কেবলার দিকে পা দিলে কি গোনাহ হবে? যা বলছেন বিশেষজ্ঞ আলেমরা

7 hours ago 7

মানুষ স্বপ্ন ছাড়া বাঁচতে পারে না। কারও স্বপ্ন ধন-সম্পদ, কারও স্বপ্ন খ্যাতি, আবার কারও স্বপ্ন ভালোবাসা। কিন্তু একজন মুমিনের সবচেয়ে বড় স্বপ্ন হলো আল্লাহর ঘর কাবাঘরের দিকে চেয়ে থাকা, বাইতুল্লাহর তাওয়াফ করা আর মদিনার সবুজ গম্বুজের নিচে দাঁড়িয়ে প্রিয় নবীজিকে (সা.) সালাম জানানো। এ স্বপ্নই তার জীবনের প্রেরণা, বুকের আশা, মনের শক্তি। এই স্বপ্ন কখনো পূর্ণ হয় জীবনের প্রথম প্রহরে, কখনো হয় অন্তিম মুহূর্তে। কারও জীবনে একাধিকবারও আসে সে সৌভাগ্য, আবার কত মানুষ আছে যারা শুধু স্বপ্ন দেখেই চলে যান না-ফেরার দেশে।

এই প্রবল আবেগ, ভালোবাসা আর শ্রদ্ধার জায়গা থেকেই কাবা ও কেবলা নিয়ে মানুষের সংবেদনশীলতা প্রবল। আর সেই সংবেদনশীলতার কারণেই নতুন করে সামনে এসেছে একটি প্রশ্ন, কেবলার দিকে পা দেওয়া কি গোনাহের কাজ? সম্প্রতি বিষয়টি নিয়ে ব্যাপক আলোচনা চলছে। কেউ একেবারেই হারাম বলছেন, আবার কেউ বলছেন এতে কোনো দোষ নেই। বিশেষ করে পশ্চিম দিকে পা দিয়ে বসা বা শোয়া নিয়ে তৈরি হয়েছে মতভেদ। এতে সাধারণ মানুষের মধ্যে দেখা দিয়েছে বিভ্রান্তি।

চলুন, জেনে নিই কেবলার দিকে পা দিলে গোনাহ হবে কি না—

বিশেষজ্ঞ আলেমরা বলছেন, সম্মান প্রদর্শন একটা আপেক্ষিক বিষয়। এক জায়গায় কোনো একটা কাজকে সম্মান বলা হলেও ভিন্ন জায়গায় ওই কাজকে অসম্মানের মনে করা হয়। তাই যে সমাজে কোনো কিছুর দিকে পা রাখাকে অসম্মানের মনে করা হয়, সে সমাজে অবশ্যই কাবার দিকে পা রাখা জায়েজ হবে না। এমনকি অসম্মানের জন্য যদি কেউ কাবার দিকে পা রাখে তাহলে সেটা কুফুরি কাজের শামিল।

তবে, কোনো বিষয় ততক্ষণ পর্যন্ত হারাম সাব্যস্ত হবে না যতক্ষণ না হারাম হওয়ার অকাট্য দলিল পাওয়া যাবে। পশ্চিম দিকে পা রাখা হারাম মর্মে কোরআন-হাদিসে কোনো অকাট্য দলিল পাওয়া যায় না। সে জন্য পশ্চিম দিকে পা রাখাকে ঢালাওভাবে হারাম বলা যাচ্ছে না। কিন্তু আমাদের মনে রাখতে হবে, কাবা আল্লাহর নিদর্শনগুলোর মধ্যে অন্যতম বিশেষ একটি নিদর্শন। আর আল্লাহ তায়ালার নিদর্শনগুলোকে সর্বোচ্চ সম্মান প্রদর্শন করা মানুষের ওপর ফরজ। কোরআনে বলা হচ্ছে, ‘আর যে কেউ আল্লাহর নিদর্শনগুলো প্রতি সম্মান প্রদর্শন করল, তা তো তার হৃদয়ের আল্লাহভীতিপ্রসূত। (সুরা হজ : ৩২)


