অমিয় দাশ, ফ্লোরিডা, যুক্তরাষ্ট্র
‘আছে, আছে। গোপন কথা হলো নিঃশ্বাসের মতো। একবার বুকের মাঝে নিলি মানে আর বের করা যাবে না। বড় নিশ্বাস নিয়ে পানিতে ডুব দেওয়ার মতো। দম নিয়ে ধরে থাকতে হবে, ছেড়ে দেওয়া যাবে না। তবেই সেটা গোপন থাকলো, বুঝলি?’
‘হুম। আমার তো কোনো গোপন কথা নেই। কেউ আমাকে গোপন কথা বলে না।’
‘আমি তোকে প্রথম একটা গোপন কথা বলব। তোর জীবনের প্রথম গোপন কথা, বুঝলি?’
‘আচ্ছা’
‘দম নিয়ে গোপন কথাটা বুকের মাঝে আটকে রাখতে পারবি?’
‘পারব।’
বলেই মাথা নেড়ে, বড় একটা নিঃশ্বাস নিয়ে আমি ঈশরাত আপুকে কথা দিলাম। এবার ঈশরাত আপু এদিক ওদিক সন্তর্পণে তাকিয়ে তার একটা বইয়ের মলাটের ভেতর থেকে একটা খাম বের করে আমাকে দিলো। বলল, ‘এটা তোর প্যান্টের পকেটে রাখ। সাবধানে রাখিস, দলিয়ে মুচড়িয়ে ফেলিস না। খামের ভেতরে একটা ডিজাইন আছে ভাঁজ করা। ওটা যেন ভাজ করা একটা প্রোজেক্ট। ঐরকম।’
বলেই ঘরের দিকে আঙ্গুলি নির্দেশ করে সদ্য তৈরি করা প্রজেক্ট ডিজাইনের কথা মনে করিয়ে দিলো।
‘তুই এটাকে ও পাড়ার লোকমান ভাই আছে না? তাকে দিবি।’
‘আচ্ছা।’
বলেই আমার একটু মনটা আন্দোলিত হলো। একটু ভয়ও হলো। জিজ্ঞেস করলাম,
‘লোকমান ভাই যদি বাড়িতে না থাকে? তাহলে কি করব?’
‘লোকমান ভাইয়ের বাড়িতে যাওয়ার দরকার নেই। তাদের বাড়ির পাশ দিয়ে হেঁটে যাবি। যদি দেখিস তাকে, তবে বলিস যে তার একটা জিনিস তোর কাছে আছে। খামটা বের করবি না যেন আগেভাগে।’
‘আচ্ছা।’
আচ্ছা বললাম বটে, কিন্তু ওই শেষ কথাটা ‘খামটা বের করবি না যেন আগেভাগে’ মনে করে আমার বুকটা দুরু দুরু করে উঠলো।
ঈশরাত আপুকে কথা দিয়েছি। আবার গোপন ব্যাপারটা গোপন রাখতে না পারলেও বেশ একটা ঝামেলা হবে বলে মনে হলো। কিন্তু যে আমাকে এত আদর করে, বসে আমার সাথে কথা বলে, অনেক গল্প করে, তার এটুকু উপকার করতে পারলে ভালোই হবে।
তাছাড়া বাতাসা, গজা, দানাদার, গুড়ের পাটালী, ইত্যাদি থেকে নিজেকে বঞ্চিত করতে ইচ্ছা হলো না। খামটা ধরে উঠে দাঁড়ালাম যেন আলগোছে পকেটের মধ্যে পেতে দেওয়া যায়। একটুও ভাঁজ না পড়ে। খামটিকে পকেটের মাঝে পুরে, একটু আলতোভাবে হাত বুলালাম ঠিকভাবে পাঁট করে রাখার জন্য। অনুভব করলাম খামটার মধ্যে কিছু একটা নরম দলা পাকানো বা কাগজ ভাঁজ করে ভরে দেওয়া হয়েছে। একটা প্যাটার্ন হাতে অনুভূত হলো। ঈশরাত আপু নিশ্চয়ই আর একটি ডিজাইনের প্রজেক্ট করে লোকমান ভাইকে পাঠাচ্ছে। কিন্তু গোপনে কেন?
ভাবনাটাকে বাদ সাধলো ঈশরাত আপু। বললো, ‘যা, এখনই যা। তা না হলে সন্ধ্যা হয়ে যাবে। তাকে হয়তো পাবি না।’
আমি দাঁড়িয়েই ছিলাম। চকিত আদেশ পেয়েই তাড়াতাড়ি রওনা হতেই ঈশরাত আপু হাত নেড়ে বললো, ‘সাবধানে যাস। দৌড়ানোর দরকার নেই। সাধারণত যেভাবে হাঁটিস সেভাবে হাঁটবি। যেন কেউ তোকে থামিয়ে কিছু জিজ্ঞেস না করে, বুঝলি?’
আমি হ্যাঁ সূচক ঘাড় নাড়িয়ে হাঁটতে শুরু করলাম। বড় রাস্তায় উঠে ওদের বাড়ির দিকে তাকিয়ে দেখলাম ঈশরাত আপু ঠাই দাঁড়িয়ে আছে বারান্দার খুঁটি ধরে। তাকিয়ে আছে আমার যাওয়ার দিকে। মনে মনে বললাম, ‘ঈশরাত আপু, আমি তোমার খামটা ঠিক লোকমান ভাইয়ের কাছে পৌঁছে দেব। চিন্তা করো না। কোনো এদিক-ওদিক হবে না, দেখো।’
চলবে...
এমআরএম/জিকেএস