কৃষিতে পরিবর্তন না এলে আগামীতে চাহিদা পূরণ সম্ভব হবে না

কৃষিতে পরিবর্তন না এলে আগামীদিনে দেশের মানুষের চাহিদা পূরণ সম্ভব হবে না বলে মন্তব্য করেছেন শীর্ষস্থানীয় শিল্পগ্রুপ প্রাণ-আরএফএলের চেয়ারম্যান ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) আহসান খান চৌধুরী। শনিবার (২৯ নভেম্বর) রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে ‘কৃষি ও খাদ্যে রাজনৈতিক অঙ্গীকার’ শীর্ষক চার দিনব্যাপী সম্মেলনের তৃতীয় দিনে ‘কৃষি ও গ্রামীণ অর্থনীতিতে রাজনৈতিক অঙ্গীকার’ শীর্ষক সভায় বিশেষ অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন। আহসান খান চৌধুরী বলেন, বর্তমানে কৃষিতে যে অবস্থা আছে, কৃষি পরিবর্তন হচ্ছে। সেজন্য আমরা সরকারের সহযোগিতা চাই, যেন সরকার আমাদের হেল্প করে। যারা সাংবাদিক আছেন, আপনাদের সহযোগিতা চাই। সাংবাদিকরা বিদ্যা, বুদ্ধি দিয়ে, গবেষণা দিয়ে মানুষকে জানিয়ে সাহায্য করবেন। তিনি বলেন, আমাদের যারা রাজনৈতিক পক্ষ আছেন, ওনারা সহায়তা করবেন রাজনীতি দিয়ে, প্রপার ইনফ্রাস্ট্রাকচার দিয়ে, প্রপার অবকাঠামো দিয়ে আমাদের এগিয়ে নিতে হেল্প করবেন। বাট আমি ব্যবসায়ী এখানে যেটা বলতে পারি সেটা হচ্ছে এই যে, কৃষিতে ব্যাপক পরিবর্তনের প্রয়োজন আছে। কৃষিতে যদি পরিবর্তিত না হয় তাহলে কিন্তু কৃষিতে মানুষের চাহিদা পূরণ আগাম

কৃষিতে পরিবর্তন না এলে আগামীতে চাহিদা পূরণ সম্ভব হবে না

কৃষিতে পরিবর্তন না এলে আগামীদিনে দেশের মানুষের চাহিদা পূরণ সম্ভব হবে না বলে মন্তব্য করেছেন শীর্ষস্থানীয় শিল্পগ্রুপ প্রাণ-আরএফএলের চেয়ারম্যান ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) আহসান খান চৌধুরী।

শনিবার (২৯ নভেম্বর) রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে ‘কৃষি ও খাদ্যে রাজনৈতিক অঙ্গীকার’ শীর্ষক চার দিনব্যাপী সম্মেলনের তৃতীয় দিনে ‘কৃষি ও গ্রামীণ অর্থনীতিতে রাজনৈতিক অঙ্গীকার’ শীর্ষক সভায় বিশেষ অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।

আহসান খান চৌধুরী বলেন, বর্তমানে কৃষিতে যে অবস্থা আছে, কৃষি পরিবর্তন হচ্ছে। সেজন্য আমরা সরকারের সহযোগিতা চাই, যেন সরকার আমাদের হেল্প করে। যারা সাংবাদিক আছেন, আপনাদের সহযোগিতা চাই। সাংবাদিকরা বিদ্যা, বুদ্ধি দিয়ে, গবেষণা দিয়ে মানুষকে জানিয়ে সাহায্য করবেন।

তিনি বলেন, আমাদের যারা রাজনৈতিক পক্ষ আছেন, ওনারা সহায়তা করবেন রাজনীতি দিয়ে, প্রপার ইনফ্রাস্ট্রাকচার দিয়ে, প্রপার অবকাঠামো দিয়ে আমাদের এগিয়ে নিতে হেল্প করবেন। বাট আমি ব্যবসায়ী এখানে যেটা বলতে পারি সেটা হচ্ছে এই যে, কৃষিতে ব্যাপক পরিবর্তনের প্রয়োজন আছে। কৃষিতে যদি পরিবর্তিত না হয় তাহলে কিন্তু কৃষিতে মানুষের চাহিদা পূরণ আগামীদিনে সম্ভব হবে না।

