ক্যানসার আক্রান্তদের বাঁচাতে ও আক্রান্ত হওয়া প্রতিরোধে ৯ সুপারিশ

2 days ago 3

বাংলাদেশে প্রতি বছর এক লাখ ৬৭ হাজার মানুষ নতুন করে ক্যানসারে আক্রান্ত হয়। বছরে এই রোগে মারা যায় প্রায় এক লাখ ১৭ হাজার মানুষ। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সহযোগী সংস্থা ইন্টারন্যাশনাল এজেন্সি ফর রিসার্চ অব ক্যানসার (আইএআরসি) প্রকাশিত হিসাবে এ তথ্য তুলে ধরা হয়। তাদের বাঁচাতে বাংলাদেশের ক্যানসার বিশেষজ্ঞরা ৯ দফা সুপারিশ তুলে ধরেছেন।

বিশ্ব ক্যানসার দিবস (৪ ফেব্রুয়ারি) উপলক্ষে সোমবার (৩ ফেব্রুয়ারি) জাতীয় প্রেস ক্লাবে ওয়ার্ল্ড ক্যানসার সোসাইটি বাংলাদেশ, বাংলাদেশ ক্যানসার ফাউন্ডেশন ও বাংলাদেশ স্তন ক্যানসার সচেতনতা ফোরাম যৌথভাবে এক সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে।

এতে সর্বশেষ পরিস্থিতি বিশ্লেষণ এবং সমস্যা উত্তরণে করণীয় সম্পর্কে বক্তব্য রাখেন বিশিষ্ট ক্যানসার রোগ তত্ত্ববিদ ও ক্যানসার প্রতিরোধ বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক হাবিবুল্লাহ তালুকদার রাসকিন। ক্যানসার নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রমের বিভিন্ন ক্ষেত্রে উদ্যোগহীনতা, অনিয়ম ও অসংগতি তুলে ধরে সমাধানের পথ নিয়ে আলোচনা হয়।

মূল বক্তব্যে ক্যানসার রোগ তত্ত্ববিদ ও ক্যানসার প্রতিরোধ বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক হাবিবুল্লাহ তালুকদার রাসকিন বলেন, কোনো দেশে জাতীয় ক্যানসার নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচি প্রণয়ন ও এর কার্যকারিতা নিরূপণের জন্য ক্যানসার নিবন্ধন অপরিহার্য। ক্যানসার নিয়ে আমাদের নিজস্ব গ্রহণযোগ্য জাতীয় নিবন্ধন বা জরিপ নেই। ক্যানসারের প্রাদুর্ভাব বা প্রকোপ বোঝার জন্য আমাদের নির্ভর করতে হয় বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সহযোগী সংস্থা ইন্টারন্যাশনাল এজেন্সি ফর রিসার্চ অব ক্যান্সার (আইএআরসি) প্রকাশিত গ্লোবো ক্যানের ওপর। এই প্রতিষ্ঠানের অনুমিত হিসাব অনুযায়ী বাংলাদেশে প্রতিবছর এক লাখ ৬৭ হাজার মানুষ নতুন করে ক্যানসারে আক্রান্ত হয়। বছরে এই রোগে মারা যায় প্রায় এক লাখ ১৭ হাজার মানুষ।

ক্যানসার আক্রান্তদের বাঁচাতে ও নতুন করে আক্রান্ত হওয়া প্রতিরোধে নিম্নোক্ত সুপারিশ করেন ক্যানসার রোগ তত্ত্ববিদ ও ক্যানসার প্রতিরোধ বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক হাবিবুল্লাহ তালুকদার রাসকিন। এগুলো হলো-

১. জাতীয় ক্যানসার নিয়ন্ত্রণ কাউন্সিল পুরোপুরি অকার্যকর হয়ে আছে। একে পুনরুজ্জীবিত ও পুনর্গঠিত করতে হবে দলীয়করণ ও আমলাতান্ত্রিকতা থেকে মুক্ত করে, সব অংশীজনের সমন্বয়ে।

