ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের মধ্যে বাধ্য হয়ে প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে শেখ হাসিনার পদত্যাগের মধ্য দিয়ে পতন হয়েছে সরকারের। এরপর সংসদও ভেঙে দেওয়া হয়েছে। এর ফলে খুলেছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠনের পথ।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, শেখ হাসিনার পদত্যাগের পর এখন দেশ পরিচালনার জন্য অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠনের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। সেটি আজ-কালের মধ্যে হতে পারে। আলোচনা শুরু হয়েছে, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠন কখন ও কীভাবে হচ্ছে। কারা থাকছেন এ সরকারে? এ নিয়ে আইনজ্ঞরা ভিন্ন ভিন্ন মত দিয়েছেন।
তবে তারা বলছেন, গণঅভ্যুত্থানে যারা জয়লাভ করে তাদের ইচ্ছা মতোই সবকিছু হবে। যে ইচ্ছা তারা করবে, সেটা পরে আইনের অধীনে নিয়ে যাওয়ার সুযোগ আছে।
অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠনের প্রক্রিয়ার বিষয়ে সুপ্রিম কোর্টের সিনিয়র আইনজীবী মনজিল মোরসেদ জাগো নিউজকে বলেন, এখানে দুটো জিনিস দেখতে হবে। একটি হলো সংবিধান, অন্যটি হলো গণঅভ্যুত্থান। গণঅভ্যুত্থান কোনো আইন না। সংবিধানের কোথাও গণঅভ্যুত্থান নেই। সংবিধানে এরকম কিছু নাই। তবে গণঅভ্যুত্থানে যারা জয়লাভ করে, তাদের ইচ্ছা মতোই সবকিছু হবে। যে ইচ্ছা তারা করবে, সেটা আইনে যাওয়ার সুযোগ আছে। তবে বলা যাবে না যে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আদলে করলাম। গণঅভ্যুত্থানে বিজয়ীরা করতে পারেন, সেটা পরে আইনে রেডিফাই করতে হবে। সেটি সংবিধান অনুযায়ী ফ্রম করতে হবে।
অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠনের প্রক্রিয়ার বিষয়ে সুপ্রিম কোর্টের আরেক আইনজীবী ব্যারিস্টার কায়সার কামাল জাগো নিউজকে বলেন, সংসদ ভেঙে দেওয়ার পর সরকার গঠন হবে। ১৯৯১ সালে হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের পতনের পর তিন জোটের রূপরেখার ভিত্তিতে তৎকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রতিষ্ঠা হয়েছিল। তেমনিভাবেই এখন সারা বাংলাদেশের ক্রিয়াশীল রাজনীতিবিদ তথা আমাদের অহংকার বৈষম্যবিরোধী ছাত্র সমাজের প্রতিনিধির মাধ্যমে ১৯৯১ সালের রূপরেখা অনুযায়ী, ওই কনসেসাসের ভিত্তিতে অন্তর্বর্তী সরকার গঠন হতে পারে।
তিনি বলেন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র সমাজের প্রতিনিধি, সিভিল সোসাইটির মেম্বারদের মধ্যে, সাংবাদিক, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, বুদ্ধীজীবী- সবার সমন্বয়ের ভিত্তিতে রাষ্ট্রপতি মিটিং করেছেন। সেই মিটিংয়ের আলোকেই পরবর্তী রূপরেখা আসবে। নিশ্চয় মনে রাখতে হবে, যারা রাষ্ট্রপতির সঙ্গে বসেছিলেন তারা সবাই দেশের মঙ্গলের জন্য বসেছিলেন। তারা চিন্তাভাবনা করে সিদ্ধান্ত নেবেন।
অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠনের প্রক্রিয়ার বিষয়ে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার অনিক আর হক জাগো নিউজকে বলেন, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠন করার নজির রয়েছে বাংলাদেশে। আমাদের দেশে বেশ কয়েকবার হয়েছে। পাকিস্তানে বহুবার হয়েছে। পরিস্থিতি যেখানে যেরকম, সেখানে সেই ব্যবস্থা। আমাদের আইনের বইয়ে (সংবিধানে) যা আছে সেটা জনগণের জন্যই করা হয়েছে। ১৯৯০ সালে কিন্তু সংবিধানে তত্ত্বাবধায়ক ব্যবস্থা ছিল না। তখন তত্ত্বাবধায়ক সরকার করা হয়েছিল। সেখান থেকে বা তা অনুসরণ করতে পারি।
এফএইচ/এমএইচআর/জিকেএস