কিডনির রোগ নিয়ে ১৭ ভুল ধারণা, সত্যতা জেনে নিন এখনই
কিডনি আমাদের শরীরের নীরব কর্মী। আমরা যখন ব্যস্ত জীবনে ছুটে চলি, তখন অবিরাম ছাঁকনির মতো কাজ করে শরীরের দূষিত উপাদান বের করে দেয় এই অঙ্গযুগল। কিন্তু কিডনির রোগ নিয়ে মানুষের মধ্যে রয়েছে অসংখ্য ভুল ধারণা। কেউ মনে করেন কিডনির রোগ মানেই মৃত্যুঘণ্টা, কেউ ভাবেন ফোলাভাব মানেই ‘শেষ’, আবার কেউ ধারণা করেন ডায়ালিসিস শুরু হলেই আর পথ নেই। এসব ভুল বিশ্বাসের কারণে অনেক রোগী চিকিৎসা নিতে দেরি করেন, আবার কেউ কেউ হঠাৎ করে ওষুধ বন্ধ করে বিপদ ডেকে আনেন। চিকিৎসকরা বলছেন, কিডনির অধিকাংশ রোগই সময়মতো ধরা পড়লে নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব, এমনকি অ্যাকিউট কিডনি ফেলিওরের ক্ষেত্রে অনেক সময় কয়েক দফা ডায়ালিসিসের পরই কিডনি আবার সুস্থভাবে কাজ শুরু করে। কিডনি রোগ নিয়ে মানুষের এই ভুল ধারণাগুলো দূর করতে এবং সঠিক তথ্য তুলে ধরতে কিডনি এডুকেশন একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। প্রতিবেদনে ১৭টি ভুল ধারণার কথা জানিয়েছে তারা। চলুন তাহলে জেনে নিই, কোন কোন ভুল ধারণায় ডুবে আছি আমরা— ১. ভুল ধারণা : কিডনির সব রোগই খুব ভয়ঙ্কর। বাস্তব সত্য : না, কিডনির সব রোগই খুব ভয়ঙ্কর নয়। ঠিক সময়ে নির্ণয় এবং চিকিৎসার দ্বারা বেশিরভাগ রোগই ঠিক হয়ে যায়।
কিডনি আমাদের শরীরের নীরব কর্মী। আমরা যখন ব্যস্ত জীবনে ছুটে চলি, তখন অবিরাম ছাঁকনির মতো কাজ করে শরীরের দূষিত উপাদান বের করে দেয় এই অঙ্গযুগল। কিন্তু কিডনির রোগ নিয়ে মানুষের মধ্যে রয়েছে অসংখ্য ভুল ধারণা।
কেউ মনে করেন কিডনির রোগ মানেই মৃত্যুঘণ্টা, কেউ ভাবেন ফোলাভাব মানেই ‘শেষ’, আবার কেউ ধারণা করেন ডায়ালিসিস শুরু হলেই আর পথ নেই। এসব ভুল বিশ্বাসের কারণে অনেক রোগী চিকিৎসা নিতে দেরি করেন, আবার কেউ কেউ হঠাৎ করে ওষুধ বন্ধ করে বিপদ ডেকে আনেন।
চিকিৎসকরা বলছেন, কিডনির অধিকাংশ রোগই সময়মতো ধরা পড়লে নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব, এমনকি অ্যাকিউট কিডনি ফেলিওরের ক্ষেত্রে অনেক সময় কয়েক দফা ডায়ালিসিসের পরই কিডনি আবার সুস্থভাবে কাজ শুরু করে।
কিডনি রোগ নিয়ে মানুষের এই ভুল ধারণাগুলো দূর করতে এবং সঠিক তথ্য তুলে ধরতে কিডনি এডুকেশন একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। প্রতিবেদনে ১৭টি ভুল ধারণার কথা জানিয়েছে তারা। চলুন তাহলে জেনে নিই, কোন কোন ভুল ধারণায় ডুবে আছি আমরা—
