কেমন অবস্থায় আছে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ?

2 months ago 7

# দেশের মোট রিজার্ভ ২৭.৩১ বিলিয়ন মার্কিন ডলার
# বিপিএম৬ অনুযায়ী, রিজার্ভ ২২.২৪ বিলিয়ন ডলার
# অর্থবছরের প্রথম ১০ মাসে রপ্তানি বেড়েছে ৮.৬০ শতাংশ
# ২১ জুন পর্যন্ত রেমিট্যান্স এসেছে ২৯.৫০ বিলিয়ন ডলার
# প্রতি মাসে প্রায় ৫.৫ বিলিয়ন ডলার আমদানির দায় পরিশোধ
# ১১ মাসে ৩.৭৮ বিলিয়ন ডলার বৈদেশিক ঋণ পরিশোধ

বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ একটি দেশের অর্থনৈতিক স্বাস্থ্য নির্দেশ করে। এটি আমদানি ব্যয় মেটাতে, মুদ্রার মান স্থিতিশীল রাখতে, বিদেশি বিনিয়োগকারীদের আস্থা অর্জন এবং বৈদেশিক ঋণ পরিশোধ করতে সহায়তা করে। বৈশ্বিক সংকট মোকাবিলা করার জন্যও রিজার্ভ গুরুত্বপূর্ণ।

একটি দেশের জন্য তিন মাসের আমদানি ব্যয় মেটানোর মতো বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ থাকাকে নিরাপদ বলে মনে করা হয়। এর মানে হলো, যদি কোনো দেশ তিন মাস ধরে কোনো পণ্য আমদানি করতে না পারে, তবে তাদের রিজার্ভ তাদের সেই সময়টুকু কাটিয়ে উঠতে সাহায্য করবে। সাধারণভাবে, একটি দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ যত বেশি, অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা তত ভালো বলে মনে করা হয়।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ তথ্যানুযায়ী, মঙ্গলবার (২৪ জুন) পর্যন্ত দেশের মোট (গ্রস) রিজার্ভ দাঁড়িয়েছে প্রায় ২ হাজার ৭৩০ কোটি ৬০ লাখ ডলার বা প্রায় ২৭ দশমিক ৩১ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে। আর আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) নির্দেশিত হিসাব পদ্ধতি বিপিএম৬ অনুযায়ী, রিজার্ভের পরিমাণ ২ হাজার ২২৪ কোটি ৫৭ লাখ ডলার বা ২২ দশমিক ২৪ বিলিয়ন ডলার।

এই রিজার্ভ থেকে বর্তমানে প্রতি মাসে আমদানির দায় বাবদ প্রায় সাড়ে ৫ বিলিয়ন ডলার পরিশোধ করা হচ্ছে। বর্তমান রিজার্ভ দিয়ে ৪ মাসের আমদানি দায় পরিশোধ করা সম্ভব।

অর্থনীতিবিদরা বলছেন, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের পতন ঠেকিয়ে এখন তা তুলনামূলক স্বস্তিদায়ক অবস্থায় রয়েছে। তবে এখানেই থেমে গেলে চলবে না, রিজার্ভকে টেকসই ও শক্ত ভিতের ওপর দাঁড় করাতে হবে।

রিজার্ভ পতনের পেছনের কারণ

বাংলাদেশের ইতিহাসে ২০২১ সালের আগস্টে বৈদেশিক মুদ্রার সর্বোচ্চ মোট রিজার্ভ ছিল ৪৮ দশমিক ০৬ বিলিয়ন ডলার। কিন্তু কোভিড মহামারি পরবর্তী সময়ে হুট করে আমদানি ব্যয় ব্যাপক বেড়ে গেলে রিজার্ভ কমতে শুরু করে। এছাড়া ভুয়া আমদানি বিল, অতিরিক্ত ইনভয়েসিং, হুন্ডি লেনদেনসহ নানা উপায়ে অর্থপাচার, অবৈধ বিদেশি বিনিয়োগ বৃদ্ধিসহ বিভিন্ন কারণে রিজার্ভ কমতে কমতে মোট রিজার্ভ ২৫ বিলিয়ন ডলারের ঘরে নেমে আসে। ২০২৪ সালের ৩১ জুলাই আওয়ামী লীগ সরকারের শেষ সপ্তাহে মোট রিজার্ভ ছিল ২৫ দশমিক ৮২ বিলিয়ন ডলার। তখন বিপিএম-৬ অনুযায়ী রিজার্ভ ছিল ২০ দশমিক ৩৯ বিলিয়ন ডলার।

