ক্যাঙ্গারু কোর্ট কী, কী এর ইতিহাস
আইনবিষয়ক আলোচনায় বহুল ব্যবহৃত একটি ইংরেজি বাগধারা এই ‘ক্যাঙ্গারু কোর্ট’। এর মাধ্যমে এমন আদালতকে বোঝানো হয়, যার কর্মকাণ্ড স্বাভাবিক বিচারিক মানদণ্ড থেকে এতটাই বিচ্যুত যে সেটিকে আর ন্যায়সঙ্গত আদালত বলা যায় না। সাধারণত বিচার ব্যবস্থার ভয়াবহ অপব্যবহার বা সুস্পষ্ট অবিচারের ক্ষেত্রে কোনো আদালতকে ‘ক্যাঙ্গারু কোর্ট’ বলা হয় ও এটি বিচারকের প্রতি কঠোর নিন্দা হিসেবেই গণ্য হয়। শুধু অসামর্থ্য বা দক্ষতার ঘাটতি নয়, ‘ক্যাঙ্গারু কোর্ট’ শব্দটির মধ্যে সরাসরি অন্যায় ও অনৈতিকতার ইঙ্গিত থাকে। নিচের পরিস্থিতিগুলো সাধারণত কোনো আদালতকে এভাবে চিহ্নিত করার কারণ হিসেবে বিবেচিত হয়- আদালত কোনো পক্ষের বিরুদ্ধে চরম পক্ষপাত দেখানো, বিচারক ও কোনো পক্ষের মধ্যে গোপন সমঝোতার অভিযোগ, অভিযুক্তের ন্যায্য বিচার পাওয়ার মৌলিক অধিকার লঙ্ঘন, এমন দ্রুততার সঙ্গে মামলার নিষ্পত্তি করা যাতে ন্যায়বিচার অসম্ভব হয়ে পড়ে, নিরপেক্ষ জুরি না থাকা, আদালতের শৃঙ্খলা ও প্রক্রিয়া ভঙ্গ হওয়া ইত্যাদি। এই আদালতে এমনভাবে আইনের ব্যাখ্যা দেওয়া যাতে কোনো পক্ষকে সম্পূর্ণ অযৌক্তিক আচরণে বাধ্য করা হয়। অপরাধ মামলায় অন্যায্য সাজা বা দেওয়ানি মামলায় অযৌক্তিক রায়
আইনবিষয়ক আলোচনায় বহুল ব্যবহৃত একটি ইংরেজি বাগধারা এই ‘ক্যাঙ্গারু কোর্ট’। এর মাধ্যমে এমন আদালতকে বোঝানো হয়, যার কর্মকাণ্ড স্বাভাবিক বিচারিক মানদণ্ড থেকে এতটাই বিচ্যুত যে সেটিকে আর ন্যায়সঙ্গত আদালত বলা যায় না। সাধারণত বিচার ব্যবস্থার ভয়াবহ অপব্যবহার বা সুস্পষ্ট অবিচারের ক্ষেত্রে কোনো আদালতকে ‘ক্যাঙ্গারু কোর্ট’ বলা হয় ও এটি বিচারকের প্রতি কঠোর নিন্দা হিসেবেই গণ্য হয়।
শুধু অসামর্থ্য বা দক্ষতার ঘাটতি নয়, ‘ক্যাঙ্গারু কোর্ট’ শব্দটির মধ্যে সরাসরি অন্যায় ও অনৈতিকতার ইঙ্গিত থাকে। নিচের পরিস্থিতিগুলো সাধারণত কোনো আদালতকে এভাবে চিহ্নিত করার কারণ হিসেবে বিবেচিত হয়-
আদালত কোনো পক্ষের বিরুদ্ধে চরম পক্ষপাত দেখানো, বিচারক ও কোনো পক্ষের মধ্যে গোপন সমঝোতার অভিযোগ, অভিযুক্তের ন্যায্য বিচার পাওয়ার মৌলিক অধিকার লঙ্ঘন, এমন দ্রুততার সঙ্গে মামলার নিষ্পত্তি করা যাতে ন্যায়বিচার অসম্ভব হয়ে পড়ে, নিরপেক্ষ জুরি না থাকা, আদালতের শৃঙ্খলা ও প্রক্রিয়া ভঙ্গ হওয়া ইত্যাদি।
