কালো টাকা সাদা করতে ৫০ শতাংশ করের বিধান চান জিএম কাদের

3 months ago 29

কালো টাকা সাদা করার সুযোগ দিতে হলে কমপক্ষে ৫০ শতাংশ কর দেওয়ার বিধান রাখার প্রস্তাব করেছেন জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান ও বিরোধীদলীয় নেতা গোলাম মোহাম্মদ (জিএম) কাদের।

শনিবার (২৯ জুন) জাতীয় সংসদের অধিবেশনে ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটের ওপর সাধারণ আলোচনায় অংশ নিয়ে তিনি এসব কথা বলেন। স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী অধিবেশনে সভাপতিত্ব করেন।

জিএম কাদের বলেন, প্রস্তাবিত ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেট গতানুগতিক। ধারাবাহিকতা বজায় রেখে বর্তমান প্রস্তাবিত বাজেট উপস্থাপন করা হয়েছে। কিন্তু এ বছরের অর্থনৈতিক পরিস্থিতি অনেক বেশি সংকটময় বলা যায়। সারা বিশ্বে কম-বেশি অর্থনৈতিক মন্দা চলছে, যা থেকে প্রায় দেশই উত্তরণের পথে। কিন্তু আমাদের আরও অবনতি হচ্ছে। সে পরিপ্রেক্ষিতে আমাদের দেশের চরম অর্থনৈতিক দুর্দশা আমলে নিয়ে সে অনুযায়ী কোনো দিকনির্দেশনা বা উদ্দ্যোগ এ বাজেটে লক্ষ্য করা যায় না। তবে সবগুলো না হলেও কিছু কিছু সমস্যা বাজেটে চিহ্নিত করার প্রয়াস লক্ষ্য করা গেছে। কিন্তু বাজেট প্রণয়নে বরাদ্দ , রাজস্ব আহরণে যে কর প্রস্তাব করা হয়েছে তাতে করে চিহ্নিত সমস্যাগুলো সমাধানের পরিবর্তে অনেক ক্ষেত্রেই সমস্যা বাড়াবে।

তিনি বলেন, বাজেট ঘাটতি মেটাতে বৈদেশিক ঋণ নেওয়ার প্রস্তাব করা হয়েছে এক লাখ ২৭ হাজার ২০০ কোটি টাকা (১০ দশমিক ৮৩ বিলিয়ন ডলার)। ভবিষ্যৎ প্রজন্মের ঘাড়ে এটি এক বড় বোঝা। সামষ্টিক অর্থনীতিকে স্থিতিশীল করার ক্ষেত্রে এটা বাধা সৃষ্টি করবে।

প্রস্তাবিত বাজেটকে ব্যাংক ঋণনির্ভর উল্লেখ করে জিএম কাদের বলেন, ব্যাংক খাতের যে খারাপ অবস্থা তার প্রধান কারণ খেলাপিঋণ। এ বিষয়ে অতিসম্প্রতি প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী ব্যাংক ঋণখেলাপি হওয়ার আগের ধাপ ওভারভিউ বা মেয়াদোত্তীর্ণ ২০২৪ সালের মার্চে ৪ লাখ ৩৯ হাজার ৬৮৭ কোটি টাকা ছাড়িয়ে যায়।

কালো টাকা সাদা করা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, বড় বড় ব্যবসায়ী যারা বিপুল অংকের আয়কর ফাঁকি দেন, তারা ভুল করে কর ঠিকমতো দেননি- এটা সম্পূর্ণ ভুল। ভুল করে যারা আয়কর দেন না তার ধরা পড়েন ও খেসারত দেন। আর যারা ইচ্ছা করে আয়কর ফাঁকি দেন তারা হিসাব করেই তা করেন ও সে জন্যই তারা ধরা পড়েন না। সমস্যা হলো, স্বাভাবিকভাবে বৈধ আয়ের ওপর করের হার বিভিন্ন স্তরে ভিন্নতর করলেও সর্বোচ্চ ৩০ শতাংশ, সেখানে অবৈধ আয়ের ওপর ১৫ শতাংশ কর দিলেই বৈধ হওয়ার বিধান যেমন অনৈতিক, তেমন যুক্তিসঙ্গত নয়।

বাজেটে কালো টাকা সাদা করার সুযোগ খুব বেশি অংকের রাজস্ব আসে না দাবি করে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান বলেন, কালো টাকা সাদা করার এ সুযোগ তেমন কেউ গ্রহণ করবে না। এমন ধারণা বেশিরভাগ বিশেষজ্ঞের হলেও এবার কিছুটা ব্যতিক্রম হতে পারে। এবারের আইনে অন্যবারের চেয়ে ব্যাপক দায়মুক্তি দিয়ে সব ধরনের আইনের আওতামুক্ত করা হয়েছে অবৈধ আয়কে। ১৫ শতাংশ কর পরিশোধ করলে কোনো কর্তৃপক্ষ কোনো প্রকারের প্রশ্ন উত্থাপন করতে পারবে না। এ ধরনের ঢালাওভাবে অবৈধ কাজকে দায়মুক্তি দিয়ে আইনসিদ্ধ আগে কখনো করা হয়নি।

আরেক কারণ হিসেবে জিএম কাদের বলেন, দ্বিতীয় কারণ হলো আগে অসৎ ব্যক্তিরা সরকার পরিবর্তনের ভয়ে নিজেদের দুর্নীতির খবর প্রকাশ করতে সাহস করতো না। পরবর্তী সরকার আসলে সমস্যা হতে পারে এ আশঙ্কা ছিল। তবে এখন সরকারি দল (আওয়ামী লীগ) ও তাদের পছন্দের মানুষেরা জয়লাভ করে সরকার গঠন করে চলেছে। ফলে সরকার পরিবর্তনের কোনো আশঙ্কা দেখা যাচ্ছে না। তবে সাধারণত কালো টাকার মালিকরা অবৈধ অর্থের মুনাফা চান না, তারা তাদের অর্থের নিরাপত্তা চান। এভাবে দায়মুক্তি দিলে দুর্নীতি উৎসাহিত হবে। এর মাধ্যমে দুর্নীতির যে দুষ্ট চক্র সৃষ্টি হবে তা থেকে ভবিষ্যতে উদ্ধার পাওয়া কঠিন হবে। এভাবে চলতে থাকলে অর্থনৈতিক শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনা যাবে না। ফলে, অর্থনীতিতে যে বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি বিদ্যমান সেটা দীর্ঘস্থায়ী হবে বলা যায়।

এসময় তিনি কালো টাকা বৈধ বা সাদা করার সুযোগ না দেওয়ার প্রস্তাব করেন। যদি সুযোগ দেওয়া হয় তো অন্তত ৫০ শতাংশ কর দিয়ে অবৈধ অর্থ বৈধ করার বিধান রাখার প্রস্তাব করেন তিনি।

আইএইচআর/কেএসআর/জেআইএম

Read Entire Article