আহসান খান চৌধুরী বলেন, আমি মনে করি আমাদের দেশের চেয়ে যারা কৃষিতে এগিয়ে আছে, যেমন- নেদারল্যান্ডসের কথা আপনাদের বলতে চাই। আমরা একটু দেখি যে বাংলাদেশ কোন কোন জায়গায় পিছিয়ে আছে এবং যে জায়গায় আমরা পিছিয়ে আছি; আসুন আমরা চেষ্টা করি কোথায় গ্যাপ আছে; এটা দেখার দায়িত্ব কিন্তু আপনাদের (সাংবাদিকদের)। আপনি আপনার কাজ করেন, আমরা আমাদের ব্যবসায়িক কর্মকাণ্ড পরিচালনা করবো।

আরও পড়ুন
দেশের পণ্যমান উন্নত দেশগুলোর সঙ্গে না মেলায় রপ্তানি ব্যাহত হচ্ছে
কৃষির আধুনিকায়নে আসছে ২৫ বছরের মহাপরিকল্পনা
কাজের জন্য ঢাকায় যাওয়ার দিন ফুরিয়ে আসছে: আহসান খান চৌধুরী

তিনি বলেন, বাংলাদেশের কৃষি ক্ষেত্রে এখনো অনেক বিপ্লব সাধন হয়নি। আমি মনে করি আমাদের অনেক দূর এগিয়ে যাওয়ার সুযোগ আছে। আমরা আগাবো। কৃষির ক্ষেত্রে বলবো যে, আপনার রোলটা আপনি বোঝেন, আরও প্রগতিশীল কৃষির জন্ম দেন বাংলাদেশে। ভালো কৃষি বাংলাদেশের জন্য নিয়ে আসেন যেন বাংলাদেশের কৃষক আরও এগিয়ে যান। তাই একটু নতুন চিন্তাভাবনার দরকার আছে। প্রতি কয়েক বছরে ইন্ডাস্ট্রি যদি ডিফল্টে গিয়ে কিছু রিসেট বাটনে টিপ না দেওয়া হয়, তাহলে বোধয় ইন্ডাস্ট্রি প্রপারলি আগাতে পারবে না। আমি মনে করি কৃষিরও কিন্তু রিসেট বাটনের দরকার আছে।

মাছের ফার্মে নতুন প্রযুক্তি নিয়ে তিনি বলেন, আমরা মৌলিবাজারে একটা ফার্ম নিয়েছি। এটা ১ হাজার ৮০০ বিঘার একটা ফার্ম হবে। আমরা এখানে কার্প মাছের চাষ করবো। আইপিআরএস প্রযুক্তিতে চাষ হবে। আমাদের বাংলাদেশে আইপিআরএস প্রযুক্তি বিগত দিনে ছিল না, চীনে ছিল। এই আইপিআরএস প্রযুক্তি মানে মাছ খাবে কম বাড়বে বেশি। এটা হলো আইপিআরএস প্রযুক্তি। এই প্রযুক্তিতে মাছকে ভালোভাবে এক্সারসাইজ করানো হবে। একটা টানেলের মধ্যদিয়ে, এতে মাছ খুব অল্পতে বড় হবে। এই প্রযুক্তি আমরা আনতে যাচ্ছি। বাংলাদেশে বোধয় এটা তৃতীয় ফার্ম হবে। গোদাগাড়ীতেও (রাজশাহী) আমাদের ফার্ম আছে। এই মাছের জন্য আমরা কাজ করবো।

তিনি বলেন, মুরগির ক্ষেত্রে আমরা কাজ শুরু করেছি। বাংলাদেশে প্রান্তিক পর্যায়ে যারা ছোট কৃষক আছেন, তারা বর্তমানে যেভাবে মুরগির চাষ করছেন, এভাবে যদি তারা চাষ করেন, আগামী দিনে তারা বিলীন হয়ে যাবেন। তারা প্রতিযোগিতায় টিকবেন না।

ছোট ফার্মারদের সঙ্গে নিয়ে চলতে হবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমরা যারা বড় ফার্মার আছি, যেমন কাজি ফার্ম, প্যারাগন, নারিশ- এরকম যারা বড় ফার্মার আছে; আমাদের ছোট ফার্মারদের কিন্তু সঙ্গে নিতে হবে। এখন কীভাবে সঙ্গে নিতে হবে, আজ গভর্নরের সঙ্গে কথা বলছিলাম, আমাদের দেশে ছোট্ট একটা ফার্ম করতেও ৩০ কোটি টাকা লাগে। মরহুম প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের একটা চিন্তা ছিল, কো-অপারেটিভ টাইপের খামার। প্রত্যেকটা ডিস্ট্রিক্ট, প্রত্যেকটা থানায় যদি আমরা একটা একটা করে প্রোডাক্ট ডেভেলপ করতে পারি। এরকম আমরা কৃষককে যদি ইনটেনসিভ ফার্মিং করতে হেল্প করতে পারি, স্পেশালি মাছের ক্ষেত্রে, মুরগির ক্ষেত্রে; তাহলে বোধহয় আগামীদিনে আমরা খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ হতে পারবো। জাতীয় আকারে আমাদের জন্য খাদ্যের স্বয়ংসম্পূর্ণ হওয়া অত্যন্ত প্রয়োজন।

