কুষ্টিয়ায় সিম সংকট, মোবাইল ব্যাংকিং অ্যাকাউন্ট খুলতে ভোগান্তি

3 months ago 42

নতুন নির্দেশনা অনুযায়ী শিক্ষা উপবৃত্তির টাকা পেতে শিক্ষার্থীদের অভিভাবকদের সিমকার্ড কেনার হিড়িক পড়েছে। অভিভাবকদের অভিযোগ, চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় সিমকার্ডের কৃত্রিম সংকট তৈরি করা হয়েছে। ২০ টাকার সিমকার্ড ৪০০ টাকায় কিনতে বাধ্য হচ্ছেন তারা। সিমের সব অফারও বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।

খোকসা উপজেলা শিক্ষা অফিস সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার ৮৭টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীর সংখ্যা ১৩ হাজার ৬০০ জন। ৭০- ৮০ শতাংশ শিক্ষার্থীর উপবৃত্তির টাকা পেতে মোবাইল ব্যাংকিং সুবিধা চালু রয়েছে শিশুর বাবার নামে কেনা সিমকার্ডে। সম্প্রতি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিশুদের উপবৃত্তি সংক্রান্ত এক অফিস আদেশে মায়ের জাতীয় পরিচয়পত্র দিয়ে খরিদ করা সিমে মোবাইল ব্যাংকিংয়ে হিসাব খুলতে বলা হয়। এ খবর ছড়িয়ে পড়লে শিশুদের অভিভাবকরা সিমকার্ড কিনতে ব্যস্ত হয়ে পড়েন। যে কারণে শুরু হয়েছে সিমকার্ডের কৃত্রিম সংকট।

সিমকার্ড কোম্পানির এজেন্টদের বাড়িতে লম্বা লাইনে দাঁড়িয়ে থেকে সিমকার্ড কিনতে হচ্ছে। তবে চাহিদা বাড়ায় বাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে সিমের দাম। এক সপ্তাহ আগেও যে সিমকার্ড ২০ টাকার বিক্রি হচ্ছিল তা ৪০০ টাকায়রে বিক্রি করছেন ব্যবসায়ীরা। আবার বাবার পরিচয়পত্রে কেনা সিমে মায়ের পরিচয়পত্র দিয়ে মোবাইল ব্যাংকিং চালু থাকলে সেক্ষেত্রে জটিলতার শেষ নেই। এরইমধ্যে চলতি সপ্তাহের রোববার বিদ্যালয়ে মোবাইল ব্যাংকিং নম্বরসহ আনুষঙ্গিক কাগজ জমা দেওয়ার সময় শেষ হয়ে গেছে।

শোমসপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিশু শ্রেণির ছাত্রী ইভা। তার মা হাসিনা বেগম নিজের এলাকায় সিমকার্ড না পেয়ে বাড়ি থেকে পাঁচ কিলোমিটার দূরে উপজেলা সদরে সিমকার্ড কোম্পানির এজেন্টের কাছে সিমকার্ড কিনতে এসেছিলেন। সেখানেও মেলেনি সিমকার্ড। তাই ফেরিওয়ালা সিমকার্ড বিক্রেতাকে হন্যে হয়ে খুঁজছিলেন তিনি। একপর্যায়ে বিক্রেতাকে পেলেও সিমকার্ড পাননি।

সোমবার (২৬ মে) দুপুরে উপজেলা সদরের কালীবাড়ি রোডে শিশু শিক্ষার্থী ইভা ও মা হাসিনা বেগমের সঙ্গে কথা হয় এ প্রতিবেদকের। তখন তারা সিমকার্ডের প্রচারম্যান ও বিক্রেতাকে খুঁজে পেয়েছেন।