এই আদালতে এমনভাবে আইনের ব্যাখ্যা দেওয়া যাতে কোনো পক্ষকে সম্পূর্ণ অযৌক্তিক আচরণে বাধ্য করা হয়। অপরাধ মামলায় অন্যায্য সাজা বা দেওয়ানি মামলায় অযৌক্তিক রায় দেওয়া, এই দুই ক্ষেত্রেই ‘ক্যাঙ্গারু কোর্ট’ শব্দটি বেশি ব্যবহৃত হয়।
আধুনিক বিচারব্যবস্থায় এই বাগধারা সাধারণত অন্যায় বা অবৈধ রায়কে অকার্যকর বা অগ্রহণযোগ্য প্রমাণ করার জন্য ব্যবহৃত হয়। কোনো বিচারক যদি অন্য আদালতকে ‘ক্যাঙ্গারু কোর্ট’ বলেন, তাহলে সাধারণত বোঝা যায়, তিনি সেই আদালতের রায় বাতিল করতে পারেন অথবা অন্তত তার নজিরকে গুরুত্ব দেবেন না।
যুক্তরাষ্ট্রের আদালতগুলোও কখনো কখনো বিদেশি আদালতের বিচারব্যবস্থাকে ‘ক্যাঙ্গারু কোর্ট’ বলে উল্লেখ করে, যখন সেই বিচারব্যবস্থা প্রকৃতপক্ষে ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে ব্যর্থ হয়। যদিও বিদেশি আদালতের রায় যুক্তরাষ্ট্রে কার্যকর হতে আমেরিকান ডিউ প্রোসেস মানা বাধ্যতামূলক নয়, তবে কোনো বিচারব্যবস্থা যদি মৌলিকভাবে অন্যায্য হয়, তবে তার রায় যুক্তরাষ্ট্রে মানা হয় না।
এর ইতিহাস
অনেকের ধারণা,‘ক্যাঙ্গারু কোর্ট’ শব্দটির উৎপত্তি অস্ট্রেলিয়ায়। কিন্তু ভাষাবিদদের মতে, এর আসল উৎপত্তি ঊনবিংশ শতাব্দীর শুরুর দিকে যুক্তরাষ্ট্রে। এর উৎপত্তি নিয়ে দুটি মত প্রচলিত।
সবচেয়ে জনপ্রিয় ধারণা হলো, সীমান্ত অঞ্চলের ছোট শহরগুলো ঘুরে বেড়ানো বিচারকদের রূপক অর্থেই শব্দটি তৈরি হয়। তারা এক শহর থেকে আরেক শহরে ‘লাফিয়ে’ বিচারকাজ করে বেড়াতেন ও ফিস আদায়ে ব্যস্ত থাকতেন। বিচারকরা ক্যাঙ্গারুর মতো এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় লাফিয়ে লাফিয়ে চলার কারণে আদালতগুলো ক্যাঙ্গারু কোর্ট নামে পরিচিতি পায়। এই বিচারকরা অনেক সময় ন্যায়বিচারের তোয়াক্কা করতেন না।
দ্বিতীয় তত্ত্বটি ‘ক্যালিফোর্নিয়া গোল্ড রাশ’ সময়কালের সঙ্গে সম্পর্কিত। ১৮৪৮ সালে ক্যালিফোর্নিয়ায় সোনা আবিষ্কার হওয়ার পর ভাগ্য বদলের আশায় যুক্তরাষ্ট্রসহ বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে লাখো মানুষ ক্যালিফোর্নিয়ায় পাড়ি জমায়। সেসময় সোনার খনির মালিকানা নিয়ে প্রচুর বিরোধ হতো। অন্যের খনি দখল করা ছিল প্রতিদিনের ঘটনা। এসব বিরোধ মেটাতে দ্রুত আদালত বসানো হতো ও অস্থায়ী এই আদালতগুলো ক্যাঙ্গারু কোর্ট নামে পরিচিতি পায়।
সার্বিকভাবে, ‘ক্যাঙ্গারু কোর্ট’ শব্দবন্ধটি আজও অন্যায়, পক্ষপাতদুষ্ট ও অস্বচ্ছ বিচার ব্যবস্থার বিরুদ্ধে কঠোর সমালোচনা প্রকাশের এক শক্তিশালী বাগধারা হিসেবেই পরিচিত।
সূত্র: ল কর্নেল এডু
এসএএইচ
What's Your Reaction?