‘আমরা প্রাণ যখন মাছ, মুরগি নিয়ে কাজ করি, আমাদের একটা সংকল্প আমাদের এগিয়ে নেয়, সেটা হচ্ছে আমরা সবসময় চাই মাছের দাম কমে আসুক, মুরগির দাম কমে আসুক, মাংসের দাম কমুক। মাংসের দাম কমলে আরও বেশি মানুষ মাংস খেতে পারবে। আমিষের চাহিদা পূরণ হবে। স্বাস্থ্যবান বাঙালি আকারে পৃথিবীতে বাস করতে পারবো, এটা আমাদের লক্ষ্য। এই লক্ষ্যটা আমাদের একা বাস্তবায়ন করা সম্ভব না। আমাদের সরকারের শরণাপন্ন হতে হবে কীভাবে আমরা প্রান্তিক পর্যায়ে চাষিদের জন্য কোঅপারেটিভ অথবা কালেক্টিভ ফার্মিংয়ের মাধ্যমে আরও বড় ফার্ম তৈরি করতে পারি। কারণ ছোট ফার্ম করলে কৃষক কিন্তু টিকবে না।’ যোগ করেন আহসান খান চৌধুরী।

তিনি বলেন, আমাদের মাছে আগাতে হবে, আমাদের মুরগিতে আগাতে হবে, হর্টিকালচারে আগাতে হবে। আমরা আমাদের কথা যেটা বলবো সেটা হচ্ছে—আমারা যারা ব্যবসায়ি আছি, আমরা ব্যবসা করবো। আমরা এক জায়গা থেকে মাছ কিনবো, আরেক জায়গায় বিপণন করবো এবং কেনা-বেচার মধ্যে যেটা লাভ, আমরা পরিমিত লাভ করবো। আর যখন আমরা বেশি লাভ করি তখন সাংবাদিকরা আমাদের ধরিয়ে দেবেন যে আমাদের জন্য লাভ করাটা পরিমিত হচ্ছে না। তাহলে কিন্তু জবাবদিহিমূলক বাংলাদেশ আসবে, সুন্দর বাংলাদেশ আসবে এবং কৃষি মানুষের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে আসতে পারবে।

প্রাণ-আরএফএলের চেয়ারম্যান বলেন, আজ থেকে ৩০ বছর আগে থাইল্যান্ডের কৃষির অবস্থান বাংলাদেশের মতই ছিল। বাট তাদের রাজনৈতিক পরিমণ্ডলে তারা ব্যাপক পরিবর্তন করেছে এবং কৃষিতে ব্যাপক পরিবর্তন এসেছে। আশা করি আপনাদের তত্ত্বাবধানে এবং আমাদের সবার সমষ্টিগত প্রয়াসে কৃষি আগামীদিনে আরও এগিয়ে যাবে।

সাংবাদিকদের উদ্দেশে তিনি বলেন, বাংলাদেশের জন্য কৃষিটা একটা প্রয়োজনীয় ব্যাপার। আমি মনে করি যে আপনারা যারা কৃষি বিষয়ক সাংবাদিক আছেন, আপনাদের উদ্দেশে বলবো, আপনাদের রোলটা কিন্তু অত্যন্ত ব্যাপক। আপনারা কৃষকদের জন্য কাজ করে যাচ্ছেন। যেহেতু আমাদের দেশের কৃষকরা কিন্তু অত বেশি শিক্ষিত নন। কাজেই আমি মনে করি, আমাদের যারা সাংবাদিকরা আছেন, আপনাদের জন্য কিন্তু অত্যন্ত ইম্পর্টেন্ট যে আপনারা কিন্তু পুথিগত যে কাজগুলো আছে এটা কিন্তু করার দায়িত্ব আপনাদের।

আরএএস/ইএ

What's Your Reaction?

like

dislike

love

funny

angry

sad

wow