কালবেলার অনুসন্ধানে ধরা হানিট্র্যাপ চক্র, আটক ২

বরিশাল নগরীতে হানিট্র্যাপ চক্রের ১৬ সদস্যের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। মামলায় আটক দুজনসহ ১১ জনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। অজ্ঞাত আসামি করা হয়েছে আরও ৫ জনকে। ভুক্তভোগী বরিশাল নগরীর ধান গবেষণা এলাকার যুবক মামলাটি করেন। ওই মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে রোববার (৬ ডিসেম্বর) সকালে আটক দুজনকে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।  বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশের কোতোয়ালি মডেল থানার সহকারী পুলিশ সুপার অলক কান্তি শর্মা কালবেলাকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। এর আগে শনিবার বিকেলে কালবেলার অনুসন্ধানী টিমের সহযোগিতায় নগরীর নিউ ভাটিখানা সড়ক এলাকা থেকে আটক করা হয় হানিট্রাপ চক্রের সদস্য নগরীর কাউনিয়া এলাকার ভাড়াটিয়া বাসিন্দা ও উজিরপুরের সাতলা ইউনিয়নের নয়াকান্দি গ্রামের পাখি আক্তার নিশি (২৬) ও নিউ ভাটিখানা এলাকার ভাড়াটিয়া বাসিন্দা, ভুয়া সাংবাদিক রিমন হাওলাদারকে (২০)। মামলার অন্য আসামিরা হলেন— হানিট্রাপ চক্রের সদস্য সামিয়া (২৫), বৃষ্টি ওরফে তানহা (১৯), কমলা (২২), মো. আমান (২৬), মো. ফাহিম (২৪), শাহিন ওরফে দালাল শাহিন (৩৪), সাদ্দাম (৩২), কথিত সাংবাদিক রিশাদ (২৮) ও সাজিদ (৩০)। এর আগে বরিশাল নগরীতে সম্প্রতি বেশ কয়েকটি হানিট্র

কালবেলার অনুসন্ধানে ধরা হানিট্র্যাপ চক্র, আটক ২

বরিশাল নগরীতে হানিট্র্যাপ চক্রের ১৬ সদস্যের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। মামলায় আটক দুজনসহ ১১ জনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। অজ্ঞাত আসামি করা হয়েছে আরও ৫ জনকে। ভুক্তভোগী বরিশাল নগরীর ধান গবেষণা এলাকার যুবক মামলাটি করেন।

ওই মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে রোববার (৬ ডিসেম্বর) সকালে আটক দুজনকে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। 

বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশের কোতোয়ালি মডেল থানার সহকারী পুলিশ সুপার অলক কান্তি শর্মা কালবেলাকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

এর আগে শনিবার বিকেলে কালবেলার অনুসন্ধানী টিমের সহযোগিতায় নগরীর নিউ ভাটিখানা সড়ক এলাকা থেকে আটক করা হয় হানিট্রাপ চক্রের সদস্য নগরীর কাউনিয়া এলাকার ভাড়াটিয়া বাসিন্দা ও উজিরপুরের সাতলা ইউনিয়নের নয়াকান্দি গ্রামের পাখি আক্তার নিশি (২৬) ও নিউ ভাটিখানা এলাকার ভাড়াটিয়া বাসিন্দা, ভুয়া সাংবাদিক রিমন হাওলাদারকে (২০)।

মামলার অন্য আসামিরা হলেন— হানিট্রাপ চক্রের সদস্য সামিয়া (২৫), বৃষ্টি ওরফে তানহা (১৯), কমলা (২২), মো. আমান (২৬), মো. ফাহিম (২৪), শাহিন ওরফে দালাল শাহিন (৩৪), সাদ্দাম (৩২), কথিত সাংবাদিক রিশাদ (২৮) ও সাজিদ (৩০)।

এর আগে বরিশাল নগরীতে সম্প্রতি বেশ কয়েকটি হানিট্র্যাপিংয়ের ঘটনা ঘটে। তাদেরই মধ্যে একজন নগরীর ২৪ নম্বর ওয়ার্ডের ভাড়াটিয়া বাসিন্দা নাঈম। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তাকে প্রেমের ফাঁদে ফেলে হানিট্র্যাপ চক্রটি।

পরে গত ২১ অক্টোবর তাকে বরিশাল নগরীর হাতেম আলী কলেজ চৌমাথা এলাকায় ঈদগাহ লেনের একটি বাসায় নিয়ে যায় চক্রের নারী সদস্যরা। সেখানে অবৈধ সম্পর্কের অভিযোগ তুলে তাকে জিম্মি করে। এক পর্যায়ে রিশাদ এবং সাজিদ নামের দুজন বুম হাতে নিজেদের সাংবাদিক পরিচয় দিয়ে মোবাইল ফোনে ভিডিও ধারণ করে। পরে নাঈমের কাছ থেকে নগদ ৫৩ হাজার টাকা এবং দেড় লাখ টাকা মূল্যের মোবাইল সেট হাতিয়ে নেয় চক্রটি।

এ ঘটনার পর হানিট্র্যাপের শিকার ওই যুবক স্মরণাপন্ন হয় দৈনিক কালবেলা প্রতিবেদকের। এরপর হানিট্র্যাপ চক্রের বিরুদ্ধে শুরু হয় কালবেলা টিমের অনুসন্ধান। নিজে থেকেই চক্রের ফাঁদে জড়ান কালবেলা বরিশাল অফিসের এক কর্মী। নিজেকে পটুয়াখালীর একজন প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ী পরিচয়ে চক্রের সঙ্গে যোগাযোগ করেন তিনি। একপর্যায় তাকে প্রেমের প্রস্তাব দেন চক্রের নারী সদস্য। এমনকি হঠাৎ করেই শনিবার দুপুর ২টায় তাকে নিয়ে রুম ডেটের প্রস্তাব দিয়ে বরিশালে আসতে বলে চক্রের সদস্যরা।

