কেন বিসিবি নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ালেন মাহবুব আনাম?

6 hours ago 7

বিসিবি নির্বাচন ঘিরে এখন পর্যন্ত কোন কিছুই যেন নিশ্চিত নয়। মাঠ ও মাঠের বাইরের ক্রিকেটীয় সব সমীকরণের সঙ্গে জড়িত- ঝানু সংগঠকরাও নিশ্চিত করে বলতে পারছেন না, আসলে কী হচ্ছে বা কী হবে? এ মুহূর্তে পুরো বিসিবির নির্বাচন কার্যক্রম যেন ধোঁয়াশাচ্ছন্ন পরিস্থিতিতে নিমজ্জিত।

সবচেয়ে বড় কথা বিসিবি নির্বাচনে যাদের কুশীলব ভাবা হচ্ছিল, তারাই একের পর এক পর্দার অন্তরালে চলে যাচ্ছেন। জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের পর অন্তর্বর্তী সরকারের মনোনীত হিসেবে বিসিবি সভাপতি হন ফারুক আহমেদ।

এরপর বিসিবির নির্বাচনী হিসাব-নিকাশে প্রাথমিকভাবে ফারুকের সম্ভাব্য প্রতিপক্ষ হিসেবে তামিম ইকবালের নাম উঠে আসে। তামিমকেও একটা সময় বেশ সরব মনে হচ্ছিল। পরে হার্ট অ্যাটাকের পর তিনিও খানিকটা গুটিয়ে যান। তবে সভাপতি হওয়ার দৌড়ে না থাকলেও জানা গেছে, তামিম পরিচালক পদে নির্বাচন করবেন।

কিন্তু সময় গড়ানোর সাথে সাথে ফারুক ও তামিমকে পিছনে ফেলে এগিয়ে আসেন জাতীয় দলের আরেক সাবেক অধিনায়ক আমিনুল ইসলাম বুলবুল। কয়েক মাস আগে ফারুককে সরিয়ে বুলবুলকে বিসিবি সভাপতি পদে নিয়োগ দিয়েছে সরকার।

এরপর নানা হিসাব-নিকাশে খুব স্বাভাবিকভাবেই মনে হচ্ছিল, বুলবুলই হবেন বিসিবির আগামী নির্বাচনে বর্তমান সরকারের মনোনীত প্রার্থী। যেহেতু বিসিবি পরিচালক পর্ষদ নির্বাচন অক্টোবরে অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা, তাই তেমনটা মনে হওয়াই খুব স্বাভাবিক।

তবে আমিনুল ইসলাম বুলবুলও নির্বাচন করবেন কি করবেন না, তা নিয়ে সংশয় আছে। তিনি নিজে এখন পর্যন্ত নির্বাচন করার ঘোষণা দেননি। বুলবুল নির্বাচন না করলে বিসিবির পরবর্তী সভাপতি কে হবেন? তা নিয়েও আছে জল্পনা-কল্পনা।

সম্ভাব্য সভাপতি পদে বিসিবির সাবেক সাধারণ সম্পাদক, এশিয়ান ক্রিকেট কাউন্সিল এসিসির সাবেক প্রধান নির্বাহী সৈয়দ আশরাফুল হক, মোহামেডানের প্রতিষ্ঠিত সংগঠক ও শিল্পপতি এবং বিওএর সাবেক মহাসচিব কুতুব উদ্দীন আহমেদের নামও শোনা গেছে। পাশাপাশি বিসিবির সাবেক সভাপতি ও বিএনপির শেষ শাসনামলের সংসদ সদস্য আলী আসগর লবির নামও উচ্চারিত হয়েছে।

কিন্তু ওপরে যাদের নাম বলা হলো তাদের সবাইকে ছাপিয়ে অলক্ষ্যে মাহবুব আনামের কথাই বেশি শোনা যাচ্ছিল। কারণ সব রকম সমীকরণ তাকে ঘিরেই আবর্তিত হচ্ছিল।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এ মুহূর্তে আমিনুল ইসলাম বুলবুলের নেতৃত্বে বিসিবির যে ১০ পরিচালক আছে, তার মধ্যে মাহবুব আনাম, ইফতিখার রহমান মিঠু ও ফাহিম সিনহা সবচেয়ে মজবুত অবস্থানে ছিলেন। ঢাকার ক্লাবগুলো প্রতিনিধি হিসেবে যে ১২ পরিচালক থাকবেন, সেখানে এই তিনজনের থাকার সম্ভাবনা অনেক বেশি ছিল। ঢাকার ৭২ ক্লাব কাউন্সিলরের প্রায় অর্ধেকেরও বেশী মাহবুব আনাম ও তার খুব কাছের হাতে গোনা কয়েকজনের পকেটেই ছিল। অন্তত ৩৮ থেকে ৪০ ক্লাবের সাপোর্ট ছিল এ তিনজনের ব্লকে।

এতকিছুর পরও কেন মাহবুব আনাম সরে দাঁড়ালেন? যেখানে তাকে কেন্দ্র করেই ছিল সবকিছু। সেখানে বিসিবি পরিচালনা পর্ষদে নির্বাচন না করার সিদ্ধান্ত নিলেন কেন? বিসিবির ভেতর থেকে একদম ভেতরের খবর, মাহবুব আনামের সেই দুর্গে ফাটল ধরা পড়েছে। তার প্রতিপক্ষ গ্রুপ দাঁড়িয়ে গেছে।

