কোনো দলের স্বার্থ বাস্তবায়ন অন্তর্বর্তী সরকারের কাজ নয়

8 hours ago 5

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেছেন, ফ্যাসিবাদমুক্ত বাংলাদেশে জনগণের ভোটে নির্বাচিত, জনগণের প্রতি দায়বদ্ধ ও জবাবদিহিমূলক গণতান্ত্রিক সরকার প্রতিষ্ঠা বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান দায়িত্ব। সরকারের কাজ কোনো দলের স্বার্থ বাস্তবায়ন নয়।

শনিবার (৭ নভেম্বর) রাজধানীর ফার্মগেট কৃষিবিদ ইনস্টিটিউট মিলনায়তনে ‘হিন্দু প্রতিনিধি সম্মেলন ২০২৫’-এ ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন তিনি। এ আলোচনা সভার আয়োজন করে মাতুয়া বহুজন সমাজ ঐক্যজোট।

তারেক রহমান বলেন, বিতাড়িত স্বৈরাচার বা ফ্যাসিবাদের সময়, দেশের সবচেয়ে জনসমর্থিত ও জনপ্রিয় দল হওয়া সত্ত্বেও বিএনপির নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে কমপক্ষে দেড় লাখ মামলা দায়ের করা হয়েছিল। ৭০০-এর বেশি নেতাকর্মী গুম, অপহরণ ও খুন করা হয়েছিল, এবং অকারণে রাতের বেলা আদালত বসিয়ে রায় ঘোষণা করা হতো। মূল কারণ ছিল দেশে আইনের শাসনের অভাব।

তিনি বলেন, পলাতক স্বৈরাচারের শাসনামলে মুসলমান, হিন্দু, বৌদ্ধ বা খ্রিস্টান— ডান বা বাম, বিশ্বাসী বা অবিশ্বাসী কেউই নিরাপদ ছিল না। উদাহরণ হিসেবে টেনে বলেন, ২০১২ সালে রামুর বৌদ্ধ মন্দিরে এবং ২০১৬ সালে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগরে ঘটে যাওয়া হামলার মতো কোনো ঘটনার বিশ্বাসযোগ্য তদন্ত বা বিচার হয়নি। গত দেড় দশকে তিনি ও তার নেতারা দেশের সুশীল সমাজ এবং সর্বদলীয় ও সর্বধর্মীয় প্রতিনিধিদের সঙ্গে সমন্বয় করে একটি নাগরিক তদন্ত কমিশন গঠনের দাবি জানিয়েছিলেন, যাতে ধর্মীয় সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠীর উপাসনালয় বা বাসাবাড়িতে সংঘটিত প্রতিটি হামলার নেপথ্য ঘটনা উদ্ঘাটন করে সুষ্ঠু বিচার হয়। তবে সেই দাবির কোনো বাস্তবায়ন হয়নি, কোনো বিশ্বাসযোগ্য তদন্ত কমিশনও গঠন করা হয়নি।

এই কারণেই বিএনপি মনে করে— ন্যায়বিচার ও আইনের শাসন ছাড়া সংখ্যালঘু বা সংখ্যাগুরু— কোনো নাগরিকেরই নিরাপত্তা নিশ্চিত করা সম্ভব নয়। একমাত্র ন্যায়বিচার ও আইনের শাসনই দেশের প্রতিটি নাগরিকের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পারে।’

তারেক রহমান বলেন, ফ্যাসিবাদমুক্ত বাংলাদেশে মুসলমান, হিন্দু, বৌদ্ধ ও খ্রিস্টানসহ সব ধর্মের মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য গণতন্ত্র, ন্যায়বিচার ও আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা একটি বড় সুযোগ। তবে ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলনের কিছু সহযোগীর কর্মকাণ্ড দেশের অনেক মানুষের অধিকার ও সুযোগ ক্ষুণ্ণ করছে। দেশ অস্থিতিশীল হলে অতীতে পরাজিত ও পলাতক ফ্যাসিবাদী শক্তির পুনরায় উত্থানের পথ সুগম হতে পারে।

তিনি বলেন, ফ্যাসিবাদের শাসনামলে বিরোধীরা যেভাবে গুপ্ত কৌশল অবলম্বন করেছিল বাঁচার জন্য, আজ পতিত ও পরাজিত ফ্যাসিবাদী অপশক্তিও একইভাবে গুপ্ত কৌশল অবলম্বন করে গণতন্ত্রের উত্তরণের পথ বাধাগ্রস্ত করার চেষ্টা করতে পারে। এজন্য তিনি অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ও ফ্যাসিবাদবিরোধী গণতান্ত্রিক শক্তিগুলোর প্রতি সজাগ দৃষ্টি রাখার আহ্বান জানান।

তিনি আরও বলেন, ৫ আগস্টের পতিত ও পরাজিত অপশক্তি যেন কোনো দলের আড়ালে গুপ্ত কৌশল প্রয়োগ করে দেশকে অস্থিতিশীল করতে না পারে, সেজন্য সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে।

তারেক রহমান বলেন, ফ্যাসিবাদমুক্ত বাংলাদেশে জনগণের ভোটে নির্বাচিত, জনগণের প্রতি দায়বদ্ধ ও জবাবদিহিমূলক গণতান্ত্রিক সরকার প্রতিষ্ঠা করা বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান দায়িত্ব। সরকারের কাজ কোনো দলের স্বার্থ বাস্তবায়ন করা নয়।

তিনি বলেন, জনগণের রায় অনুযায়ী বিএনপি রাষ্ট্র পরিচালনার সুযোগ পেলে প্রাথমিকভাবে ৫০ লাখ পিছিয়ে থাকা পরিবারের নারীপ্রধানের নামে ফ্যামিলি কার্ড ইস্যু করবে। পাশাপাশি প্রান্তিক, ক্ষুদ্র ও মাঝারি কৃষকদের অর্থনৈতিক স্বনির্ভরতা নিশ্চিত করতে ফার্মার্স কার্ড প্রদানের পরিকল্পনাও রয়েছে। এছাড়া, দেশের বৃহৎ সমস্যাগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো যুব সমাজের বেকারত্ব।

এই বেকারত্ব দূর করতে তরুণদের কর্মসংস্থান নিশ্চিত করতে তাদেরকে বিভিন্ন কারিগরি প্রশিক্ষণ ও ব্যবহারিক শিক্ষা দেওয়া হবে, যাতে তারা দক্ষ জনশক্তিতে পরিণত হয়ে দেশে ও বিদেশে কর্মসংস্থানের সুযোগ পায়।

কেএইচ/এমএএইচ/জেআইএম

Read Entire Article