১. ভুল ধারণা : কিডনির সব রোগই খুব ভয়ঙ্কর।
বাস্তব সত্য : না, কিডনির সব রোগই খুব ভয়ঙ্কর নয়। ঠিক সময়ে নির্ণয় এবং চিকিৎসার দ্বারা বেশিরভাগ রোগই ঠিক হয়ে যায়।
২. ভুল ধারণা : কিডনি ফেলিওর হলে শুধু একটি কিডনিই খারাপ হয়।
বাস্তব সত্য : না, দুটি কিডনিই একসাথে খারাপ হয়। সাধারণত যখন কোনও মানুষের একটি কিডনি খারাপ হয়, তখনো রোগীর কোনো অসুবিধা হয় না। রক্তে ক্রিয়েটিনিন এবং ইউরিয়ার মাত্রাতে কোনো পরিবর্তন হয় না। যখন দুটি কিডনিই খারাপ হয়ে যায় তখন শরীরের অনাবশ্যক বর্জ্য পদার্থ যা কিডনির দ্বারা শরীর থেকে নিষ্কাশিত হয়, শরীর থেকে বের হয় না। যার ফলে রক্তে ক্রিয়েটিনিন এবং ইউরিয়ার মাত্রা বেড়ে যায়। রক্ত পরীক্ষাতে বর্ধিত ইউরিয়া এবং ক্রিয়েটিনিনের মাত্রা কিডনি ফেলিওরের নিদর্শন। একটি কিডনিতে টিউমার, পাথর, infection বা একটা Ureter-এ obstruction একটি কিডনির খারাপ হওয়ার কারণ হতে পারে। তখন সেই কিডনিতে ব্যথা হতে পারে। এইক্ষেত্রে অন্য কিডনি ঠিক থাকলে, রক্তে ইউরিয়া, ক্রিয়েটিনিনের মাত্রা বাড়বে না।
৩. ভুল ধারণা : কিডনির যে কোনো রোগে শরীরের ফোলাভাব কিডনি ফেলিওরের সংকেত দেয়।
বাস্তব সত্য : না, কিডনির অনেক রোগে কিডনির কার্যপ্রণালি সম্পূর্ণ স্বাভাবিক হওয়া সত্ত্বেও শরীরে ফোলাভাব লক্ষ করা যায়। উদাহরস্বরূপ বলা যায়, নেফ্রোটিক সিনড্রোম।
৪. ভুল ধারণা : কিডনি ফেলিওরে সব রোগীরই শরীরে ফোলাভাব দেখা যায়।
বাস্তব সত্য : না, বেশ কিছু রোগীর ক্ষেত্রে দুটি কিডনি খারাপ হওয়ার পরও রোগীর ডায়ালিসিস করানো সত্ত্বেও ফোলাভাব লক্ষ করা যায় না। সারাংশ হলো এই যে, কিডনি ফেলিওরের অধিকাংশ রোগীদের ক্ষেত্রেই ফোলাভাব লক্ষ করা যায়, কিন্তু সব রোগীর ক্ষেত্রে নয়।
৫. ভুল ধারণা : এখন আমার কিডনি ঠিক আছে সুতরাং এখন আর ওষুধ খাওয়ার দরকার নেই।
বাস্তব সত্য : ক্রনিক কিডনি ফেলিওরের কিছু রোগীদের ক্ষেত্রে চিকিৎসার পরে রোগের লক্ষণ সাময়িকভাবে কম হয়। এর ফলে কিছু রোগী রোগহীন হবার ভ্রম করে ফেলে এবং ওষুধ খাওয়া বন্ধ করে দেয়, যার ফল ভবিষ্যতে খারাপ হয়। ওষুধ আর নিয়ন্ত্রণের অভাবে কিডনি তাড়াতাড়ি খারাপ হতে শুরু করে এবং খুব তাড়াতাড়ি ডায়ালিসিস-এর সাহায্য নেবার পরিস্থিতি সৃষ্টি হতে পারে।
৬. ভুল ধারণা : রক্তে ক্রিয়েটিনিনের মাত্রা একটু বেশি আছে, কিন্তু শরীর ঠিক আছে, সুতরাং চিন্তা করার বা চিকিৎসা করানোর দরকার নেই।
