কৃষকের গাভি হত্যার অভিযোগ, মৃত্যুর কারণ জানতে হচ্ছে ময়নাতদন্ত

2 weeks ago 9

নাটোরের বাগাতিপাড়ায় দরিদ্র কৃষক মো. সোহেল রানার জীবিকার মাধ্যম ছিল একমাত্র গাভি। শুধু দুধ বিক্রিই নয়, গাভিটি ছিল তার সংসারের একমাত্র সম্বল। হঠাৎ সেই গাভি মারা যাওয়ায় পথে বসার শঙ্কায় পড়েছেন তিনি।

তার অভিযোগ, প্রভাবশালী প্রতিপক্ষের দেওয়া ঘাসে বিষ মেশানো থাকায় প্রাণ গেছে গাভিটির। এ ঘটনায় থানায় অভিযোগ করেছেন ভুক্তভোগী কৃষক। অভিযোগের পর মৃত্যুর কারণ জানতে ময়নাতদন্তের জন্য গাভির মরদেহের নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে বলে জানিয়েছে উপজেলা প্রাণিসম্পদ অফিস।

কৃষক সোহেল রানার বাড়ি উপজেলার জামনগর ইউনিয়নের দোবিলা গ্রামে। ৪৩ বছর বয়সী সোহেল রানা দিনমজুরির পাশাপাশি কয়েক বছর ধরে অন্যের জমি লিজ নিয়ে নেপিয়ার ঘাস চাষ করতেন। প্রতিবছর নির্ধারিত ৫ হাজার টাকা ভাড়াও দিতেন ঠিকমতো। কিন্তু গত ১৯ আগস্ট দুপুরে তার লাগানো ঘাস কাটার পর থেকে বিপত্তি শুরু হয়। সেদিন সন্ধ্যায় সোহেল রানার গাভির পেট ফেঁপে ওঠে। দ্রুত অসুস্থ হয়ে পড়ে গাভিটি। তিনদিন চিকিৎসার পর ২২ আগস্ট বিকেলে মারা যায়।

সোহেল রানা জানান, গাভিটি চার মাসের গর্ভবতী ছিল। এতে শুধু গাভি নয়, ভবিষ্যতের বাছুরটিও হারাতে হয়েছে তাকে। আর্থিক ক্ষতি দাঁড়িয়েছে প্রায় দেড় লাখ টাকা।

তিনি বলেন, ‘আমি একেবারে গরিব মানুষ। সংসারে আয়-রোজগারের ভরসা ছিল এই গাভি। এখন একেবারে পথে বসে গেছি। আসামিপক্ষ অনেক বড়লোক, তাদের সঙ্গে লড়াই করে আমি কি সঠিক বিচার পাব?’

জানা যায়, ২২ আগস্ট শুক্রবার রাতে তিনি বাগাতিপাড়া মডেল থানায় লিখিত অভিযোগ করেন। অভিযোগে উপজেলার দোবিলা এলাকার আজিজ মণ্ডলের স্ত্রী মেহেরুন্নেসা, মৃত আব্বাস আলীর ছেলে মোহাইমিনুল হক মিঠু ও কৈপুকুরিয়া এলাকার বাহার উদ্দিন বারুর ছেলে লুৎফর আলীকে অভিযুক্ত করেছেন।

সোহেল রানার অভিযোগ, অভিযুক্তদের হুকুমে তার লাগানো নেপিয়ার ঘাসে ঘাস মারা ওষুধ প্রয়োগ করা হয়। আর সেই বিষাক্ত ঘাস খেয়েই মারা গেছে তার গাভি।

এ বিষয়ে বাগাতিপাড়া মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। পরবর্তী আইনগত ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন।

এদিকে উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা আবু হায়দার বলেন, গরুটির ময়নাতদন্তের জন্য নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে। এটা পরীক্ষার জন্য ঢাকায় পাঠানো হবে। চূড়ান্ত রিপোর্ট হাতে পেলে বোঝা যাবে কি কারণে গরুটির মৃত্যু হয়েছে।

এ বিষয়ে অভিযুক্ত মেহেরুন্নেসা নিজেকে জেলা জজের স্ত্রী পরিচয় দিয়ে সাংবাদিককে বলেন, পুলিশ এসেছিল, আপনারা পুলিশের থেকে জেনে নেন ঘটনা কী। আমি এ বিষয়ে কিছু বলবো না।

এ বিষয়ে জানতে অভিযুক্ত মোহাইমিনুল হক মিঠুর মোবাইল ফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করেও সাড়া মেলেনি।

অভিযুক্ত লুৎফর আলী বলেন, জমির মালিক মেহেরুন্নেসা সম্পর্কে আমার বেয়াইন। তিনি অামাকে বলেন, কাজের লোক ঠিক করে দিতে জমিতে ঘাস মারা বিষ দেওয়ার জন্য। পরে আমি লোক ঠিক করে দিয়েছি। তারা গিয়ে জমিতে বিষ দিয়েছে। আমি এতটুকুই জানি।

এ বিষয়ে ওই ইউনিয়নের চেয়ারম্যান গোলাম রাব্বানী বলেন, জমিতে বিষ প্রয়োগ করায় ও সেই জমির ঘাস খেয়ে গরুটি মারা গেছে। গরুর মালিক সহেল খুব দরিদ্র মানুষ। গরুটি মারা যাওয়ায় সে বড় ক্ষতিগ্রস্ত হলো।

আইনজীবীরা বলছেন, এ ধরনের ঘটনায় প্রাণিসম্পদ বিভাগের রিপোর্ট মামলার প্রমাণ হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। তবে আদালতে প্রমাণিত না হওয়া পর্যন্ত কারও দায় চূড়ান্তভাবে নির্ধারণ করা যাবে না।

রেজাউল করিম রেজা/এমএন/জিকেএস

Read Entire Article