চক্রের দেওয়া ঠিকানা অনুযায়ী কালবেলার সহকর্মীকে শনিবার দুপুর ২টার দিকে বরিশাল নগরীর নবগ্রাম রোড এলাকায় আসতে বলা হয়। তবে দুপুর ২টা বাজার কিছু সময়ের মধ্যেই জায়গা বদলে নেয় চক্রের সদস্যরা। দেখা করতে বলা হয় নগরীর নাজিরের পুল এলাকায়। সেই অনুযায়ী প্রস্তুতি নেয় কালবেলা টিম।

পরে নাজির মহল্লা এলাকা থেকে কালবেলার সহকর্মীকে রিকশায় তুলে অজ্ঞাত স্থানে রওয়ানা হয় চক্রের মাস্ক পরা নারী সদস্য। নিউ ভাটিখানা এলাকায় রুনা ও রানার মালিকানাধীন টিনশেডের ঘরে নেওয়া হয়। সেখানে কয়েকজন তরুণী এবং যুবক জিম্মি করে তাকে। তবে অনুসন্ধানী টিম কাছাকাছি পৌঁছানো মাত্রই বিষয়টি টের পেয়ে কেটে পড়ে চক্রের সদস্যরা।

কিন্তু ধরা পড়ে যায় নারী সদস্য পাখি আক্তার নিশি। তাৎক্ষণিক ঘটনাস্থলে হাজির হয় কোতোয়ালি মডেল থানা পুলিশের টিম। এসময় ঘটনাস্থল থেকে হানিট্র্যাপ চক্রের ওই নারী সদস্য এবং একটি মোটরসাইকেলসহ ভুয়া সাংবাদিক রিমনকে আটক করে থানায় নিয়ে যান তারা। রোববার গভীর রাতে এই ঘটনায় মামলা করেন হানিট্র্যাপের শিকার যুবক নাঈম।

এদিকে, দুজনকে আটকের পর জিজ্ঞাসাবাদে বেরিয়ে আসে হানিট্র্যাপ চক্রের চাঞ্চল্যকর তথ্য। আটক নিশি জানান, তার চক্রের মূল হোতা ‘নীলা পাখি’ নামের এক তরুণী। যিনি ছদ্মনামে চলেন। তার সঙ্গে রয়েছে বৃষ্টি ওরফে তানহা এবং সামিয়া নামের তরুণী।

নিশি জানায়, হানিট্র্যাপ চক্রের কাজ হচ্ছে টাকাওয়ালা, বিবাহিত এবং অবিবাহিত যুবকদের ফেসবুকের মাধ্যমে প্রেমের ফাঁদে ফেলে সুবিধামতো জায়গায় নিয়ে আসা। আর এই কাজটি করেন নীলা পাখি এবং বৃষ্টি। পরে অন্য মেয়েদের সাথে রুমে পাঠিয়ে চক্রের অন্য সদস্যদের খবর দেওয়া হয়। ওইসব ব্যক্তি বা যুবকদের ফাঁদে ফেলার মূল কাজটি করে থাকে সাংবাদিক পরিচয়ধারীরা।

তারা নিজেদের সাংবাদিক পরিচয় দিয়ে বুম নিয়ে মোবাইল ক্যামেরায় ভিডিও ধারণ করে চাহিদা অনুযায়ী মোটা অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নেন। টাকা লেনদেনও করেন ভুয়া সাংবাদিকরা। গত ছয় মাসে চক্রটি অন্তত ২০ জনকে ফাঁদে ফেলেছেন বলে দাবি স্বীকার করেন নিশি। এমনকি কালবেলার স্মরণাপন্ন হওয়া যুবককে ফাঁদে ফেলে ৫২ হাজার টাকা হাতিয়ে নেওয়ার কথাও স্বীকার করে নিশি বলেন, শনিবার বিকেলে যাকে নিয়ে ঘটনা তার সাথে যোগাযোগ করেছিল সৃষ্টি। বৃষ্টিই আমাকে ওই যুবকের মোবাইল নম্বর দিয়ে কাজ করতে বলে।

নিশি জানায়, পূর্বে চার হাজার টাকা বেতনে একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করত সে। সেখান থেকে বৃষ্টির মাধ্যমে এই চক্রে ভেড়েন তিনি। তাকে চক্রের কার্যক্রম শিখিয়ে দেয় অপর সদস্য সামিয়া। অভাবে পড়ে তিনি এই পেশায় জড়িয়েছেন। যাদের ফাঁদে ফেলা হয় তারা লোকলজ্জা এবং সংসারের ভয়ে কাউকে কিছু বলতে পারে না। তাই প্রতারণার এমন কৌশল বেছে নিয়েছেন তারা।

পুলিশের একটি দায়িত্বশীল সূত্র জানিয়েছে, আগেও হানিট্র্যাপ চক্রের আরও দুই নারী সদস্যকে আটক করে পুলিশ। সম্প্রতি ভাড়ায় চালিত মোটরসাইকেল চালকের রহস্যজনক মৃত্যুর ঘটনাকে কেন্দ্র তাদের আটক করা হয়। ওই ঘটনায় মামলা হয়েছে। চক্রের অন্য সদস্যদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে বলে জানিয়েছেন সহকারী পুলিশ কমিশনার অলক কান্তি শর্মা।

What's Your Reaction?

like

dislike

love

funny

angry

sad

wow