কোটা সংস্কার আন্দোলনের নামে রাজধানীতে ভাঙচুর, সরকারি কাজে বাধা, চুরি, অগ্নিসংযোগ, হত্যাসহ বিভিন্ন অপরাধে ২৭৪টি মামলা দায়ের করা হয়েছে। এসব মামলায় ১৫ দিনে (১৭ জুলাই থেকে ১ আগস্ট) পর্যন্ত ৩০১১ জনকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। গত ২৩ জুলাই একই দিতে সর্বোচ্চ ৫১৬ জনকে কারাগারে পাঠানো হয়।
ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) প্রসিকিউশন বিভাগের তথ্য অনুসারে গত ১৭ জুলাই থেকে কোটা সংস্কারের আন্দোলনের নামে রাজধানীতে ভাঙচুর, সরকারি কাজে বাধা, অগ্নিসংযোগ, হত্যাসহ বিভন্ন অপরাধের আসামিদের আদালতের নির্দেশে কারাগারে পাঠানো শুরু হয়।
১৭ জুলাই থেকে ১ আগস্ট পর্যন্ত ৩০১১ জনকে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। তাদের মধ্যে সেতু ভবনে হমালার মামলায় গত ৩১ জুলাই মামলায় পোশাক রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান ভিয়েলাটেক্স গ্রুপের চেয়ারম্যান ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা রেজাউল হাসানাত ডেভিডের ব্যবসায়ী ও বৃহস্পতিবার তিন শিক্ষার্থীর জামিন মঞ্জুর করেছেন আদালত।
কারাগারে যাওয়া উল্লেখযোগ্যরা হলেন
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও সাবেক মন্ত্রী আমানউল্লাহ আমান, বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস, বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী ও জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার, বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক কাজী সায়েদুল আলম বাবুল, বিএনপির প্রচার সম্পাদক সুলতান সালাউদ্দিন টুকু, ঢাকা মহানগর উত্তরের সদস্য সচিব আমিনুল হক, গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি ও ডাকসুর সাবেক ভিপি নুরুল হক নুর, বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা জহির উদ্দিন স্বপন, জামায়াতে ইসলামীর কর্মপরিষদ সদস্য সামিউল হক ফারুকী, বিএনপির কেন্দ্রীয় আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক ব্যারিস্টার নাসির উদ্দিন আহমেদ আসীম, জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির ও সাবেক সংসদ সদস্য ডা. সৈয়দ আব্দুল্লাহ মো. তাহের ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ডা. সাখাওয়াত হোসেন সায়ন্থ।
কোন দিন কত জনকে কারাগারে পাঠালো আদালত
গত ১৭ জুলাই ১৪ জন, ১৮ জুলাই ৩৪ জন, ১৯ জুলাই ৫৯ জন, ২০ জুলাই ১৪১ জন, ২১ জুলাই ২৩১ জন, ২২ জুলাই ৩৮৫ জন, ২৩ জুলাই ৫১৬ জন, ২৪ জুলাই ৩৮৯ জন, ২৫ জুলাই ২৬৪ জন, ২৬ জুলাই ২৫১ জন, ২৭ জুলাই ১৬৭ জন, ২৮ জুলাই ১৭৯ জন, ২৯ জুলাই ১২০ জন, ৩০ জুলাই ১৪১ জন, ৩১ জুলাই ৬৬ জন ও ১ আগস্ট ৫৪ জনকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।
সহিংসতায় ৫৩ হত্যা মামলা দায়ের
ডিএমপির প্রসিকিউশন বিভাগ থেকে জানা যায়, সহিংসতার ঘটনায় ডিএমপির (ঢাকা মহানগর পুলিশ) বিভিন্ন থানায় এখন পর্যন্ত মামলার সংখ্যা ২৭৪টি। দণ্ডবিধির ১৪৩, ১৪৭, ১৮৪ ১৪৯ ৩০৭ ও ৩০২ সহ আরও বেশকিছু ধারায় এসব মামলা করা হয়েছে। এতে বৈআইনি জনতাবদ্ধ হয়ে ভাঙচুর, সরকারি কাজে বাধা, অগ্নিযোগ, হত্যাসহ বিভিন্ন অপরাধের কথা বলা হয়েছে। এর মধ্যে অন্তত ৫৩টি হত্যা মামলা।
আদালতের সাধারণ নিবন্ধন শাখা থেকে জানা যায়, আন্দোলনের নামে সহিংসতায় যাত্রাবাড়ীতে সর্বাধিক ১৬টি হত্যা মামলা করা হয়েছে। এছাড়া কদমতলীতে ৪, বাড্ডায় ৫, ভাটারায় ৩, পল্টন ও নিউমার্কেটে ৬টি, রামপুরা, মোহাম্মদপুর, মিরপুর ও কাফরুলে যথাক্রমে ২টি করে এবং খিলগাঁওয়ে, গুলশান, বনানী, ধানমন্ডি, হাতিরঝিল, উত্তরা পশ্চিম ও পূর্ব থানায় ১টি করে হত্যা মামলা হয়। এর মধ্যে পুলিশ হত্যা মামলার সংখ্যা তিনটি।
ডিএমপির প্রসিকিউশন বিভাগের প্রশাসনিকর কর্মকর্তা পুলিশ পরিদর্শক জুলহাস উদ্দিন আকন্দ বলেন, কোটা নিয়ে সহিংসতার অভিযোগে ২৭৪টি মামলা দায়ের হয়েছে। এদের মধ্যে হত্যা মামলা হয়েছে ৫৩টি। এসব মামলায় গত ১৭ জুলাই থেকে ১ আগস্ট পর্যন্ত ৩০১১ জনকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।
বিএনপির সহ আইন বিষয়ব সম্পাদক এ্যাডভোকেট সৈয়দ জয়নুল আবেদীন মেজবাহ জাগো নিউজকে বলেন, কোটাবিরোধী আন্দোলনের চলাকালে সংঘর্ষের ঘটনায় করা মামলায় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও সাবেক মন্ত্রী আমানউল্লাহ আমান, বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস, বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীসহ একাধিক নেতা কর্মীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তাদের বিভিন্ন মামলায় রিমান্ডেও নেওয়া হয়েছ। ঘটনার সঙ্গে আসামিরা জড়িতনা। তাদের হয়রানি করার জন্য এসব মামলায় গ্রেফতার করা হয়েছে।
ঢাকা মহানগর আদালতের অতিরিক্ত পাবলিক প্রসিকিউটর তাপস কুমার পাল জাগো নিউজকে বলেন, কোটা আন্দোলনের নামে সহিংসতার অভিযোগে রাজধানীতে একাধিক মামলা দায়ের করা হয়েছে। এসব মামলায় পুলিশ অপরাধীদের গ্রেফতার করে আদালতে হাজির করছেন। গ্রেফতার অনেকে এসব মামলায় রিমান্ড দেওয়া হচ্ছে। রিমান্ড শেষে আসামির কারাগারে পাঠানোর আদেশ দিচ্ছেন আদালত। এছাড়া অনেককে কারাগারে আটক রাখার আবেদন করেছেন পুলিশ। আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে আদালত তাদের কারাগারে পাঠানোর আদেশ দিচ্ছেন।
জেএ/এমআইএইচএস/জিকেএস