কেন বারবার কাঁপছে তুরস্কের মাটি?
ইউরোপ ও এশিয়া দুই মহাদেশের সংযোগস্থলে বিশাল ভূখণ্ড নিয়ে অবস্থিত তুরস্ক। আর এই ভূখণ্ডের নিচে লুকিয়ে রয়েছে প্রকৃতির এক ভয়ানক শক্তি- ভূমিকম্প। সময়টি ছিল ২০২৩ সালের ৬ ফেব্রুয়ারি, ভোরের নিস্তব্ধতায় যখন অধিকাংশ মানুষ গভীর ঘুমে ডুবে ছিল কে জানত সেখানে লুকিয়ে রয়েছে মৃত্যুর নীরব অপেক্ষা।
তুরস্কের দক্ষিণাঞ্চলে সেদিন অল্প সময়ের ব্যবধানে আঘাত হানে পরপর দুটি ভয়াবহ ভূমিকম্প। প্রথমটির মাত্রা ছিল ৭.৮, আর পরেরটি ছিল ৭.৫ মাত্রার। দুটি শক্তিশালী কম্পন পুরো অঞ্চলকে ধ্বংসস্তূপে পরিণত করে। প্রাণ হারায় ৫০ হাজারের বেশি মানুষ।
ভূমিকম্প দুটি এতটাই শক্তিশালী ছিল যে, কোথাও কোথাও মাটি ফেটে দুই ভাগ হয়ে যায়। পরপর দুটি ভূমিকম্পের পর কয়েকটি শক্তিশালী আফটারশক ও কম্পনও আঘাত হানে ওই অঞ্চলে। ২০২৩ সালের সেই আঘাত এখনো পুরোপুরি কাটিয়ে উঠতে পারেনি দেশটি। দুই বছরেরও বেশি সময় পেরিয়ে গেলেও সেসময় ঘরছাড়া হওয়া কয়েক লাখ মানুষ এখনো ঘরে ফিরতে পারেননি।
ভয়াবহ সেই দুর্যোগের ক্ষত কাটতে না কাটতেই ২ বছর পর আরেকটি শক্তিশালী ভূমিকম্প দেশটিকে নাড়িয়ে দিল। সোমবার পশ্চিম তুরস্কে রিখটার স্কেলে ৬.১ মাত্রার এক শক্তিশালী ভূমিকম্প আঘাত হেনেছে।
স্থানীয় সময় ৭টা ৫৩ মিনিটে ইস্তাম্বুলের কাছে বালিকেসির প্রদেশে এই ভূমিকম্প অনুভূত হয় এবং দ্রুত আশপাশের কয়েকটি প্রদেশে ছড়িয়ে পড়ে। সংবাদমাধ্যম আফাদের তথ্যমতে, ভূমিকম্পটির কেন্দ্র ছিল ভূপৃষ্ঠ থেকে প্রায় ১১ কিলোমিটার গভীরে। এতে একটি তিনতলা ভবন ধসে পড়ে, যাতে ছয়জন মানুষ বাস করতেন। সেই ধ্বংসস্তূপ থেকে চারজনকে উদ্ধার করা হয়েছে।
গবেষকরা বলছেন, তুরস্কের ভৌগোলিক অবস্থানই এই ভূমিকম্পের মূল কারণ। বলা যায় তুরস্ক এমন একটি অঞ্চলে অবস্থিত যা পৃথিবীর ভূত্বকের সবচেয়ে সক্রিয় ভূ-কম্পন অঞ্চলের মধ্যে অন্যতম। তুরস্কের নিচে বেশ কয়েকটি ভূতাত্ত্বিক ফল্ট লাইন রয়েছে। এর মধ্যে বড় দুটি ফল্ট উত্তর আনাতোলিয়ান ফল্ট এবং পূর্ব আনাতোলিয়ান ফল্ট।
এই দুটি বিশাল ভূ-ফাটল হলো ইউরেশীয় ও আরবীয় টেকটোনিক প্লেটের সংঘর্ষস্থল। এই ফল্টগুলোতে তীব্র চাপ জমা হলে প্লেটগুলো হঠাৎ সরে গিয়ে ভূমিকম্পের সৃষ্টি হয়। আবার আরবীয় প্লেট ধীরে ধীরে উত্তর দিকে সরে যাচ্ছে, ফলে তুরস্ক ইউরেশীয় প্লেটের দিকে চাপ খাচ্ছে। এই চাপ জমে গিয়েও ভূমিকম্প তৈরি করছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, তুরস্ক এমন টেকটোনিক প্লেটের ওপর অবস্থিত যেখানে শক্তিশালী ভূমিকম্পের শঙ্কা রয়েই গেছে। এছাড়া শক্তি সঞ্চয় করে রাখা ভূমিকম্প অনুভূত হলে আবারও ২০২৩ সালের পরিস্থিতি ফিরে আসতে পারে।