসুবিধা থাকা ব্যক্তিকে দুর্বল বা অযোগ্য হিসেবে দেখা হয়। এজন্য মানুষ নিজেদের সমস্যার কথা লুকিয়ে রাখে এবং প্রফেশনালের কাছে যাওয়া বারণ মনে করে।

৪. জাগো নিউজ: মানসিক অসুস্থতা নিয়ে সমাজে কোনো ভুল ধারণা আছে, যা মানুষকে সাহায্য নিতে বাধা দেয়?

নুজহাত ই রহমান: আত্মহত্যা সাধারণত একদিনের সিদ্ধান্ত নয়। আগে থেকেই কেউ মানসিক চাপের মধ্যে দিয়ে যায়। আমাদের সমাজে মানসিক অসুস্থতাকে দুর্বলতার চিহ্ন হিসেবে দেখা হয়। মানুষ ভয় পায়, প্রফেশনালের কাছে গেলে বা কাউকে জানানোর ফলে তারা দুর্বল বা অযোগ্য হিসেবে চিহ্নিত হবেন। এই ভুল ধারণা অনেককে সাহায্য নিতে বাধা দেয়।

৫. জাগো নিউজ: আত্মহত্যা প্রতিরোধে পরিবার, বন্ধু বা সমাজের ভূমিকা কী হতে পারে?

নুজহাত ই রহমান: যদি কাছের কেউ বা প্রিয়জন কোনো ইঙ্গিত দেয় যেমন হতাশাজনক কথাবার্তা, আচরণে পরিবর্তন, সামাজিকভাবে নিজেকে গুটিয়ে নেওয়া তাহলে সেটিকে উপেক্ষা করা উচিত নয়। পরিবার, বন্ধু এবং সমাজের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা হলো তাদের সহমর্মীভাবে শোনা, সমর্থন দেওয়া এবং প্রফেশনালের কাছে পৌঁছে দেওয়া। কাউকে দোষারোপ বা হেল্প-ডিসকাউন্ট করা ঠিক নয়।

৬. জাগো নিউজ: কাউন্সিলিং সাইকোলজিস্ট ও সাইকোথেরাপিস্ট হিসেবে আপনার পরামর্শ কি থাকবে?

নুজহাত ই রহমান: আমার পরামর্শ থাকবে কারোর মানসিক অসুবিধা লক্ষ্য করলে ইগনোর করা ঠিক নয়। তাদের সঙ্গে সংযুক্ত হওয়ার চেষ্টা করুন। যত তাড়াতাড়ি সম্ভব প্রফেশনালের সাহায্য নিন। আত্মহত্যার চিন্তা থাকা ব্যক্তির উদ্দেশ্য প্রায়ই মৃত্যুই নয়, তারা সাহায্য চায় কিন্তু প্রকাশ করতে পারছে না। তাই তাদের প্রতি সহমর্মী হওয়া এবং সাহায্যের হাত বাড়ানো প্রয়োজন।

৭. জাগো নিউজ: বিশ্ব আত্মহত্যা প্রতিরোধ দিবসে আপনার বার্তা কি থাকবে?

নুজহাত ই রহমান: মানসিক অসুবিধাকে উপেক্ষা করবেন না। তা শেয়ার করুন, প্রফেশনালের হেল্প নিন। মানসিক অসুবিধা বা রোগ দুর্বলতার চিহ্ন নয়। সঠিক চিকিৎসা ও সময়মতো সহায়তার মাধ্যমে মানুষ সুস্থ হতে পারে এবং আত্মহত্যা প্রতিরোধ সম্ভব।

কেএসকে/জিকেএস

Read Entire Article