কারাগারে ফুটবল খেলা, বন্দিদের কাছে কর্তৃপক্ষের হার

১৬ ডিসেম্বর, মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে নারায়ণগঞ্জ জেলা কারাগারে অনুষ্ঠিত হলো ব্যতিক্রমধর্মী ও আনন্দঘন আয়োজন। দিনটির অন্যতম আকর্ষণ ছিল কারা কর্তৃপক্ষ ও বন্দিদের মধ্যে প্রীতি ফুটবল ম্যাচ। উত্তেজনাপূর্ণ এই ম্যাচে কারা কর্তৃপক্ষের দলকে ১-০ গোলে পরাজিত করে বিজয়ের উচ্ছ্বাসে মেতে ওঠে বন্দিদের দল। কারাগারে আটক বাছাই করা বন্দিদের নিয়ে গঠিত একটি দল মুখোমুখি হয় কারা কর্তৃপক্ষের দলের। কারা কর্তৃপক্ষের পক্ষে মাঠে খেলেন জেল সুপার, জেলার, ডেপুটি জেলারসহ বিভিন্ন স্তরের কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা। ম্যাচজুড়ে দুই দলের খেলোয়াড়দের মধ্যে ছিল প্রাণবন্তু প্রতিদ্বন্দ্বিতা। দর্শকসারিতে থাকা অন্যান্য বন্দিরা করতালি ও উচ্ছ্বাসে মাঠের পরিবেশ আরও প্রাণবন্ত করে তোলে। ম্যাচের দ্বিতীয়ার্ধে হাজতি বন্দি রিয়াজ একটি সুযোগ কাজে লাগিয়ে গোল করেন। তার এই একমাত্র গোলে বন্দিদের জয় নিশ্চিত হয়। গোলের পর মাঠজুড়ে ছড়িয়ে পড়ে আনন্দ-উল্লাস। বন্দিদের অনেকেই দীর্ঘদিন পর এমন খোলামেলা আনন্দের সুযোগ পেয়ে আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন। দীর্ঘদিন ধরে কারাবন্দি থাকা বন্দিদের জন্য এই আয়োজন ছিল একেবারেই নতুন অভিজ্ঞতা। যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত কয়েদি বন্দি সুজন বলে

কারাগারে ফুটবল খেলা, বন্দিদের কাছে কর্তৃপক্ষের হার

১৬ ডিসেম্বর, মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে নারায়ণগঞ্জ জেলা কারাগারে অনুষ্ঠিত হলো ব্যতিক্রমধর্মী ও আনন্দঘন আয়োজন। দিনটির অন্যতম আকর্ষণ ছিল কারা কর্তৃপক্ষ ও বন্দিদের মধ্যে প্রীতি ফুটবল ম্যাচ। উত্তেজনাপূর্ণ এই ম্যাচে কারা কর্তৃপক্ষের দলকে ১-০ গোলে পরাজিত করে বিজয়ের উচ্ছ্বাসে মেতে ওঠে বন্দিদের দল।

কারাগারে আটক বাছাই করা বন্দিদের নিয়ে গঠিত একটি দল মুখোমুখি হয় কারা কর্তৃপক্ষের দলের। কারা কর্তৃপক্ষের পক্ষে মাঠে খেলেন জেল সুপার, জেলার, ডেপুটি জেলারসহ বিভিন্ন স্তরের কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা। ম্যাচজুড়ে দুই দলের খেলোয়াড়দের মধ্যে ছিল প্রাণবন্তু প্রতিদ্বন্দ্বিতা। দর্শকসারিতে থাকা অন্যান্য বন্দিরা করতালি ও উচ্ছ্বাসে মাঠের পরিবেশ আরও প্রাণবন্ত করে তোলে।

ম্যাচের দ্বিতীয়ার্ধে হাজতি বন্দি রিয়াজ একটি সুযোগ কাজে লাগিয়ে গোল করেন। তার এই একমাত্র গোলে বন্দিদের জয় নিশ্চিত হয়। গোলের পর মাঠজুড়ে ছড়িয়ে পড়ে আনন্দ-উল্লাস। বন্দিদের অনেকেই দীর্ঘদিন পর এমন খোলামেলা আনন্দের সুযোগ পেয়ে আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন।

দীর্ঘদিন ধরে কারাবন্দি থাকা বন্দিদের জন্য এই আয়োজন ছিল একেবারেই নতুন অভিজ্ঞতা। যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত কয়েদি বন্দি সুজন বলেন, ‘আমি প্রায় ২০ বছর ধরে কারাগারে আছি। এর আগে কখনো এমন আনন্দঘন ম্যাচ দেখিনি। আজ আমরা সত্যিই বিজয় দিবসের আনন্দ অনুভব করেছি।’

এ বিষয়ে নারায়ণগঞ্জ জেলা কারাগারের জেল সুপার ফোরকান ওয়াহিদ বলেন, ‘কারাগার এখন আর শুধু শাস্তির জায়গা নয়, এটি একটি সংশোধনাগার। খেলাধুলা ও বিনোদন বন্দিদের মানসিক বিকাশ ও ইতিবাচক পরিবর্তনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। বিজয় দিবসের মতো দিনে বন্দি ও স্টাফ একসঙ্গে মাঠে নেমে খেলাটা আমাদের পারস্পরিক সৌহার্দ্য ও মানবিক সম্পর্কেরই প্রকাশ।’

তিনি আরও বলেন, ‘বিজয় দিবস উপলক্ষে বন্দিদের জন্য ছিল বিশেষ খাবারের আয়োজন। সকালে পরিবেশন করা হয় পায়েস ও মুড়ি। দুপুরে ছিল পোলাওয়ের সঙ্গে ২১০ গ্রাম গরুর মাংস, এক পিস মুরগির রোস্ট, খাসির মাংস, সালাদ, মিষ্টি, পান-সুপারি ও কোমল পানীয়। রাতে বন্দিদের দেওয়া হয় সাদা ভাত, আলুর দম ও রুই মাছ।’

খেলাধুলার পাশাপাশি বিজয় দিবস উদযাপনকে আরও প্রাণবন্ত করতে কারাগারে আয়োজন করা হয় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের। এতে বন্দিরা দেশাত্মবোধক গান, কবিতা আবৃত্তি ও নানা পরিবেশনায় অংশ নেন। পুরো আয়োজন ঘিরে কারাগারের ভেতরে সৃষ্টি হয় উৎসবমুখর পরিবেশ।

কারা কর্তৃপক্ষের আশা, এ ধরনের মানবিক ও আনন্দঘন আয়োজন বন্দিদের মানসিক স্বাস্থ্যে ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে এবং তাদের সংশোধনের পথে আরও একধাপ এগিয়ে যেতে সহায়তা করবে।

What's Your Reaction?

like

dislike

love

funny

angry

sad

wow