বাস্তব সত্য : এটা খুবই ভুল ধারণা। ক্রনিক কিডনি ফেলিওরের রোগীদের শরীরে ক্রিয়েটিনিনের মাত্রা অল্পসল্প তখনই বাড়ে, যখন কিডনিযুগলের কার্যক্ষমতা ৬০ শতাংশ বা তার বেশি কমে যায়। এমতাবস্থায় লক্ষণের অভাবে বেশ কিছু রোগী চিকিৎসা বা ওষুধ সেবনের ওপর গুরুত্ব দেন না। কিন্তু এই অবস্থাতেই ওষুধ এবং চিকিৎসার দ্বারা সর্বাধিক লাভ হয়। এইরকম সময়ই নেফ্রোলজিস্ট দ্বারা দেওয়া ওষুধ দীর্ঘদিন পর্যন্ত কিডনিকে কর্মক্ষম রাখতে সাহায্য করে।
৭. ভুল ধারণা : একবার ডায়ালিসিস করালে বারবার ডায়ালিসিস করাতে হয়।
বাস্তব সত্য : না, অ্যাকিউট কিডনি ফেলিওরের রোগীদের ক্ষেত্রে কয়েকবার ডায়ালিসিস করানোর পর কিডনি পুনরায় ঠিকঠাক কাজ করতে শুরু করে এবং আর ডায়ালিসিস করানোর দরকার হয় না। ভুল ধারণার বশবর্তী হয়ে ডায়ালিসিসে দেরি করলে রোগীর মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে। ডায়ালিসিস দ্বারা শুধু ক্রিয়েটিনিন, ইউরিয়া ইত্যাদি দূষিত পদার্থ পরিষ্কার করা হয়। কিডনি ফেলিওর ওষুধ বা অন্যান্য পদ্ধতিতে ঠিক করা যেতে পারে। কিন্তু ক্রনিক কিডনি ফেলিওরের অন্তিম পর্যায়ে শরীর সুস্থ রাখার জন্য নিয়মিত ডায়ালিসিস অনিবার্য। কতবার ডায়ালিসিস করানো দরকার তা কিডনি ফেলিওরের প্রকারের ওপর নির্ভর করে।
৮. ভুল ধারণা : কিডনি প্রতিস্থাপনের সময় স্ত্রী এবং স্বামী একজন অন্যজনের কিডনি নিতে পারে না।
বাস্তব সত্য : না, প্রতিস্থাপনের সময় স্ত্রী ও স্বামী একজন অন্যজনকে কিডনি দান করতে পারে।
৯. ভুল ধারণা : কিডনি দান করলে শরীর এবং যৌনজীবনের ওপর খারাপ প্রভাব পড়ে।
বাস্তব সত্য : না, একটি কিডনি নিয়ে মানুষ সুস্থ স্বাভাবিকভাবে বাঁচতে পারে এবং শরীর বা যৌনজীবনের ওপরে কোনো প্রভাব পড়ে না।
১০. ভুল ধারণা : কিডনি প্রতিস্থাপনের জন্য কিডনি কেনা যেতে পারে।
বাস্তব সত্য : আইনত কিডনি কেনা বা বেচা দুটিই দণ্ডনীয় অপরাধ, যার জন্য জেল এবং জরিমানাও হতে পারে।
১১. ভুল ধারণা : কিডনি শুধু পুরুষদেরই থাকে এবং তা দুটি পায়ের সংযোগস্থলে অবস্থিত চামড়ার থলির মধ্যে থাকে।
বাস্তব সত্য : পুরুষ এবং স্ত্রীর ক্ষেত্রে কিডনির অবস্থান এবং আকার সমান হয়, যা পিঠের দিকে মেরুদণ্ডের দুইপাশে অবস্থিত। পুরুষদের দুটি পায়ের সংযোগস্থলে অবস্থিত থলির মধ্যস্থিত গোলাকার অঙ্গ দুটি হলো শুক্রাশয় (টেসটিস), যা প্রজননের ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ।
১২. ভুল ধারণা : আমার রক্তচাপ এখন স্বাভাবিক, এইজন্য আমার ওষুধ খাবার দরকার নেই। আমার কোনো অসুবিধাও নেই, তো শুধু শুধু ওষুধ খাব কেন?
