জুলাই আন্দোলন চলাকালে রাজধানীর রামপুরায় ভবনের কার্নিশে ঝুলে থাকা শিক্ষার্থী আমির হোসেনকে গুলি এবং একই এলাকায় অন্য দুজনকে হত্যার ঘটনায় মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় আনুষ্ঠানিক অভিযোগ (ফরমাল চার্জ) গঠনের আদেশ আজ।
বৃহস্পতিবার (১৮ সেপ্টেম্বর) ট্রাইব্যুনাল-১ এর চেয়ারম্যান বিচারপতি গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের বিচারিক প্যানেল এ আদেশ দেবেন। ট্রাইব্যুনালের অন্য দুই সদস্য হলেন- বিচারপতি মো. শফিউল আলম মাহমুদ ও বিচারক মো. মোহিতুল হক এনাম চৌধুরী।
জুলাই আন্দোলন চলাকালে রাজধানীর রামপুরায় ভবনের কার্নিশে ঝুলে থাকা শিক্ষার্থী আমির হোসেনকে গুলি এবং একই এলাকায় অন্য দুজনকে হত্যার ঘটনায় মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় অভিযোগ গঠন বিষয়ে শুনানি শেষ হয়েছে।
এ বিষয়ে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ গঠনের আদেশের জন্য রাষ্ট্রপক্ষের সময় আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে আদেশ পিছিয়ে আজকের দিন ধার্য করেছেন আদালত।
এর আগে গত বৃহস্পতিবার (১১ সেপ্টেম্বর) এ সংক্রান্ত বিষয়ে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ (ফরমাল চার্জ) গঠনের জন্যে এ দিন ঠিক করেন।
আদালতে ওইদিন রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম। তার সাথে ছিলেন গাজী এমএইচ তামিম ও আবদুস সাত্তার পালোয়ান। অন্যদিকে পলাতক আসামিদের পক্ষে রাষ্ট্র নিযুক্ত স্টেট ডিফেন্স আইনজীবী মো. আমির হোসেন ও গ্রেফতার আসামির পক্ষে আইনজীবী সারওয়ার জাহান নিপ্পন শুনানি করেন।
প্রসিকিউশন পক্ষে চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম এই মামলায় অভিযোগ গঠনের আদেশ প্রার্থনা করেন। অন্যদিকে পলাতক আসামিদের পক্ষে রাষ্ট্র নিযুক্ত স্টেট ডিফেন্স আইনজীবী মো. আমির হোসেন ও গ্রেফতার আসামি সাবেক এএসআই চঞ্চল চন্দ্র সরকারের পক্ষে আইনজীবী সারওয়ার জাহান নিপ্পন অভিযোগ থেকে আসামীর অব্যাহতি প্রার্থনা করেন।
এর আগে রামপুরায় ভবনের কার্নিশে ঝুলে থাকা শিক্ষার্থী আমির হোসেনকে গুলি এবং একই এলাকায় অন্য দুজনকে হত্যার ঘটনায় মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় আনুষ্ঠানিক অভিযোগ গঠনের শুনানির জন্য ১১ সেপ্টেম্বর দিন ঠিক করেন ট্রাইব্যুনাল। এরই ধারাবাহিকতায় আজ শুনানি সম্পন্ন হয়।
একই সঙ্গে এ মামলায় পলাতক সাবেক ডিএমপি কমিশনার হাবিবুর রহমানসহ চার আসামির পক্ষে রাষ্ট্রীয় খরচে (স্টেট ডিফেন্স) আইনজীবী নিযুক্ত করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
এ মামলায় পলাতক সাবেক ডিএমপি কমিশনার হাবিবুর রহমানসহ ৪ আসামি হলেন- ডিএমপির খিলগাঁও জোনের সাবেক অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (এডিসি) মো. রাশেদুল ইসলাম, রামপুরা থানার সাবেক ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মশিউর রহমান ও রামপুরা থানার সাবেক উপ-পরিদর্শক (এসআই) তরিকুল ইসলাম ভূইয়া।
প্রসিকিউশনের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে গত ১ সেপ্টেম্বর ট্রাইব্যুনাল-১ এ আদেশ দেন। ট্রাইব্যুনালে ওইদিন রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন প্রসিকিউটর গাজী এমএইচ তামিম। চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম, প্রসিকিউটর মো. মিজানুল ইসলাম ও প্রসিকিউটর আব্দুস সাত্তার পালোয়ানসহ অন্যরা উপস্থিত ছিলেন।
আসামিদের মধ্যে গত ২৬ জানুয়ারি সাবেক এএসআই চঞ্চল চন্দ্র সরকারকে গ্রেফতার করে ডিএমপি পুলিশ। পরে ২৮ জানুয়ারি তাকে হাজির করলে ট্রাইব্যুনাল কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন। আজ সকালে তাকে ট্রাইব্যুনালে হাজির করা হয়েছে।
বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন চলাকালীন ২০২৪ সালের ১৯ জুলাই আমির হোসেন জুমার নামাজ পড়ে বাসায় ফিরছিলেন। বাসার কাছে তখন পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার মধ্যে পড়ে যান তিনি। এ সময় পুলিশ গুলি করা শুরু করে। আমির হোসেন দৌড়ে নির্মাণাধীন একটি ভবনের চারতলায় গিয়ে আশ্রয় নেন।
একপর্যায়ে বিক্ষোভকারীদের ধাওয়া করে পুলিশ ভবনটির চারতলায় ওঠে। সেখানে আমির হোসেনকে পেয়ে পুলিশ সদস্যরা তার দিকে আগ্নেয়াস্ত্র তাক করে বারবার নিচে লাফ দিতে বলেন। একজন পুলিশ সদস্য তাকে ভয় দেখাতে কয়েকটি গুলিও করেন।
ভয়ে আমির হোসেন লাফ দিয়ে নির্মাণাধীন ভবনটির রড ধরে ঝুলে থাকেন। তখন তৃতীয় তলা থেকে একজন পুলিশ সদস্য আমির হোসেনকে লক্ষ্য করে ছয়টি গুলি করেন। গুলিগুলো আমিরের দুই পায়ে লাগে।
পরে পুলিশ চলে গেলে আমির হোসেন ঝাঁপ দিয়ে কোনোরকমে তৃতীয় তলায় পড়েন। তখন তার দুই পা দিয়ে রক্ত ঝরছিল। প্রায় তিন ঘণ্টা পর একজন শিক্ষার্থী ও দুজন চিকিৎসক আমির হোসেনকে উদ্ধার করে স্থানীয় একটি হাসপাতালে নিয়ে যান। পরে সেখান থেকে তাকে নেওয়া হয় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। এ ঘটনায় ভাগ্যক্রমে বেঁচে যান আমির হোসেন।
এছাড়া রামপুরায় একই দিন ঘটনাস্থলের সামনে আরও দুজনকে নির্মমভাবে গুলি করে হত্যার অভিযোগ রয়েছে।
এফএইচ/এমআরএম/জিকেএস