কেউ যেন অর্থপাচার না করতে পারে সেই পলিসি করে যাবো: অর্থ উপদেষ্টা

5 days ago 7

সময় সাপেক্ষ হলেও দেশ থেকে পাচার হওয়া অর্থ ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করা হচ্ছে। তবে আগামীর জন্য এমন পলিসি করা হচ্ছে যাতে কেউ আর টাকা পাচার করতে পারবে না। শনিবার (১৬ নভেম্বর) ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয় আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন অন্তর্বর্তী সরকারের অর্থনৈতিক উপদেষ্টা ড. সালেহ উদ্দিন আহমেদ।

তিনি বলেন, গত ১৫ বছরে অর্থনীতিতে যে পরিমাণ ক্ষতি হয়েছে তার স্বল্পমেয়াদি সংস্কার কাজ চলছে। এরই মধ্যেই বৈদেশিক মুদ্রায় কিছুটা স্থিতিশীলতা ফিরে এসেছে। তবে সংস্কারের মাধ্যমে দ্রুত পুরো অর্থনীতির আমূল পরিবর্তন সম্ভব নয়।

সবকিছু এখন থেকে সঠিক পথে পরিচালনার জন্য আমরা একটি নতুন রাস্তা তৈরি করছি। পরবর্তীতে যারা আসবে তাদের এই রাস্তা দিয়ে হাঁটতে হবে। তাহলেই শান্তি ফিরে আসবে। আর যদি পুনরায় দুর্নীতি শুরু হয় তাহলে জনগণ আবারও ফুঁসে উঠতে পারে।

ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্র্যাক বিজনেস স্কুলের আয়োজনে ফাইনান্সিয়াল অ্যান্ড ইকোনমিক রিফর্মস ইন বাংলাদেশ শীর্ষক এ সংলাপ হয়। সংলাপে দেশের আর্থিক খাতে গুরুত্বপূর্ণ সংস্কার নিয়ে প্যানেল আলোচনা, পোস্টার প্রেজেন্টেশন এবং আর্থিক খাতের চলমান চ্যালেঞ্জসমূহ মোকাবিলার জন্য প্রয়োজনীয় সংস্কার বিষয়ে আলোচনা করা হয়।

অনুষ্ঠানে উপদেষ্টা আরও বলেন, সবাই বলছে এত কিছু করার পরও মূল্যস্ফীতি কেন কমছে না। এর প্রধান কারণ আগের সরকারের ভুল নীতি। এতদিন বিবিএসসহ অন্যান্য সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো যেসব তথ্য দিয়ে এসেছে সেগুলোতে প্রশ্ন রয়েছে। আমি অর্থ মন্ত্রণালয়কে নির্দেশ দিয়েছি তথ্য প্রবাহ সঠিক রাখতে। সঠিক তথ্য না আসলে অন্যান্য তথ্যগুলো ভুল আসবে। নীতিমালা প্রণয়ন ঠিক হবে না। এতদিন স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা ছিল না বলে এই সমস্যা হয়েছে। একের পর এক দুর্নীতি ও অন্যায় হয়েছে, যার মাশুল দিচ্ছে দেশের জনগণ।

ফিজিবিলিটি টেস্ট না করেই অনেক প্রকল্প নেওয়া হয়েছিল বলেও মন্তব্য করেন অর্থ উপদেষ্টা। তিনি বলেন একটি প্রজেক্ট থেকে কত টাকা আয় হবে, কত টাকা ব্যয় হবে, কত দিন সময় লাগবে এবং এসব প্রজেক্টে বিপরীতে নেওয়া ঋণের সুদের হার কি হবে, এসব বিষয়ে কোনো গবেষণা করা হয়নি। উচ্চ সুদে ঋণ নেওয়া হয়েছে। কিন্তু সরকার পরিবর্তনের পরেই একটি সংস্থা আমাদের উচ্চ সুদে ঋণ দিতে চেয়েছিল। আমরা প্রত্যাখ্যান করেছি। কারণ উচ্চ সুদের ঋণ নিলে আমরা পরিশোধ করতে পারবো না।

সদ্য সাবেক গভর্নরের ওপর শ্রদ্ধা রেখে তিনি বলেন, উইথ ডিউ রেসপেক্ট আমি বলতে চাই সাবেক গভর্নর ৪২ বিলিয়ন ডলার রিজার্ভ থেকে বিক্রি করতে করতে ৩০ বিলিয়নে নিয়ে আসলেন। কারণ ছিল বৈদেশিক মুদ্রা বাজার স্থিতিশীল করা। কিন্তু কোনো কাজই হয়নি। ১২ বিলিয়ন ডলার নিঃশেষ করে তিনি এখন ঘুমিয়ে আছেন। কিন্তু কোথায় আছেন জানি না। আমরা উত্তরাধিকার সূত্রে পলিসিগত লিগ্যাসি বা নীতিগত দীর্ঘসূত্রতা পেয়েছি। যার কারণে কোনো কিছু পরিবর্তন করতে চাইলেই দ্রুত করা যায় না।

সময় সাপেক্ষ হলেও দেশ থেকে পাচার হওয়া অর্থ ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করা হচ্ছে। তবে আগামীর জন্য এমন পলিসি করা হচ্ছে যাতে

অন্যদিকে সংলাপে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) সম্মানীয় ফেলো দেবপ্রিয় ভট্টাচার্যও উন্নয়ন বয়ানের সমালোচনা করে বলেন, উন্নয়নের যে বয়ান সে উন্নয়নের বয়ানের ব্যবচ্ছেদ না করতে পারি, তাহলে আগানো সম্ভব না।

তিনি বলেন, উন্নয়নের ট্রাজেক্টরির সমস্যা হচ্ছে প্রবৃদ্ধির যে চিত্র আমাদের দেওয়া হচ্ছে তাতে তথ্য-উপাত্তের রাজনীতিকরণ করা হয়েছে। এর ফলে দেখা যাচ্ছে জিডিপি বাড়ছে কিন্তু বেসরকারি খাতের বিনিয়োগ বাড়ছে না।

তথ্য-উপাত্ত যে প্রশ্নবিদ্ধ তা বোঝাতে তিনি বলেন, এত জিডিপি হচ্ছে কিন্তু ট্যাক্স জিডিপি বাড়েনি। অনেক বছর হলো এটা ৮-৯ শতাংশে আটকে গেল এত টাকা কই গেল?

বিগত সময়ে বিভিন্ন খাতের মধ্যে ‘ইমব্যালেন্স’ তৈরি করা হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, কেউ কেউ বলে আমরা কি মিডল ইনকাম ট্র্যাপে পড়তে যাচ্ছি? আমি মনে করি, আমরা এরই মধ্যে মিডল ইনকাম ট্র্যাপেই আছি।

দেবপ্রিয় বলেন, রাষ্ট্রের মেরামত যদি না হয় তাহলে ‘দুই পয়সার সংস্কার’ দিয়ে আগানো যাবে না। ফলে এর জন্য প্রথমে ‘অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা’ আনতে হবে।

তিনি বিনিময় হার, নিত্যপণ্যের বাজার নিয়ন্ত্রণসহ অর্থনীতির অন্যান্য জায়গায় স্থিতিশীলতা আনতে অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে ‘আপিল’ করেন।

অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে আরও উপস্থিত ছিলেন ব্র্যাক ব্যাংকের চিফ এক্সিকিউটিভ অফিসার অ্যান্ড ম্যানেজিং ডিরেক্টর সেলিম আর এফ হোসেন এবং বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের কমিশনার ফারজানা লালারুখ।

এনএইচ/এমআইএইচএস/জেআইএম

Read Entire Article