বাস্তব সত্য : উচ্চ রক্তচাপের কিছু রোগী রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে আসার পরে ব্লাডপ্রেসারের ওষুধ খাওয়া বন্ধ করে দেন। কিছু রোগীর ক্ষেত্রে রক্তচাপ অধিক হওয়া সত্ত্বেও কোনো অসুবিধা হয় না, তখন তারা ওষুধ খাওয়া বন্ধ করে দেন। এটা ভুল।
১৩. ভুল ধারণা : পানি বেশি খেলে কিডনির রোগ সারে।
বাস্তব সত্য : সব রোগে বেশি পানি ভালো নয়। কিডনি দুর্বল হলে অতিরিক্ত পানি বিপজ্জনক। পানি কতটা খাবেন, সেটা প্রস্রাবের পরিমাণ ও ফোলাভাব দেখে ঠিক করতে হবে।
১৪. ভুল ধারণা : কিডনি প্রতিস্থাপনের পরে দু-একদিন ওষুধ না খেলেও চলে।
বাস্তব সত্য : একবেলাও ওষুধ বাদ দেওয়া বিপজ্জনক। এতে প্রতিস্থাপিত কিডনি নষ্ট হয়ে যেতে পারে।
১৫. ভুল ধারণা : খাদ্য নিয়ন্ত্রণ করলেই ক্রিয়েটিনিন আর বাড়বে না।
বাস্তব সত্য : খাদ্যতালিকা নিয়ন্ত্রণে রাখলে বৃদ্ধির গতি কমে, কিন্তু ক্রিয়েটিনিন বাড়া পুরোপুরি বন্ধ হয় না।
১৬. ভুল ধারণা : কিডনি প্রতিস্থাপন মানে আজীবন নিশ্চিন্ত জীবন।
বাস্তব সত্য : প্রতিস্থাপনের পরও জীবনযাপন ও ওষুধে নিয়ম মেনে চলতে হয়। প্রতিস্থাপিত রোগীর আয়ু সাধারণ মানুষের তুলনায় কম হলেও ডায়ালিসিস রোগীর থেকে অনেক বেশি।
১৭. ভুল ধারণা : ডায়ালিসিস রোগীর আয়ু অনেক বেশি।
বাস্তব সত্য : অনেক ক্ষেত্রে ডায়ালিসিস রোগীর আয়ু ক্যানসার রোগীর থেকেও কম। নিয়মিত ও পর্যাপ্ত ডায়ালিসিস করলে আয়ু কিছুটা বাড়তে পারে।
শেষ কথা
কিডনি রোগ সম্পর্কে ভুল ধারণা দূর করা জরুরি। কারণ ভুল ধারণাই অনেক সময় সঠিক সময়ে চিকিৎসা গ্রহণে বাধা সৃষ্টি করে। কিডনি সুস্থ রাখতে নিয়মিত চেকআপ, রক্তচাপ-সুগার নিয়ন্ত্রণ, পর্যাপ্ত পানি পান, সঠিক খাদ্যাভ্যাস এবং নেফ্রোলজিস্টের পরামর্শ মেনে চলা— এসবের বিকল্প নেই।
What's Your Reaction?