শান্তিতে নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে গত বছরের ৮ আগস্ট অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর রিজার্ভের পতন ঠেকাতে ও রিজার্ভ বাড়াতে নানা উদ্যোগ নেয়।

‘যদি কোনো দেশের তিন মাসের আমদানি দায় মেটানোর পর্যাপ্ত রিজার্ভ থাকে তাহলে সেটাকে খারাপ বলা যাবে না। এটা সন্তোষজনক অবস্থায় রয়েছে বলে ধরা হয়ে থাকে। বর্তমান যে রিজার্ভ আছে তা দিয়ে আমাদের চার মাসের বেশি সময়ের আমদানি দায় মেটানো সম্ভব। অর্থাৎ আমরা বেশি স্বস্তিদায়ক অবস্থায় আছি বলা যেতে পারে।’ -বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক আরিফ হোসেন খান

বর্তমানে রিজার্ভের অবস্থা

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্যমতে, চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাইয়ের শুরুতে বিপিএম৬ অনুযায়ী, দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ছিল ২১ দশমিক ৬৮ বিলিয়ন ডলার। তবে জুলাইয়ের প্রথম সপ্তাহেই এশিয়ান ক্লিয়ারিং ইউনিয়নের (আকু) দায় পরিশোধের পর তা ২০ বিলিয়ন ডলারে নেমে আসে। পরে মাসটির শেষ দিকে কিছুটা বেড়ে দাঁড়ায় ২০ দশমিক ৩৯ বিলিয়ন ডলারে। এরপর টানা আট মাস তা ১৮ থেকে ২১ বিলিয়ন ডলারে ওঠানামা করে। এপ্রিল শেষে তা বেড়ে দাঁড়ায় ২২ দশমিক ০৪ বিলিয়ন ডলারে। পরের মে মাসেই তা কমে নেমে আসে ২০ দশমিক ৫৩ বিলিয়ন ডলারে।

তবে জুন মাসে রিজার্ভের অবস্থা ভালো। মঙ্গলবার (২৪ জুন) পর্যন্ত রিজার্ভের পরিমাণ ২ হাজার ২২৪ কোটি ৫৭ লাখ ডলার বা ২২ দশমিক ২৪ বিলিয়ন ডলার। আর মোট রিজার্ভ দাঁড়িয়েছে প্রায় ২ হাজার ৭৩০ কোটি ৬০ লাখ ডলার বা প্রায় ২৭ দশমিক ৩১ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে।

কেমন অবস্থায় আছে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ?

এ ব্যাপারে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক আরিফ হোসেন খান জাগো নিউজকে বলেন, যদি কোনো দেশের তিন মাসের আমদানি দায় মেটানোর পর্যাপ্ত রিজার্ভ থাকে তাহলে সেটাকে খারাপ বলা যাবে না। এটা সন্তোষজনক অবস্থায় রয়েছে বলে ধরা হয়ে থাকে। বর্তমান যে রিজার্ভ আছে তা দিয়ে আমাদের চার মাসের বেশি সময়ের আমদানি দায় মেটানো সম্ভব। অর্থাৎ আমরা বেশি স্বস্তিদায়ক অবস্থায় আছি বলা যেতে পারে। আবার তার মানে এই নয় যে বর্তমান রিজার্ভে আমরা সন্তুষ্ট। আমাদের রিজার্ভ আরো কিভাবে বাড়ানো যায় তা নিয়ে কাজ চলছে।

রেমিট্যান্স ও রপ্তানি বৃদ্ধির ইতিবাচক প্রভাব

চলতি অর্থবছরের (২০২৪–২৫) প্রথম ১০ মাসে রপ্তানি বেড়েছে ৮.৬০ শতাংশ এবং আমদানি বেড়েছে ৪.৬০ শতাংশ। এলসি খোলা ও নিষ্পত্তি দুটোই বেড়েছে।

অন্যদিকে ২০২৪-২৫ অর্থবছরের জুলাই থেকে চলতি মাস জুনের ২১ তারিখ পর্যন্ত মোট ২৯ দশমিক ৫০ বিলিয়ন ডলার রেমিট্যান্স এসেছে। যা আগের অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় ২৬ দশমিক ৭ শতাংশ বেশি। ২০২৩-২৪ অর্থবছরের একই সময়ে রেমিট্যান্স এসেছিল ২৩ দশমিক ২৮ বিলিয়ন ডলার।