একটি সূত্রের খবর, গাজী গ্রুপের সালাউদ্দীন, বসুন্ধরার শাহনিন তানিম, ইশতিয়াক সাদেক এবং তামিম ইকবালরা মিলে আরও একটি ‘কাউন্টার ’ মোর্চা তৈরি করে ফেলেছেন। সেই মোর্চাও বেশ শক্তিশালী। তাদের হাতেও প্রায় ২৫-৩০টি ক্লাব আছে। কাজেই এক সময় সব সমীকরণ মাহবুব আনাম কেন্দ্রিক মনে হলেও সময়ের গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে সেটা এখন অন্যদের হাতে চলে যাওয়ার উপক্রম হয়েছে এবং মাহবুব আনাম এন্ড কোংয়ের একটা শক্ত প্রতিপক্ষও তৈরি হয়েছে। এবং তারা ভেতরে ভেতরে মাহবুব আনামকে কঠিন চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিতে প্রস্তুত।

প্রাথমিকভাবে মনে হচ্ছিল মাহবুব আনামদের সঙ্গে গাজী গ্রুপের সালাউদ্দীন আর বসুন্ধরা শাহনিয়ান তানিম, ইশতিয়াক সাদেকরাও যুক্ত হবেন। সবাই একসাথে এক প্যানেলে নির্বাচন করবেন। কিন্তু ভেতরের খবর হল, সেই অবস্থা এখন আর নেই। সে মোর্চায় বড় ধরনের দূরত্ব সৃষ্টি হয়েছে। মাহবুব আনাম নিজে মুখ মুখ ফুটে কিছু না বললেও তার সুহৃদ ও শুভানুধ্যায়ীদের দাবি, করা হচ্ছে নির্বাচনী কৌশল হিসেবে মাহবুব আনামকে ব্যক্তিগত ও সামাজিকভাবে দুর্বল করে তোলার চেষ্টা চলছে। এর পক্ষে অতি সম্প্রতি একটি ফেসবুক পোষ্টকে দলিল হিসেবে উপস্থাপন করছে মাহবুব আনামের ঘনিষ্ঠজনরা।

বলে রাখা দরকার, মাহবুব আনাম ও তার স্ত্রী আড়াই লাখ ডলার ব্যয়ে ক্যারিবীয় দ্বীপপুঞ্জ অ্যান্টিগা ও বারমুডায় জায়গা কিনেছেন।এবং সেখানকার নাগরিকত্বের আবেদনও করেছেন। ঘটনাটি ২০১৬ সালের। কিন্তু ঠিক ৩/৪ দিন আগে হঠাৎ সেটা ফেসবুকে পোস্ট করা হয়েছে। খুব স্বাভাবিকভাবেই সেটা ভাইরাল হয়েছে। এবং বেশির ভাগ ক্রিকেট অনুরাগী ও সাধারণ মানুষ এটাকে নেতিবাচক হিসেবে নিয়েছেন। এর বাইরে দীর্ঘ প্রায় ২৫ বছর বিসিবিতে থাকাটাও একটা নেতিবাচক ধারণার উদ্রেক ঘটিয়েছে।

জানা গেছে ফেসবুকের ওই পোস্ট মাহবুব আনামকে করেছে প্রশ্নবিদ্ধ। সব মিলিয়ে মাহবুব আনাম নিজেকে সরিয়ে নিতে আসলে বাধ্য হয়েছেন। তাতে কি তার প্রতিপক্ষের চ্যালেঞ্জের মুখে? সে প্রশ্নের জবাবে মাহবুব আনাম বলেন, ‘আমি কোন চ্যালেঞ্জের মুখে দাঁড়াতে চাই নি। সামগ্রিক পরিস্থিতিটা নোংরা মনে হচ্ছে। সব কিছু কেমন নোংরা দেখাচ্ছে। তাই নিজেকে সরিয়ে নিয়েছি। '

তবে ক্রিকেট পাড়ার একাংশর মত, দীর্ঘদিন বোর্ডে থাকা এবং বিশেষ করে গত ১৫ বছর আওয়ামী লিগ সরকারের বোর্ডে থাকাটা মাহবুব আনামের জন্য নেতিবাচক হয়েছে। ব্যক্তি জীবনে বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদের অনুসারী হলেও নাজমুল হাসান পাপন ও তারও আগে আ হ ম মোস্তফা কামালের বোর্ডে প্রায় দেড় যুগ থাকায় নিজ মহলেও খানিক বিরাগভাজন হয়েছেন মাহবুব আনাম।

মাহবুব আনামের কাছের সূত্র জানিয়েছে, মাহবুব আনামের পরিবার বিশেষ করে তার স্ত্রী ও সন্তানরা এ ব্যাপারগুলোকে আমলে এনেছেন। এবং তারা মনে করছেন এতে করে মাহবুব আনামের ব্যক্তি ইমেজ ক্ষুণ্ন ও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। জানা গেছে সে কারণেই মূলত বিসিবি থেকে সরে যাবার পরামর্শটা এসেছে তার পরিবারের পক্ষ থেকে। আর তাই শেষ পর্যন্ত বিসিবি নির্বাচনের বাইরে থাকার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন মাহবুব আনাম।

এআরবি/আইএইচএস

Read Entire Article