হাসিনা বেগম জানান, কয়েক সপ্তাহ আগে স্বামীর আবুল কালামের জাতীয় পরিচয়পত্র দিয়ে ২০ টাকায় একটি সিম কিনেছিলেন। কিন্তু সে সিম কাজে আসছে না। তাই এবার নিজের নামে সিম কেনার জন্য হন্যে হয়ে ঘুরেছেন। অবশেষে কোম্পানির হকার তাকে একটি সিম ম্যানেজ করে দেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন। একটি সিমের জন্য দিতে হবে ৩৫০ টাকা। আর মোবাইল ব্যাংকিংয়ের অ্যাকাউন্ট খুলতে নেবেন ৫০ টাকা। সব মিলিয়ে একটি সিমকার্ডের জন্য তাকে (সিম বিক্রেতা) দিতে হবে ৪০০ টাকা।

কুষ্টিয়ায় সিম সংকট, মোবাইল ব্যাংকিং অ্যাকাউন্ট খুলতে ভোগান্তি

মেয়ের উপবৃত্তি চালু রাখতে উপজেলা সদরে সিমকার্ড কিনতে এসেছিলেন রুপা খাতুন ওরফে এলাচ। তার বাড়ি পদ্মবিলা গ্রামে। স্বামীর নামে কেনা সিমকার্ডে তার মেয়ের উপবৃত্তি চালু আছে। কিন্তু স্কুলের শিক্ষকরা তাকে আবার নতুন করে নিজের নামে সিমকার্ড কিনতে বলেছেন। তাই সন্তানকে সঙ্গে নিয়ে দোকানে দোকানে সিমকার্ড খুঁজে বেড়াচ্ছেন।

প্রাথমিক বিদ্যালয়ের কয়েকজন প্রধান শিক্ষক নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, নতুন সিমকার্ডে খোলা মোবাইল ব্যাংকিং অ্যাকাউন্ট ও মোবাইল নম্বর পরিবর্তন করতে গেলে সার্ভার এন্ট্রি নিচ্ছে না। ঘণ্টার পর ঘণ্টা ধরে চেষ্টা করতে হচ্ছে। এছাড়া শিশুর মায়ের নামে মোবাইল ব্যাংকিং অ্যাকাউন্ট থাকলে নতুন অ্যাকাউন্ট খোলা যাচ্ছে না।

শোমসপুর সরকারি প্রাাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক তোরান মোল্লাা জাগো নিউজকে বলেন, ২৮ মে’র মধ্যে উপবৃত্তি সংক্রান্ত সার্ভারে এন্ট্রি দিতে হবে। তবে অভিভাবকদের আগেই কাগজপত্র জমা দিতে বলা হয়েছে। এখনো অনেক শিশুর অভিভাবক কাগজ জমা দেননি।

তিনি বলেন, শিক্ষার্থীর মায়ের নিজের জাতীয় পরিচয়পত্র দিয়ে নিজের নামে মোবাইল ব্যাংকের হিসার খোলার বিষয়টি জটিল করেছে মোবাইল কোম্পানি। সিমকার্ড সংকটের ফলে অভিভাবকরা হয়রানির শিকার হচ্ছেন। আবার যে মায়ের নামে অন্য সিমে মোবাইল ব্যাংকিং অ্যাকাউন্ট খোলা আছে, তার নামে নতুন সিমে অ্যাকাউন্ট খোলা যাচ্ছে না।

এ বিষয়ে উপজেলা শিক্ষা অফিসার আজহারুল ইসলাম বলেন, মোবাইল সিমকার্ডের সংকটে অনেক অভিভাবক ব্যাংকিং অ্যাকাউন্ট খুলতে সমস্যা হচ্ছে বলে তিনি শুনেছেন। কিন্তু উপবৃত্তি এন্ট্রি সার্ভার সারাদেশে একযোগে কাজ করে। হয়তো এজন্য সাময়িক সমস্যা হতে পারে। তবে কাগজপত্র জমাদানের সময় বৃদ্ধির বিষয়ে সিদ্ধান্ত ওপর মহলের।

আল-মামুন সাগর/এসআর/এএসএম

Read Entire Article