২. জাতীয় ক্যানসার নিবন্ধন কর্মসূচি প্রণয়ন করতে হবে, যার আওতায় থাকবে প্রতি বিভাগীয় ক্যানসার হাসপাতাল ও অন্তত একটি করে উপজেলা। পাশাপাশি বেসরকারি ক্যানসার কেন্দ্র বা সংগঠনকে উৎসাহ ও সহযোগিতা দিতে হবে এই কাজে।

৩. সরকার, পেশাজীবী ও স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন, এনজিও সবাই মিলে তিনটি প্রধান ক্যানসার (স্তন, জরায়ুমুখ, মুখগহ্বর) স্ক্রিনিং এর জন্য জাতীয় ক্যানসার স্ক্রিনিং কর্মসূচি প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন করতে হবে।

৪. উপজেলা পর্যায়ে দুজন (একজন পুরুষ ও একজন নারী) চিকিৎসককে প্রশিক্ষণ দিয়ে সমাজভিত্তিক ও সংগঠিত ক্যানসার স্ক্রিনিং চালু করতে হবে। প্র্যোজনে এ জন্য পদ সৃষ্টি/নির্ধারিত করতে হবে।

৫. সব অংশীজনগণকে সম্পৃক্ত করে ক্যানসার সচেতনতা কার্যক্রম পরিচালিত করতে হবে। এজন্য সুনির্দিষ্ট নীতিমালা ও মূল্যায়নের ভিত্তিতে স্বচ্ছতার ভিত্তিতে বাছাইকৃত বেসরকারি ও স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনগুলিকে অর্থ বরাদ্দ কিংবা প্রণোদনা দিতে হবে।

৬. সরকারি খাতে ক্যানসার নির্ণয় ও চিকিৎসা সুবিধা বিকেন্দ্রীকরণ ও সম্প্রসারণ করতে হবে। সর্বজনীন স্বাস্থ্য সুরক্ষার দলিলে স্বাক্ষরকারী হিসেবে ক্যানসারের মতো দীর্ঘমেয়াদি ও ব্যয়বহুল চিকিৎসার দায়িত্ব মূলত সরকারের। সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা সুবিধার অপ্রতুলতা বিবেচনায় নিয়ে সরকার স্ট্র্যাটেজিক পারচেজের মাধ্যমে বেসরকারি হাসপাতালে স্বল্প খরচে চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে পারে।

৭. যন্ত্রপাতি ক্রয়ে ট্যাক্স/লেভি ছাড়ের বিনিময়ে বেসরকারি হাসপাতালের ১০% সেবা দরিদ্র রোগীদের বিনামূল্যে পাওয়ার কথা থাকলেও বাস্তবে তার প্রয়োগ নেই। সরকারের এটা নিশ্চিত করা উচিত।

৮. একজন স্বজনসহ ক্যানসার রোগীদের যাতায়াত ভাড়া মওকুফ করা উচিত।

৯. দায়িত্বপ্রাপ্ত কোনো কর্মকর্তার অযোগ্যতা, উদ্যোগহীনতা, অনিয়ম ও স্বেচ্ছাচারিতায় ক্যানসার চিকিৎসা, নির্ণয় ও প্রতিরোধ কার্যক্রম থেকে দীর্ঘকাল জনগণ বঞ্চিত হয়, সরকারের উচিত তদন্তের মাধ্যমে দায়দায়িত্ব নির্ধারণ করে ব্যবস্থা নেয়া দরকার। তাহলে এ ধরনের গাফিলতি কমবে। জাতীয় ক্যানসার ইনস্টিটিউটে সবকয়টি রেডিওথেরাপি মেশিন অচল থাকা, জাতীয় ক্যানসার স্ক্রিনিং ও নিবন্ধন প্রোগ্রাম চালু না করার মতো বিষয়গুলি তদন্তের দাবি রাখে।

এসইউজে/এমআইএইচএস/এএসএম

Read Entire Article