কিয়েভে রুশ হামলায় শিশুসহ নিহত ৬

2 hours ago 3

রাশিয়ার ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় ইউক্রেনের রাজধানী কিয়েভসহ বিভিন্ন শহর কেঁপে উঠেছে। এসব হামলায় অন্তত ছয়জন নিহত হয়েছেন। যাদের মধ্যে ছয় মাস ও ১২ বছর বয়সী দুই শিশু ও এক নারী রয়েছে। হামলায় গুরুত্বপূর্ণ জ্বালানি স্থাপনা ও একাধিক বহুতল আবাসিক ভবনও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

ব্রিটিশ গণমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ানের খবরে বলা হয়েছে, মঙ্গলবার রাতে শুরু হওয়া হামলা বুধবার সকাল পর্যন্ত অব্যাহত থাকে। কিয়েভে অন্তত চারটি ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র আঘাত হানে। শহরজুড়ে একাধিক বিস্ফোরণের শব্দ শোনা যায়। পরে বুধবার সকালে রুশ ড্রোন লক্ষ্য করে ইউক্রেনীয় বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা সক্রিয় হয়।

প্রায় চার বছর ধরে চলা যুদ্ধের সমাধান নিয়ে নতুন করে অচলাবস্থা তৈরি হওয়ার একদিন পরই এই হামলা হয়। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের মধ্যে নির্ধারিত বুদাপেস্ট বৈঠক বাতিল হওয়ার পরই নতুন করে সংঘাত তীব্র হয়।

হামলার পর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি বলেন, ‘আরেকটি রাত প্রমাণ করে দিল, রাশিয়ার ওপর যুদ্ধ বন্ধে এখনো পর্যাপ্ত চাপ নেই।’

তিনি আরও জানান, ‘এখন পর্যন্ত ১৭ জন আহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। দুর্ভাগ্যবশত, দুই শিশুসহ ছয়জন নিহত হয়েছেন।’

মঙ্গলবার জেলেনস্কি আশঙ্কা প্রকাশ করেছিলেন, যুক্তরাষ্ট্র দীর্ঘ-পাল্লার টমাহক ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র সরবরাহ থেকে সরে যাওয়ার ইঙ্গিত দেওয়ায় রাশিয়া হামলা আরও বাড়াতে পারে।

ইউক্রেনে রুশ হামলার পাশাপাশি খবর এসেছে, ব্রিটেন ও ফ্রান্সের সরবরাহ করা স্টর্ম শ্যাডো ক্ষেপণাস্ত্র দিয়ে রাশিয়ার দক্ষিণ-পশ্চিম ব্রিয়ানস্ক অঞ্চলের একটি বৃহৎ রাসায়নিক কারখানায় বড় ধরনের আক্রমণ চালিয়েছে কিয়েভ। ইউক্রেনীয় ড্রোন রাশিয়ার মর্ডোভিয়া অঞ্চলেও আঘাত হেনেছে।

মঙ্গলবার স্থানীয় সময় রাত ১টার পরপরই কিয়েভজুড়ে প্রথম বিস্ফোরণ শোনা যায়। প্রায় আধা ঘণ্টা পর আরও কয়েকটি বিস্ফোরণ ঘটে। জাপোরিঝিয়া, পোলতাভা ও দিনিপ্রো শহরেও বিস্ফোরণ ও বিমান হামলার সতর্কতা বেজে ওঠে, যা সকাল পর্যন্ত চলতে থাকে।

কিয়েভের মেয়র ভিটালি ক্লিচকো টেলিগ্রামে জানান, জরুরি সেবাদানকারী কর্মীরা একটি ১৬ তলা আবাসিক ভবনে ড্রোন হামলার কারণে সৃষ্ট আগুন থেকে ১০ জনকে উদ্ধার করে। হামলায় একটি চিকিৎসা প্রতিষ্ঠানের জানালাও উড়ে যায় ও আরেকটি ভবনে ধ্বংসাবশেষের টুকরো পাওয়া যায়। 

