কুমিল্লায় ভেসে উঠছে বন্যার ক্ষত, ক্ষতি তিন হাজার কোটি টাকা

1 month ago 11

স্মরণকালের ভয়াবহ বন্যায় প্লাবিত হয়েছে কুমিল্লার ১৪ উপজেলা। এরইমধ্যে চৌদ্দগ্রাম, নাঙ্গলকোট, বুড়িচং ও ব্রাহ্মণপাড়াসহ বিভিন্ন উপজেলা থেকে পানি নামতে শুরু করলেও দীর্ঘ ১৬ দিনেও মনোহরগঞ্জ উপজেলায় অপরিবর্তীত রয়েছে বন্যা পরিস্থিতি।

যেসব উপজেলায় বন্যার পানি নামতে শুরু করেছে সেখানে দৃশ্যমান হচ্ছে রাস্তাঘাট। বাড়ির আঙিনা থেকে পানি সরে যাওয়ার পর ভেসে উঠতে শুরু করেছে বন্যার ক্ষতচিহ্ন। চারদিকে ছড়িয়ে পড়েছে পানিবাহিত রোগের প্রাদুর্ভাব।

কুমিল্লায় ভেসে উঠছে বন্যার ক্ষত, ক্ষতি তিন হাজার কোটি টাকা

এবারের বন্যায় প্লাবিত কৃষিখাত, মাছের ঘের, প্রাণিসম্পদ, রাস্তাঘাট ও ক্ষতিগ্রস্ত ঘরবাড়ি মিলিয়ে কুমিল্লাজুড়ে অন্তত ৩ হাজার কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কার্যালয়ের তথ্যমতে ক্ষতির পরিমাণ আরও বাড়তে পারে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত ১৯ আগস্ট থেকে অব্যাহত বৃষ্টি ও ভারতের উজান থেকে নেমে আসা পানিতে কুমিল্লার বিভিন্ন উপজেলা বন্যায় প্লাবিত হতে থাকে। এরপর সময়ের সঙ্গে সঙ্গে বন্যার ভয়াবহতা বাড়তে থাকে। ২২ আগস্ট রাত সাড়ে ১১টায় গোমতী নদীর বাঁধ ভেঙে যায়। এতে বুড়িচং ও ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলায় প্লাবিত হয়ে তলিয়ে যায় মানুষের ঘরবাড়ি, বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা। দিশাহারা মানুষজন সহায় সম্বল হারিয়ে ঘর ছেড়ে আশ্রয় নেয় আত্মীয়-স্বজনের বাড়ি কিংবা আশ্রয়কেন্দ্রে। অনেকে খোলা আকাশের নিচেও বসবাস করতে শুরু করেন।

জেলা মৎস্য কর্মকর্তার কার্যালয়ের সূত্রমতে, চলমান বন্যায় কুমিল্লায় মোট ২৩ হাজার ৪২টি খামার বা পুকুর ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এতে ২৫ হাজার ৫৩৮ দশমিক ৫০ টন ফিনফিশ, ১০ দশমিক ২৮ টন চিংড়ি, ১০ কোটি ১৭ লাখ সংখ্যক পোনামাছের ক্ষতি হয়েছে। যার বর্তমান বাজারমূল্য হিসাবে ৩৫৮ কোটি ১২ লাখ টাকা, চিংড়িতে ৫ কোটি টাকা, ১৭ কোটি ৮ লাখ ৯২ হাজার টাকার পোনা জাতীয় মাছের ক্ষতি হয়েছে।

কুমিল্লায় ভেসে উঠছে বন্যার ক্ষত, ক্ষতি তিন হাজার কোটি টাকা

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর সূত্রমতে, কৃষিতে ভয়াবহ ক্ষতি হয়েছে। রোপা আমনের বীজতলা, রোপা আমন, শাক-সবজি, রোপা আউশ ও আখের উল্লেখযোগ্য ক্ষতি হয়েছে। কুমিল্লা জেলায় আবাদ করা জমির পরিমাণ এক লাখ ৩৫ হাজার ২৩৮ হেক্টর। যার মধ্যে ৬৩ হাজার ৯৭৪ হেক্টর জমি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সবমিলিয়ে প্রায় ৮০০ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে।

জেলায় কৃষি ও মৎস্যর পাশাপাশি প্রাণিসম্পদেরও ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। জেলা প্রাণিসম্পদ কার্যালয় সূত্র জানিয়েছে, প্রাথমিক তথ্যে এই খাতে মোট ক্ষতি ৩০০ কোটি টাকা ছাড়িয়েছে। তবে এই ক্ষতির পরিমাণ আরও বাড়তে পারে।

জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. বেলাল হোসেন জানান, কুমিল্লায় বন্যায় মৎস্য খাতে ক্ষয়-ক্ষতির প্রাথমিক একটি তালিকা তৈরি করা হয়েছে। সেই হিসাবে প্রায় ৫০০ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। বানের পানি নেমে গেলে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ সঠিকভাবে বলা যাবে।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর কুমিল্লার উপ-পরিচালক আইউব মাহমুদ বলেন, এবারের বন্যায় কুমিল্লায় কৃষকরা প্রচুর ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছেন। এই ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে কৃষি প্রণোদনা, বিনামূল্যে সার ও বীজ বিতরণ, ক্ষুদ্র ঋণ নেওয়ায় সহায়তা, বিনামূল্যে কৃষি সেবা ও সার্বিক সহযোগিতা করা হচ্ছে।

জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা চন্দন কুমার পোদ্দার বলেন, জেলায় চার হাজারেরও বেশি গবাদিপশুর খামার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এতে ২ লাখ ৯ হাজার বিভিন্ন জাতের গবাদিপশু ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এর মধ্যে গরুর সংখ্যা এক লাখ ২০ হাজার, ১৬টি মহিষ, ৩০ হাজার ছাগল ও ৭০০ ভেড়া। তার মধ্যে মারা গেছে ৩৫টি গরু, তিনটি মহিষ, ১৭১টি ছাগল এবং সাতটি ভেড়া।

কুমিল্লায় ভেসে উঠছে বন্যার ক্ষত, ক্ষতি তিন হাজার কোটি টাকা

এছাড়া ২ হাজার ২১৮টি খামারে ১৩ লাখ ৬৬ হাজার হাঁস-মুরগি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। মারা গেছে ১০ লাখ ২২ হাজার মুরগি এবং ২ সহস্রাধিক হাঁস। এটি আমাদের চূড়ান্ত তালিকা নয়। প্রাথমিকভাবে তালিকাটি তৈরি করা হয়েছে। বন্যার পানি নেমে গেলে সম্পূর্ণ ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণ করে পরবর্তীতে চূড়ান্ত তালিকা প্রণয়ন করা হবে।

জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা মোহাম্মদ আবেদ আলী বলেন, এবারের বন্যায় ক্ষতি আমাদের ধারণার থেকে বেশিও হতে পারে। এখনই নিশ্চিতভাবে আমরা কোনো পরিসংখ্যান করিনি। দুর্যোগ শেষ হলে আমরা পরিদর্শন ও সংশ্লিষ্ট কার্যালয়ের সঙ্গে সমন্বয় করে তা নিরূপণ করবো। প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে প্রায় তিন হাজার কোটি টাকার মতো ক্ষতি হতে পারে।

এফএ/জিকেএস

Read Entire Article