বাংলাদেশ ব্যাংক বলছে, বৈধ চ্যানেলে রেমিট্যান্স পাঠাতে নানা উদ্যোগ, উৎসবকেন্দ্রিক আয় বৃদ্ধি ও অবৈধ পথে অর্থ প্রেরণ নিরুৎসাহিত করায় বৈদেশিক মুদ্রার এই প্রবাহ বাড়ছে। এতে রিজার্ভে ইতিবাচক প্রভাব পড়েছে।

বাজারে কৃত্রিম সংকট নেই

বর্তমানে ডলারের বাজারমূল্য (১২২ টাকা) স্থিতিশীল রয়েছে। ডলারের বাজারভিত্তিক বিনিময় হার চালু হওয়া, ঈদে রেমিট্যান্স প্রবাহ বৃদ্ধি এবং ব্যাংকগুলোতে ডলারের পর্যাপ্ত সরবরাহের কারণে বাজারে কৃত্রিম সংকট আর নেই। ফলে আমদানিকারকেরা সহজেই এলসি খুলতে পারছেন।

আমদানিকারক ও ব্যবসায়ীদের বক্তব্য লাগবে?

‘রিজার্ভের ওপর নির্ভর করে মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ, বিনিয়োগ আকর্ষণ, ঋণ পরিশোধ, আন্তর্জাতিক বাণিজ্য ও অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা। কাজেই বৈদেশিক মুদ্রার মজুদ খুবই গুরুত্বপূর্ণ। বিগত দুই-তিন বছরে যেভাবে রিজার্ভের পতন তৈরি হয়েছিল সেই ক্ষয় বন্ধ হয়েছে।’- চেঞ্জ ইনিশিয়েটিভের রিসার্চ ফেলো হেলাল আহমেদ জনি

ঋণ পরিশোধের চাপ, তবু নিয়ন্ত্রণে

চলতি অর্থবছরের প্রথম ১১ মাসে (জুলাই-মে) বৈদেশিক ঋণের সুদ ও আসল পরিশোধ ৪ বিলিয়ন ডলারের কাছাকাছি পৌঁছেছে। গত ২২ জুন প্রকাশিত অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) প্রতিবেদন অনুযায়ী, চলতি অর্থছরের প্রথম ১১ মাসে বাংলাদেশ উন্নয়ন সহযোগীদের সুদ ও আসল পরিশোধ করেছে ৩ দশমিক ৭৮৪ বিলিয়ন ডলার, যা এ যাবতকালের সর্বোচ্চ পরিশোধ।

গত অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় বৈদেশিক ঋণ পরিশোধ বেড়েছে ২৩.৪ শতাংশ। গত অর্থবছরের একই সময়ে (জুলাই-মে) বাংলাদেশ উন্নয়ন সহযোগীদের পরিশোধ করেছিল ৩ দশমিক ০৭ বিলিয়ন ডলার। গত অর্থবছরে জুলাই-জুন সময়ে বাংলাদেশের বৈদেশিক ঋণের আসল ও সুদ পরিশোধের পরিমাণ ছিল ৩ দশমিক ৩৮ বিলিয়ন ডলার।

আগে এসব বকেয়া পরিশোধ করতে রিজার্ভ থেকে ডলার দেওয়া হতো, এখন বাজার থেকেই ডলার সংগ্রহ করে তা পরিশোধ করা হচ্ছে। এতে রিজার্ভের ওপর চাপ কমছে।

এ ব্যাপারে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক আরিফ হোসেন খান বলেন, ‘অতীতের যেকোনো সময়ের তুলনায় ১১ মাসে বেশি বিদেশি ঋণ ও বকেয়া দায় পরিশোধ করেছি আমরা। এ ঋণ পরিশোধ না করা হলে আমাদের রিজার্ভ আরও ৪ বিলিয়ন বেশি থাকত।’

দাতা সংস্থার সহায়তা আসছে

বাংলাদেশ ব্যাংক জানিয়েছে, চলতি মাসেই আইএমএফ, বিশ্বব্যাংক, এডিবি, জাইকার মতো দাতা সংস্থার কাছ থেকে প্রায় সাড়ে ৩ বিলিয়ন ডলারের সহায়তা পাওয়ার আশা রয়েছে। এ অর্থ যুক্ত হলে রিজার্ভ আরও শক্তিশালী হবে।