রাজধানীর ডারনিৎস্কি জেলার ১৭ তলা  ও ১০ তলা দুটি ভবন ক্ষতিগ্রস্ত হয় এবং গ্যাস পাইপে আগুন ধরে যায়। সেখান থেকে জরুরি সেবাকর্মীরা ২০ জনকে উদ্ধার করে।

ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলের পোলতাভা অঞ্চলে তেল ও গ্যাস স্থাপনা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে স্থানীয় গভর্নর ভলোদিমির কহুত জানিয়েছেন। দিনিপ্রো শহর থেকেও তীব্র হামলার খবর এসেছে।

ইউক্রেনের জ্বালানি মন্ত্রণালয়ের বরাতে বলা হয়েছে, দেশটির জ্বালানি অবকাঠামো লক্ষ্য করে চালানো হামলার ফলে হাজার হাজার মানুষ বিদ্যুৎবিহীন অবস্থায় রয়েছে।

বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘জ্বালানি অবকাঠামোর ওপর ব্যাপক ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন হামলার কারণে ইউক্রেনের অধিকাংশ অঞ্চল বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে।’

সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে রাশিয়া ইউক্রেনের বিদ্যুৎকেন্দ্র ও গ্যাস স্থাপনা লক্ষ্য করে হামলার সংখ্যা ও তীব্রতা উল্লেখযোগ্যভাবে বাড়িয়েছে।

সর্বশেষ এই হামলার মধ্যেই ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি বুধবার সুইডেন সফরে যাচ্ছেন, যেখানে তিনি দেশটির প্রধানমন্ত্রী উলফ ক্রিস্টারসনের সঙ্গে বৈঠক করবেন। এটি ইউরোপীয় কূটনীতির এক ব্যস্ত সময়ের সূচনা।

ট্রাম্পের সাম্প্রতিক পিছুটানের প্রেক্ষিতে এবং ইউক্রেনের প্রতি সমর্থন জোরদার করতে ‘কোলিশন অব দ্য উইলিং’-এর বৈঠক শুক্রবার লন্ডনে অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে। 

সুইডেন সরকার জানিয়েছে, ‘প্রধানমন্ত্রী ও প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি যৌথ সংবাদ সম্মেলনে প্রতিরক্ষা রপ্তানি সম্পর্কিত নতুন তথ্য ঘোষণা করবেন।’ 

বৈঠকের অংশ হিসেবে তারা একটি কোম্পানি পরিদর্শনও করবেন।

সর্বশেষ এই বিমান হামলা আবারও তুলে ধরেছে, ট্রাম্পের সাম্প্রতিক প্রচেষ্টা রুশ প্রেসিডেন্টকে যুদ্ধবিরতিতে রাজি করাতে ব্যর্থ হয়েছে। এর আগে ওয়াশিংটনে এক তিক্ত বৈঠকে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কিকে পূর্বাঞ্চলীয় দনবাস অঞ্চল রাশিয়ার হাতে ছেড়ে দেওয়ার জন্য চাপ দেন।

জেলেনস্কি ওয়াশিংটনে যান দীর্ঘ-পাল্লার টমাহক ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র পাওয়ার আশায়, কিন্তু তার আগে ট্রাম্প ও পুতিনের দুই ঘণ্টার টেলিফোন আলাপের পর যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান হঠাৎ বদলে যায়। ট্রাম্প জেলেনস্কিকে সতর্ক করেন যে, তিনি যদি রাশিয়ার শর্ত না মানেন, পুতিন ইউক্রেনকে ‘ধ্বংস’ করে দেবেন।

এদিকে, হোয়াইট হাউসের এক কর্মকর্তা জানিয়েছিলেন, ট্রাম্প ও পুতিনের মধ্যে ‘নিকট ভবিষ্যতে’ কোনো বৈঠকের পরিকল্পনা নেই।

Read Entire Article