দেশের প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (কুয়েট) অন্যতম। প্রকৌশল বিষয়ে পড়তে আগ্রহী শিক্ষার্থীদের পছন্দের তালিকায় বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) পরই কুয়েট।
গত কয়েক বছর ধরে বিশ্ববিদ্যালয়টি প্রকৌশল গুচ্ছের অধীনে পরীক্ষা নিয়ে শিক্ষার্থী ভর্তি করে আসছিল। এবার গুচ্ছ থেকে বেরিয়ে নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় পরীক্ষা নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে। তারই পরিপ্রেক্ষিতে ২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষে প্রথমবর্ষ বিএসসি ইঞ্জিনিয়ারিং, বিইউআরপি ও বিআর্ক কোর্সে ভর্তির বিজ্ঞপ্তিও প্রকাশ করেছে কুয়েট কর্তৃপক্ষ।
বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী-সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং, ইলেক্ট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেক্ট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং এবং মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং অনুষদসমূহে ১৬টি বিভাগে এক হাজার ৬৫টি আসনে শিক্ষার্থী ভর্তি করা হবে।
ভর্তি পরীক্ষার সূচি অনুযায়ী- আগামী ৪ ডিসেম্বর সকাল ১০টা থেকে আবেদন শুরু হবে, যা চলবে ১৪ ডিসেম্বর রাত ১১টা ৫৯ মিনিট পর্যন্ত। ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীর অনলাইনে আবেদন করতে পারবেন। এবার ভর্তি পরীক্ষায় ফি ১১০০-১২০০ টাকা। আবেদন প্রক্রিয়া শেষে ১১ জানুয়ারি ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। আর ২৬ জানুয়ারি ফল প্রকাশ করা হবে।
প্রথমবর্ষ বিএসসি ইঞ্জিনিয়ারিং, বিইউআরপি ও বিআর্ক কোর্স ভর্তি কমিটির সভাপতি এবং ইলেক্ট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেক্ট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. মো. রফিকুল ইসলামের সই করা বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নিতে যোগ্যতা
প্রার্থীকে অবশ্যই বাংলাদেশের নাগরিক হতে হবে। যেকোনো মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ড, মাদরাসা শিক্ষা বোর্ড, কারিগরি শিক্ষা বোর্ড থেকে ২০২১ অথবা ২০২২ সালের এসএসসি পরীক্ষায় কমপক্ষে জিপিএ ৪.০০ অথবা সমতুল্য গ্রেড পেয়ে উত্তীর্ণ হতে হবে। ২০২৪ সালের এইচএসসি বা তার সমমানের পরীক্ষায় পাস হতে হবে অথবা ২০২৩ সালের নভেম্বর বা তারপরে ‘A’ লেভেল সার্টিফিকেট প্রাপ্ত হতে হবে।
যে কোনো শিক্ষা বোর্ডের অধীনে পরীক্ষায় গণিত, পদার্থবিদ্যা, রসায়ন ও ইংরেজি- এ চার বিষয়ে কমপক্ষে মোট জিপি ১৮.০০ অথবা বিদেশি শিক্ষা বোর্ড থেকে সমমানের পরীক্ষায় এসব বিষয়ে কমপক্ষে সমতুল্য গ্রেড পেয়ে পাস হতে হবে। তাছাড়া বায়োমেডিকেল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগে ভর্তি হতে হলে সংশ্লিষ্ট প্রার্থীকে উচ্চ মাধ্যমিক বা সমমানের পরীক্ষায় জীববিজ্ঞানে কমপক্ষে জিপি ৪.০০ থাকতে হবে।
প্রার্থী জিসিই ‘ও’ লেভেল এবং ‘এ’ লেভেল পাস করে থাকলে তার ক্ষেত্রে ভর্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণের জন্য ‘ও’ লেভেল পরীক্ষায় কমপক্ষে পাঁচটি বিষয়ে ন্যূনতম ‘বি’ গ্রেড পেয়ে পাস হতে হবে। ‘এ’ লেভেল পরীক্ষায় পদার্থবিদ্যা, রসায়ন ও গণিতে পৃথক পৃথকভাবে কমপক্ষে ‘বি’ গ্রেড পেয়ে পাস হতে হবে। বায়োমেডিকেল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগে ভর্তি হতে হলে সংশ্লিষ্ট প্রার্থীকে ‘এ’ লেভেল পরীক্ষায় জীব বিজ্ঞানে কমপক্ষে ‘বি’ গ্রেড পেয়ে পাস হতে হবে।
কমপক্ষে ১২ শিক্ষাবর্ষ অধ্যয়নকাল থাকা সাপেক্ষে বিদেশি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে ২০২২ সালের উচ্চ মাধ্যমিক/সমমানের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ প্রার্থীর ক্ষেত্রে গণিত, পদার্থবিজ্ঞান, রসায়ন ও ইংরেজি বিষয়ের প্রত্যেকটিতে আলাদাভাবে কমপক্ষে ৮০ শতাংশ নম্বর বা সমমানের গ্রেড পেতে হবে। সংশ্লিষ্ট প্রার্থীকে মাধ্যমিক/সমমানের পরীক্ষায় গড়ে কমপক্ষে ৭০ শতাংশ নম্বর বা সমমানের গ্রেড পেতে হবে ।
ভর্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণকারী নির্বাচন
নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে প্রাপ্ত বৈধ আবেদনপত্রের মধ্য থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় গণিত, পদার্থবিদ্যা, রসায়ন ও ইংরেজী-এ চার বিষয়ে প্রাপ্ত মোট গ্রেড পয়েন্টের ভিত্তিতে একটি মেধাতালিকা তৈরি করা হবে। প্রার্থী সংখ্যা বেশি হলে এ তালিকা থেকে প্রথম ২০ হাজার জন প্রার্থীকে ভর্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণের সুযোগ দেওয়া হবে। তবে ২০ হাজারতম প্রার্থী একাধিক হলে উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় যথাক্রমে গণিত, পদার্থবিদ্যা, রসায়ন ও ইংরেজীতে প্রাপ্ত গ্রেডের ভিত্তিতে ন্যূনতম সংখ্যক প্রার্থীকে ভর্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণের সুযোগ দেওয়া হবে ।
ভর্তি পরীক্ষা সংক্রান্ত সময়সূচি
আবেদন শুরু ৪ ডিসেম্বর সকাল ১০টায়। এ প্রক্রিয়া শেষ হবে ১৪ ডিসেম্বর রাত ১১টা ৫৯ মিনিটে। টাকা জমা দেওয়ার শেষ সময় ১৫ ডিসেম্বর বিকেল ৫টা। ভর্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণের যোগ্য প্রার্থীদের নামের তালিকা প্রকাশ করা হবে ৩০ ডিসেম্বর।
১১ জানুয়ারি সকাল সাড়ে ৯টা হতে দুপুর সাড়ে ১২টা পর্যন্ত ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। আর্কিটেকচারে অংকন শুরু হবে দুপুর ১২টা ৪৫ মিনিট থেকে ১টা ৪৫ মিনিট পর্যন্ত।
ভর্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণকারী প্রার্থীদের মেধাক্রমের তালিকা প্রকাশ, বিভাগ পছন্দ প্রদানের নির্দেশনা, ভর্তির নিয়মাবলী ও ভর্তির তারিখ ঘোষণা হবে ২৬ জানুয়ারি।
কোন বিভাগে কত আসন
সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং (সিই) বিভাগে ১২০, ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং (ইইই) ১২০, মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং (এমই) ১২০, কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং (সিএসই) ১২০, ইলেকট্রনিকস অ্যান্ড কমিউনিকেশন ইঞ্জিনিয়ারিং (ইসিই) ৬০, ইন্ডাস্ট্রিয়াল ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড ম্যানেজমেন্ট (আইইএম) ৬০টি।
তাছাড়া লেদার ইঞ্জিনিয়ারিং (এলই) ৬০, টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং (টিই) ৬০, আরবান অ্যান্ড রিজিয়নাল প্ল্যানিং (ইউআরপি) ৬০, বিল্ডিং ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড কনস্ট্রাকশন ম্যানেজমেন্ট (বিইসিএম) ৬০, বায়োমেডিকেল ইঞ্জিনিয়ারিং (বিএমই) বিভাগে ৩০ জনকে ভর্তি নেওয়া হবে।
আর্কিটেকচার (আর্ক) বিভাগে ৪০, ম্যাটেরিয়ালস্ সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং (এমএসই) ৬০ জন, এনার্জি সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং (ইএসই) ৩০ জন, কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং (সিএইচই) ৩০ এবং মেকাট্রনিক্স ইঞ্জিনিয়ারিং (এমটিই) ৩০ জন রয়েছে। সংরক্ষিত (ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী এবং চট্টগ্রাম বিভাগের পার্বত্য জেলার অধিবাসীদের জন্য) পাঁচটি আসনসহ তিনটি অনুষদের ১৬টি বিভাগে মোট ১ হাজার ৬৫ জন শিক্ষার্থী ভর্তি করা হবে।
আর্কিটেকচারে ৫ বছর মেয়াদি এবং অন্যান্য সব বিষয়ে ৪ বছর মেয়াদি স্নাতক ডিগ্রি প্রদান করা হয়। ওয়েবসাইটে দেওয়া নির্দেশনা মেনে অনলাইনে আবেদন ফরম পূরণ ও ভর্তি পরীক্ষার ফি প্রদান করে সাবমিট করতে হবে। এবার ইঞ্জিনিয়ারিং ও ইউআরপির ভর্তি পরীক্ষার ফি ১ হাজার ১০০ টাকা। আর ইঞ্জিনিয়ারিং, ইউআরপি ও আর্কিটেকচারের ফি ১ হাজার ২০০ টাকা।
ভর্তি পরীক্ষার বিষয়সমূহ ও নির্ধারিত নম্বর
২০২৪ সালের উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় গণিত, পদার্থবিদ্যা ও রসায়নে যে পাঠ্যসূচি ছিল প্রধানত তার ওপর এবং Functional English-এর ওপর ভিত্তি করে ৩ ঘণ্টাব্যাপী সর্বমোট ৫০০ নম্বরের MCQ পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। প্রথম বর্ষ বিএসসি. ইঞ্জিনিয়ারিং, বিইউআরপি ও বিমার্ক কোর্সের ভর্তি পরীক্ষা একই প্রশ্নপত্রে অনুষ্ঠিত হবে। বিআর্ক কোর্সে ভর্তিচ্ছু প্রার্থীদের MCQ পরীক্ষা ছাড়াও ১ ঘণ্টার ১০০ নম্বরের মুক্তহস্ত অংকন পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে হবে।
ভর্তি সংক্রান্ত সকল তথ্যাবলী admission.kuet.ac.bd ওয়েবসাইট ও বিশ্ববিদ্যালয়ের নোটিশ বোর্ডে পাওয়া যাবে। অনলাইন ফরম পূরণ করার ক্ষেত্রে কোনও সমস্যায় 01799273655 নম্বরে অফিস চলাকালীন সময়ে (সকাল ৯টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত) যোগাযোগ করা যাবে। ভর্তি পরীক্ষা সংক্রান্ত যে কোনো প্রয়োজনে [email protected] তে e-mail করা যেতে পারে।
এএএইচ/জেএইচ