সর্বশেষ গত সোমবার বাংলাদেশের জন্য ৪ দশমিক ৭০ বিলিয়ন ডলারের ঋণের চতুর্থ ও পঞ্চম কিস্তির অর্থ ১ দশমিক ৩ বিলিয়ন ডলার ছাড় করার সিদ্ধান্ত নেয় আইএমএফ। যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটনে আইএমএফের সদর দপ্তরে অনুষ্ঠিত বৈঠকে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

‘রিজার্ভের ওপর অনেক কিছু নির্ভর করে। তাই হেলদি রিজার্ভও দরকার আছে। কারণ রিজার্ভ থাকলে বিদেশি বিনিয়োগকারী বিনিয়োগে আকৃষ্ট হবেন, সংকটের সামাল দেয় রিজার্ভ। রিজার্ভের পতন যেমন ঠেকানো গেছে, তেমনি কিভাবে রিজার্ভ বাড়ানো যায় সেটা দেখতে হবে।’ বিশ্বব্যাংকের ঢাকা কার্যালয়ের সাবেক মুখ্য অর্থনীতিবিদ জাহিদ হোসেন

যা বলছেন অর্থনীতিবিদরা

বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান চেঞ্জ ইনিশিয়েটিভের রিসার্চ ফেলো হেলাল আহমেদ জনি জাগো নিউজকে বলেন, রিজার্ভের ওপর নির্ভর করে মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ, বিনিয়োগ আকর্ষণ, ঋণ পরিশোধ, আন্তর্জাতিক বাণিজ্য ও অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা। কাজেই বৈদেশিক মুদ্রার মজুদ খুবই গুরুত্বপূর্ণ। বিগত দুই-তিন বছরে যেভাবে রিজার্ভের পতন তৈরি হয়েছিল সেই ক্ষয় বন্ধ হয়েছে। বর্তমানে নিজেদের চাহিদা অনুযায়ী ব্যবসায়ীরা এলসি খুলতে পারছেন। আবার মুদ্রা বিনিময় হার বাজারের ওপর ছেড়ে দেওয়ার পরও স্থিতিশীল রয়েছে। অর্থনীতির জন্য এগুলো ভালো নিদর্শন।

বিশ্বব্যাংকের ঢাকা কার্যালয়ের সাবেক মুখ্য অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন জাগো নিউজকে বলেন, ‘সাধারণত তিন মাসের আমদানি দায় মেটানোর সক্ষমতা থাকলে সেটাকে খুব খারাপ বলা যাবে না। আমাদের রিজার্ভ পতন ঠেকানো গেছে, এটা ভালো দিক। আগে পেট্রোবাংলাসহ পাওয়ার ডেভেলপমেন্টের বিল যেগুলো বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভের ডলার দিয়ে পরিশোধ করা হতো। এখন তো সেটা হয়নি, রেমিট্যান্স বাড়ার ফলে বাজারেই ডলারের প্রবাহ বেড়েছে। যেসব প্রতিষ্ঠানের বকেয়া রয়েছে তারা বাজার থেকে ডলার কিনে পরিশোধ করেছে। এখানে বলা যায় সরকার টাকা দিয়েছে কিন্তু ডলার দেয়নি।’

‘এখানে মূল নিয়ামক হিসেবে কাজ করেছে রেমিট্যান্স। রেমিট্যান্স বাড়ার ফলে বাজারে ডলারের প্রবাহ বেড়েছে। এ কারণে রিজার্ভে হাত না দিয়েও বকেয়া পরিশোধ করা গেছে। তবে রিজার্ভের ওপর অনেক কিছু নির্ভর করে। তাই হেলদি রিজার্ভও দরকার আছে। কারণ রিজার্ভ থাকলে বিদেশি বিনিয়োগকারী বিনিয়োগে আকৃষ্ট হবেন, সংকটের সামাল দেয় রিজার্ভ। রিজার্ভের পতন যেমন ঠেকানো গেছে, তেমনি কিভাবে রিজার্ভ বাড়ানো যায় সেটা দেখতে হবে।’ বলছিলেন জাহিদ হোসেন।

ইএআর/এমএমএআর/জেআইএম

Read Entire Article