রাজধানীর জামিয়াতুল ইসলামিয়া বায়তুস সালামের ফতোয়া বিভাগীয় প্রধান মুফতি আব্দুর রহমান হোসাইনী কালবেলাকে বলেন, কোনো ওজর ছাড়া (অকারণে) ইচ্ছাকৃতভাবে কিবলার দিকে পা দেওয়া মাকরুহে তাহরিমি ও গোনাহের কাজ। এমনকি ফুকাহায়ে কেরাম বলেছেন, ইচ্ছাকৃতভাবে কাবার দিকে পা ছড়িয়ে দেওয়া ব্যক্তির সাক্ষ্য গ্রহণযোগ্য নয়। আর সাক্ষ্য কেবল ফাসেকি ও পাপ কাজের কারণে অগ্রহণযোগ্য হয় ।

তবে যদি ইচ্ছাকৃতভাবে না হয় বা অবহেলা ও তুচ্ছ জ্ঞান করার মানসিকতা না থাকে; বরং অনিচ্ছাকৃত ও উদাসীনতার কারণে কেবলার দিকে পা দেওয়া হয়ে যায়, তাহলে গোনাহ হবে না। তবে এটি নিঃসন্দেহে আদব পরিপন্থি কাজ। (রাদ্দুল মুহতার ২/৪২৭, কিতাবুস সালাত, মাতলাব : ফি আহকামিল মাসাজিদ, দারু আলমিল কুতুব)

جاء في الدر المختار 
"(ويكره) تحريماً (استقبال القبلة بالفرج) ولو (في الخلاء) بالمد: بيت التغوط، وكذا استدبارها (في الأصح كما كره) لبالغ (إمساك صبي) ليبول (نحوها، و) كما كره (مد رجليه في نوم أو غيره إليها) أي عمداً لأنه إساءة أدب، قاله منلا ناكير، (أو إلى مصحف أو شيء من الكتب الشرعية إلا أن يكون على موضع مرتفع عن المحاذاة) فلايكره، قاله الكمال".

وفي رد المحتار 
"(قوله: مد رجليه) أو رجل واحدة ومثل البالغ الصبي في الحكم المذكور ط (قوله أي عمداً) أي من غير عذر أما بالعذر أو السهو فلا ط....(قوله: لأنه إساءة أدب) أفاد أن الكراهة تنزيهية ط، لكن قدمنا عن الرحمتي في باب الاستنجاء أنه سيأتي أنه بمد الرجل إليها ترد شهادته. قال: وهذا يقتضي التحريم فليحرر، (قوله: إلا أن يكون) ما ذكر من المصحف والكتب؛ أما القبلة فهي إلى عنان السماء". 
( كتاب الصلاة، بَابُ مَا يُفْسِدُ الصَّلَاةَ وَمَا يُكْرَهُ فِيهَا، مطلب في الاحكام المساجد، ٢ / ٤٢٧، ط: دار عالم الكتب) فقط والله أعلم


প্রখ্যাত ইসলামী স্কলার শায়খ আহমাদুল্লাহ বলেন, কেবলার দিকে পা দিয়ে ঘুমানো, বসা বা শোয়া ওলামায়ে আহনাফের মতে মাকরুহ। অনুচিত। কারণ নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাহি ওয়া সাল্লাম কেবলার দিকে ফিরে পেশাব-পায়খানা করতে নিষেধ করেছেন। নবীজির (সা.) এই নিষেধাজ্ঞা ছিল কেবলার প্রতি সম্মান প্রদর্শনের খাতিরে। আর কেবলা বা কাবার দিকে পা লম্বা করে বসলে বাহ্যিক দৃষ্টিতে অসম্মান হয়। তাই কোনো ওজর ছাড়া কাবার দিকে ইচ্ছে করে পা দিয়ে বসা অনুচিত ও আদবের খেলাফ।

তবে এ বিষয়ে সৌদি উলামায়ে কেরামদের মত ভিন্ন। আহমাদুল্লাহ জানান, সৌদি আলেমদের মতে কেবলার দিকে পা দিয়ে বসলে কোনো অসুবিধা নেই। তাদের দাবি, কোরআন-হাদিসের কোথাও এ ব্যাপারে (পা দেওয়া) সরাসরি নিষেধ করা হয়নি।

আহমাদুল্লাহ আরও বলেন, যেহেতু এটা ইজতেহাদি বিষয়, তাই সতর্কতা ও অধিকতর নিরাপদ মত হলো, কেবলার দিকে ইচ্ছেকৃত পা দিয়ে না বসা।

Read Entire Article