কুতুবখালী খাল যেন ময়লার ভাগাড়, সারাক্ষণ মশা-মাছির ওড়াউড়ি

1 month ago 11

খালের নাম কুতুবখালী। রাজধানীর ধোলাইপাড় থেকে যাত্রাবাড়ীর মূল সড়ক পর্যন্ত এই খালের পরিসর। প্রায় দেড় কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের এই খাল পরিণত হয়েছে ময়লার ভাগাড়ে। আশপাশে গেলেই চোখে পড়ে খালের পানিতে জমে থাকা ময়লা-আবর্জনার স্তূপ আর মশা-মাছির উড়াউড়ি।

আবাসিক এলাকার ভেতর দিয়ে বয়ে চলা এই খালের পানি হওয়ার কথা ছিল স্বচ্ছ, খালের চারপাশে গাছ-গাছালির সমাহার বাড়িয়ে দিতো সৌন্দর্য। অথচ সেসবের বালাই নেই। খালে পানি প্রবাহ নেই বললেই চলে। ময়লা ফেলার কারণে পচা পানি থেকে বাতাসে ছড়াচ্ছে দুর্গন্ধ। ময়লা-আবর্জনায় খালের তলদেশ ভরে গেছে।

কুতুবখালী খাল যেন ময়লার ভাগাড়, সারাক্ষণ মশা-মাছির ওড়াউড়ি

গত ৬ আগস্ট কুতুবখালী খালের আশপাশের এলাকা ঘুরে দেখা যায়, ধোলাইপাড় থেকে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক পর্যন্ত কুতুবখালী খালের অবস্থান। এর মধ্যে ধোলাইপাড় অংশে পানিতে তেমন ময়লা-আবর্জনা নেই। কয়েকটি স্থানে পলিথিনে থাকা বাসাবাড়ির বর্জ্য পড়ে আছে। আর খালের পানি কালো হয়ে গেছে। পানি থেকে বাতাসে দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে। অন্যদিকে, দক্ষিণ যাত্রাবাড়ী অংশে বর্জ্যের স্তূপ। খালের পানি প্রবাহ নেই। এর মধ্যে দুপাশে খালের ভেতরে বাঁশ দিয়ে তোলা হয়েছে অর্ধশতাধিক দোকান। এসব দোকানের বর্জ্য গড়িয়ে খালেই পড়ছে।

আরও পড়ুন:

এই এলাকার দনিয়া রোডের বাসিন্দা কাদের খান জাগো নিউজকে বলেন, বিশ্বের অনেক উন্নত দেশে, শহরের ভেতর খালকে পর্যটন কেন্দ্রের মতো সাজানো হয়। সকাল-বিকেল খাল পাড়ে হাঁটতে বের হন অনেকে। এতে শরীর ও মন ভালো থাকে। কিন্তু কুতুবখালী খালপাড়ে গেলে দুর্গন্ধে টেকা যায় না, মুখে মাস্ক পরে থাকতে হয়। কুতুবখালী খাল ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের সম্পত্তি। কিন্তু এ খাল পরিষ্কারে করপোরেশনের কোনো ভূমিকা নেই। আবার যারা খালে ময়লা ফেলে তাদের বিরুদ্ধে করপোরেশন কোনো ব্যবস্থা নেয় না। ফলে খালটি এখন ভাগাড়ে পরিণত হয়েছে।

কুতুবখালী খাল যেন ময়লার ভাগাড়, সারাক্ষণ মশা-মাছির ওড়াউড়ি

ধোলাইপাড়ের বাসিন্দা মাসুদ আলম বলেন, কুতুবখালী খাল দখল ও ময়লা-আবর্জনায় ভরাট হয়ে গেছে। কিছুদিন আগে স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতাকর্মীরা খালের একাংশের পানির ওপর ময়লা-আবর্জনা অপসারণ করেছে। কিন্তু খালের ভেতর ময়লা জমে গেছে। এতে বেশি বৃষ্টি হলে আশপাশের এলাকায় জলাবদ্ধতা হয়। অথচ বৃষ্টির পানি অপসারণে খালের সবচেয়ে বড় ভূমিকা রাখার কথা ছিল।

আরও পড়ুন:

ডিএসসিসির সম্পত্তি বিভাগের তথ্য বলছে, আগে কুতুবখালী খালের প্রস্থ ছিল প্রায় ৫০ ফুট। গভীরতা ছিল ৮ ফুট। পরে দখল হতে হতে খালের পূর্ব ধোলাইপাড় অংশের প্রস্থ নেমে আসে প্রায় ৩০ ফুটে। এরপর সেখানে দোকানপাট বসানো হয়। দোকানের নিচ দিয়ে বর্জ্য ও মাটি ফেলে ধীরে ধীরে খালের ভেতরে দখল আরও বাড়াতে থাকেন স্বার্থান্বেষী ব্যক্তিরা। পরে সিটি করপোরেশন খালের দুই পাশে সড়ক নির্মাণ করে। এখন খালটির কোথাও ২০ ফুট, আবার কোথাও তা ১০-১২ ফুটে চলে আসছে।

কুতুবখালী খাল যেন ময়লার ভাগাড়, সারাক্ষণ মশা-মাছির ওড়াউড়ি

স্থানীয় লোকজনের আশঙ্কা, এভাবে চলতে থাকলে একসময় খালের অস্তিত্বই থাকবে না।

এরই মধ্যে গত ২৮ জুলাই গণঅভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তি উপলক্ষে কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে পূর্ব ধোলাইপাড় থেকে দক্ষিণ কুতুবখালী পর্যন্ত খাল পরিষ্কার করেন স্বেচ্ছাসেবক দলের ঢাকা মহানগর দক্ষিণের নেতাকর্মীরা। তারা ময়লা পানিতে নেমে বর্জ্য পরিষ্কার করেন। খালের দুই পাশে দুই শতাধিক ফুলের টবও বসানো হয়। কিন্তু খালের এই অংশে আবার ময়লা-আবর্জনা ফেলছেন অনেকে। এতে খালটির চিত্র আগের মতোই হয়ে যাচ্ছে।

আরও পড়ুন:

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ডিএসসিসির প্রশাসক মো. শাহজাহান মিয়া জাগো নিউজকে বলেন, ‘কুতুবখালী খালের একাংশ স্বেচ্ছাসেবক দল পরিষ্কার করায় তাদের ধন্যবাদ। একইভাবে এ ধরনের কাজে সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠন এগিয়ে এলে আমরা তাদের স্বাগত জানাবো। এ শহরটা আমাদের সবার। নগর পরিষ্কার রাখতে আমাদের সবার দায়িত্ব আছে। এক্ষেত্রে সিটি করপোরেশন মুখ্য ভূমিকা পালন করছে।’

কুতুবখালী খাল যেন ময়লার ভাগাড়, সারাক্ষণ মশা-মাছির ওড়াউড়ি

তিনি বলেন, আমরা ঢাকা দক্ষিণের ড্রেন, নালা-নর্দমা নিয়মিত পরিষ্কার করছি। কুতুবখালী খালের এখনো যেসব বর্জ্য আছে, সেগুলো শিগগির পরিষ্কার করা হবে। আর নতুন করে যাতে কেউ খালে ময়লা না ফেলে, এজন্য স্থানীয় নাগরিকদের সচেতন হতে হবে। জনসচেতনতা ছাড়া এ খাল পরিষ্কার রাখা সম্ভব হবে না।

এমএমএ/এসএনআর/এমএমএআর/এমএফএ/এমএস

Read Entire Article