কোরআন কেন আমাদের কাহিনি শোনায়?

2 weeks ago 5

পূর্ববর্তী নবি-রাসুলগণ ও আল্লাহর অনুগত ও অবাধ্য জাতিসমূহের ঘটনা কোরআনুল কারিমের একটি বৃহৎ অংশ জুড়ে আছে। কোরআনে এসব ঘটনা বর্ণনার উদ্দেশ্য নিছক গল্প বলা বা ইতিহাস বর্ণনা করা নয়। এখানে আমরা কোরআনের ঘটনা বর্ণনার প্রধান ৪ উদ্দেশ্য ও লক্ষ্য সংক্ষেপে তুলে ধরছি।

১. রাসুলুল্লাহ (সা.) ও মুমিনদের সান্ত্বনা ও উৎসাহ দেওয়া

পূর্ববর্তী নবি-রাসুলগণের ঘটনা বর্ণনা করার মাধ্যমে নবিজি (সা.) ও তার সাহাবিদের সান্ত্বনা ও উৎসা দেওয়া হয়েছে, যেন তারা ধৈর্য ধারণ করেন, বিপদ-আপদ দেখে ভেঙে না পড়েন। পূর্ববর্তী ইমানদারদের মতো ইমানি পরীক্ষায় অবিচল থাকেন। আল্লাহর সাহায্যের প্রতিশ্রুতিতে ভরসা রাখেন।

আল্লাহ তাআলা বলেন, আর রাসূলদের এসকল সংবাদ আমি তোমার কাছে বর্ণনা করছি যার দ্বারা আমি তোমার মনকে স্থির করি আর এতে তোমার কাছে এসেছে সত্য এবং মুমিনদের জন্য উপদেশ ও স্মরণ। (সুরা হুদ: ১২০)

২. রাসুলুল্লাহর (সা.) নবুয়্যতের সত্যতা প্রমাণ করা

পূর্ববর্তী নবি-রাসুলগণের ঘটনা বর্ণনা করে কোরআন আমাদের বলে, পৃথিবীতে যুগে যুগে আগত সব নবি-রাসুলের দাওয়াত এক, বিশ্বাস ও কর্মপন্থা এক। মুহাম্মাদ (সা.) নতুন কিছু নিয়ে আসেননি; বরং তিনিও পূর্ববর্তী রাসুলগণের মতোই আল্লাহর পাঠানো একজন রাসুল।

আল্লাহ তাআলা বলেন, বল, ‘আমি রাসুলদের মধ্যে নতুন নই। আর আমি জানি না আমার ও তোমাদের ব্যাপারে কী করা হবে। আমার প্রতি যা ওহি করা হয়, আমি কেবল তারই অনুসরণ করি। আর আমি একজন সুস্পষ্ট সতর্ককারী মাত্র’। (সুরা আহকাফ: ৯)

কোরআন কেন আমাদের কাহিনি শোনায়?

ছবি: সংগৃহীত

৩. পূর্ববর্তী জাতিসমূহের পরিণতি থেকে শিক্ষা গ্রহণ করা

পূর্ববর্তী অনুগত ও অবাধ্য জাতিসমূহের ঘটনা বর্ণনার মাধ্যমে কোরআন তাদের পরিণতি সম্পর্কে আমাদের ভাবতে বলে যেন আমরা আল্লাহর অবাধ্য হয়ে ধ্বংস হয়ে যাওয়া জাতির পথ অনুসরণ না করি।

আল্লাহ তাআলা বলেন, তাদের কাছে কি তাদের পূর্বের লোকদের সংবাদ পৌঁছেনি, নুহের কওম, আদ, সামুদ, ইবরাহিমের কওম, মাদায়েনবাসী ও বিধ্বস্ত নগরীর? তাদের কাছে তাদের রাসুলগণ প্রমাণসমূহ নিয়ে উপস্থিত হয়েছিল। অতএব আল্লাহ তাদের ওপর জুলুম করার নন, বরং তারাই তাদের নিজদের ওপর জুলুম করছিল। (সুরা তওবা: ৭০)

৪. পূর্ববর্তী নবিদের দাওয়াত ও শিক্ষা থেকে শিক্ষা গ্রহণ করা

কোরআনে বর্ণিত ঘটনাগুলোর মধ্যে এক আল্লাহর ওপর ইমান, আখেরাত, নবি-রাসুল, ফেরেশতা, কিতাব ও তাকদিরের ওপর ইমানের শিক্ষা রয়েছে। পূরবর্তী নবিগণ তাদের উম্মতকে যে দাওয়াত দিয়েছেন, যে বিশ্বাস ধারণ করতে বলেছেন, যে কাজগুলো করতে বলেছেন, যে কাজগুলো করতে নিষেধ করেছেন—এগুলোআমাদের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য।

যেমন হুদ (আ.) তার কওমকে বলেছিলেন, হে আমার কওম, তোমরা আল্লাহর ইবাদত কর। তিনি ছাড়া তোমাদের জন্য কোন ইলাহ নেই। তোমরা তো কেবল মিথ্যা রটনাকারী। (সুরা হুদ: ৫০)

শোয়াইব (আ.) তার জাতিকে বলেছিলেন, হে আমার জাতি, তোমরা আল্লাহর ইবাদত কর, শেষ দিবসের আশা কর এবং জমিনে ফাসাদ সৃষ্টি করে বেড়িও না। (সুরা আনকাবুত: ৩৬)

তিনি আরও বলেছিলেন, হে আমার জাতি, তোমরা আল্লাহর ইবাদত কর। তিনি ছাড়া তোমাদের কোন ইলাহ নেই। তোমাদের রবের পক্ষ থেকে তোমাদের নিকট স্পষ্ট প্রমাণ এসেছে। সুতরাং তোমরা পরিমাণে ও ওজনে পরিপূর্ণ দাও এবং মানুষকে তাদের পণ্যে কম দেবে না; আর তোমরা জমিনে ফাসাদ করবে না তা সংশোধনের পর। এগুলো তোমাদের জন্য উত্তম যদি তোমরা মুমিন হও। (সুরা আ’রাফ: ৮৫)

সুতরাং কোরআন পাঠ করার সময় আমরা যেন কোরআনে বর্ণিত ঘটনাগুলো থেকে শিক্ষা গ্রহণ করার চেষ্টা করি। আল্লাহ তাআলা কেন আমাদের ঘটনাটি বলছেন তা বোঝার চেষ্টা করি।

আল্লাহ তাআলা বলেন, তাদের এ কাহিনিগুলোতে অবশ্যই বুদ্ধিমানদের জন্য রয়েছে শিক্ষা, এটা কোন বানানো গল্প নয়, বরং তাদের পূর্ববর্তী কিতাবের সত্যায়নকারী এবং প্রতিটি বিষয়ের বিস্তারিত বিবরণ। আর হেদায়াত ও রহমত ঐ কওমের জন্য যারা ইমান আনে। (সুরা ইউসুফ: ১১১)

ওএফএফ/এমএস

Read Entire Article