কার্যালয়ে তালা দেখে ফিরে গেলেন আটাব প্রশাসক

1 month ago 13

ট্র্যাভেল এজেন্টদের শীর্ষ সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন অব ট্র্যাভেল এজেন্টস অব বাংলাদেশের (আটাব) কার্যালয়ে তালা ঝুলিয়ে দিয়েছে বিলুপ্ত হওয়া কমিটি।

বুধবার (৬ আগস্ট) সরকার নিযুক্ত প্রশাসক আটাব কার্যালয়ে দায়িত্ব নিতে গেলেও তালাবদ্ধ অফিস দেখে তিনি ফিরে যান।

এর আগে গত সোমবার অনিয়ম, দুর্নীতি ও অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে আবদুস সালাম আরেফ ও আফসিয়া জান্নাত সালেহ নেতৃত্বাধীন কমিটি বাতিল করে সেখানে প্রশাসক বসায় সরকার। 

এদিকে আটাব কার্যালয় তালাবদ্ধ করে ‘পালিয়ে যাওয়ার’ অভিযোগ তুলে বিলুপ্ত কমিটির নেতাদের বিচারের দাবিতে গতকাল বিক্ষোভ ও মানববন্ধন করেছে শত শত ট্রাভেল এজেন্ট। রাজধানীর নয়াপল্টনে সংগঠনটির কার্যালয়ের সামনে ওই মানববন্ধন হয়। মানববন্ধনে ট্রাভেল এজেন্টরা অভিযোগ তুলেন, আটাবের বিলুপ্ত হওয়া সভাপতি ও মহাসচিব লুটপাট করে সংগঠনে তালা দিয়ে পালিয়েছেন।   

সম্প্রতি অনলাইনে এয়ার টিকিট বিক্রির প্রতিষ্ঠান ফ্লাইট এক্সপার্টের এমডি সালমান বিন রশিদ শাহ সায়েম ও তার বাবা এম এ রশিদ শাহ সম্রাট গ্রাহকের শত শত কোটি টাকা আত্মসাৎ করে পালিয়ে যান। তাদের মধ্যে সম্রাট আটাবের উপদেষ্টা ও সায়েম সংগঠনটির অনলাইন টিকিট বিক্রি সংক্রান্ত স্টান্ডিং কমিটির চেয়ারম্যান ছিলেন। প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে তাদের পালিয়ে যাওয়ার খবরে আলোচনায় আসে আটাব। সংগঠনটির সাধারণ সদস্যরা অভিযোগ তুলেন সভাপতি আরেফ ও মহাসচিব আফসিয়ার সহযোগীতায় বাপ-ছেলে অনলানে টিকিট বিক্রির নামে শত শত কোটি টাকা হাতিয়ে পালাতে পেরেছে। এমন আলোচনার মধ্যেই আটাব কমিটি বিলুপ্ত করে সেখানে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের উপসচিব মোতাকাব্বীর আহমেদকে প্রশাসক হিসেবে নিয়োগ দেয় সরকার। 

ট্রাভেল ব্যবসায়ীরা জানান, গতকাল বুধবার সকালে উপসচিব মোতাকাব্বীর আহমেদ প্রশাসকের দায়িত্ব নিতে নয়াপল্টনে আটাবের প্রধান কার্যালয়ে যান। তবে কার্যালয়টি তালাবদ্ধ দেখতে পেয়ে তিনি ফিরে যান।

আটাব প্রশাসক মোতাকাব্বীর আহমেদ কার্যালয় তালাবদ্ধ দেখে ক্ষোভ প্রকাশ করেন। তিনি ঘটনাটি অনাকাঙ্খিত বলে উল্লেখ করে বলেন, যারা কার্যালয় তালাবদ্ধ করেছে তাদের বিরুদ্ধে প্রশাসনিকভাবে ব্যবস্থা নেয়া হবে। 

এদিকে গতকাল মানববন্ধন করে সাধারণ ট্র্যাভেল ব্যবসায়িরা আটাবে প্রশাসক নিয়োগ দেওয়ায় সরকারকে ধন্যবাদ জানান। 
মানববন্ধনে ট্রাভেল এজেন্ট মালিকরা বলেন, আটাব সভাপতি আরেফ ও মহাসচিব আসফিয়া দীর্ঘদিন ধরে অবৈধ ভোট, আর্থিক জালিয়াতি ও রাজনৈতিক শক্তির অপব্যবহার করে সংগঠনটিকে ‘ব্যক্তি ও দলীয় স্বার্থে’ পরিচালনা করে আসছিলেন। তারা পতিত স্বৈরাচারী সরকারের ক্ষমতাবানদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক তৈরি করে সাধারণ ট্রাভেল এজেন্সিগুলোর ওপর দমনপীড়ন চালিয়েছেন।

ট্রাভেল এজেন্সির মালিক ইকরামুল হক অভিযোগ করেন, অনলাইন টিকিট ও হোটেল বুকিং প্রতিষ্ঠান ফ্লাইট এক্সপার্ট প্রায় ৩০০ কোটি টাকা আত্মসাৎ করে হঠাৎ কার্যক্রম বন্ধ করে দেয়। এই কোম্পানির সঙ্গে আটাব সভাপতি ও মহাসচিব প্রত্যক্ষভাবে জড়িত ছিলেন।

তিনি আরও বলেন, পোর্টাল খোলার নামে লাখ লাখ টাকা তুলে আত্মসাৎ করা হয়েছে। আবার কৃত্রিম সংকট তৈরি করে বিমানের টিকিটের দাম এক লাখ পাঁচ হাজার টাকায় পৌঁছে দেওয়া হয়েছে। অথচ প্রকৃত ট্রাভেল এজেন্সিগুলো এই সিন্ডিকেটের জোরে ব্যবসা গুটিয়ে নিতে বাধ্য হয়েছে।

আটাবের সাবেক একজন নেতা মো. বাহার আলম মজুমদার বলেন, সভাপতি আরিফ, মহাসচিব আসফিয়া ও উপদেষ্টা শাহ সম্রাট একটি শক্তিশালী সিন্ডিকেট করে বিমানের টিকিট জালিয়াতির মাধ্যমে কোটি কোটি টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জন করেছেন। হজ ও ওমরার মতো ধর্মীয় সফরেও সাধারণ মানুষ এই সিন্ডিকেটের কাঝে জিম্মি ছিল। 
ট্রাভেল ব্যবসায়ী টিপু মুন্সি বলেন, আটাব নেতারা প্রতি মাসে প্রায় ৩ কোটি এবং বছরে প্রায় ৩৩ কোটি টাকা চাঁদা বাবদ আদায় করেছে। কিন্তু এই অর্থের কোনো হিসাব নেই। 

মানববন্ধনে উপস্থিত ছিলেন ট্রাভেল ব্যবসায়ী শফিকুল ইসলাম, সবুজ মুন্সি, জুম্মন চৌধুরী, আমিনুল ইসলাম রতনসহ শতাধিক ট্রাভেল এজেন্সির মালিক।

Read Entire Article