জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের সর্বশেষ হালনাগাদ (৩০ জুন, ২০২৪) অনুযায়ী দেশে ক্রীড়া ফেডারেশন, অ্যাসোসিয়েশন ও সংস্থা ৫৫টি। বাংলাদেশ অলিম্পিক অ্যাসোসিয়েশন (বিওএ), বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন (বাফুফে) ও বাংলাদেশ ক্রিকেট রোর্ড (বিসিবি) ছাড়া বাকি সবগুলোর সভাপতি সরকার মনোনীত।
মন্ত্রী, সংসদ সদস্য, ব্যবসায়ী, আমলা এবং রাজনীতিবিদদেরই বিভিন্ন ফেডারেশন, অ্যাসোয়িশেন ও সংস্থার সভাপতি মনোনয়ন দিয়েছে জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ। হকি, সাঁতার, দাবা, শুটিংসহ কয়েকটি ফেডারেশনের সভাপতি বিভিন্ন সার্ভিসেস সংস্থার শীর্ষ এবং উর্ধ্বতন কর্মকর্তা।
রাজনৈতিক বিবেচনায় যাদের বিভিন্ন ফেডারেশন ও অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি নিয়োগ দেওয়া হয়েছিল, গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার সরকারের পতনের পর তাদের বেশিরভাগই এখন আত্মগোপনে। কেউ কেউ বিদেশে পালিয়ে গেছেন, কেউ কেউ গ্রেফতার হয়েছেন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে।
সভাপতি নেই, অনেক ফেডারেশনে নেই সাধারণ সম্পাদকও। অচলাবস্থার মধ্যে ক্রীড়াঙ্গন। এ অবস্থা থেকে পরিত্রাণ পেতে ক্রীড়াঙ্গনে দ্রুত সংস্কার প্রয়োজন। সেই প্রক্রিয়াই শুরু করেছে যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয় এবং জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ।
কোন ফেডারেশনের সভাপতির বর্তমান অবস্থান কী, ফেডারেশনে অনুপস্থিত কিনা, কর্মকাণ্ডে সম্পৃক্ত কিনা তা নিয়ে একটি প্রতিবেদন তৈরি করে যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ে দাখিল করেছে জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ (এনএসসি)।
জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের পরিচালক (ক্রীড়া) এস এম শাহ হাবিবুর রহমান হাকিম বৃহস্পতিবার জাগো নিউজকে বলেছেন, ‘কোন ফেডারেশনের সভাপতি কী অবস্থায় আছেন, অনুপস্থিত কিনা এসব জরুরি ভিত্তিতে জানাতে চিঠি দিয়েছিলাম ফেডারেশন ও অ্যাসোসিয়েশনগুলোকে। ১৪ আগস্ট ছিল ফেডারেশন/অ্যাসোসিয়েশনগুলোর রিপোর্ট প্রদানের শেষ দিন। আমরা যে ফিডব্যাকগুলো পেয়েছি, তা প্রতিবেদন আকারে দাখিল করেছি যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ে।’
প্রথম চিঠি দেওয়া হয়েছিল ১১ আগস্ট। ওই চিঠিতে কোনো সময় বেঁধে দেওয়া ছিল না। যে কারণে সাড়া দেয়নি ফেডারেশনগুলো। পরের দিন কঠোর ভাষায় ফেডারেশনগুলোকে আরেকটি চিঠি দিয়ে ১৪ আগস্টের মধ্যে চাহিদা তথ্য প্রেরণের নির্দেশ দেয় জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ। কেউ চাহিদা তথ্য প্রেরণ না করলে সেই ফেডারেশন ও অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতিকে অনুপস্থিত বলে গণ্য করা হবে-জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের এমন নির্দেশনার পরই ফেডারেশনগুলো তাদের সভাপতির অবস্থান জানিয়ে চিঠি দেয়।
কতগুলো ফেডারেশন, অ্যাসোসিয়েশন ও সংস্থা ফিডব্যাক দিয়েছে? আপনাদের কঠিন নির্দেশনার পরও কি কোনো ফেডারেশন অসহযোগিতা করেছে? এমন প্রশ্নের জবাবে জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের পরিচালক বলেন, ‘অফিস থেকে বের হয়ে যাওয়ায় সংখ্যাটা বলতে পারছি না। কোন কোন ফেডারেশন ও অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি অনুপস্থিত আছেন, নিষ্ক্রিয় আছেন এবং কোন ফেডারেশন তথ্য দেয়নি, সেভাবেই প্রতিবেদন তৈরি করে মন্ত্রণালয়ে দিয়েছি।’
সভাপতিরা জাতীয় ক্রীড়া পরিষদেরই মনোনীত। ক্রীড়াঙ্গনের সংস্কারের দাবি উঠেছে। সবাই চাচ্ছেন এ অঙ্গন যেন ঢেলে সাজানো হয়। আপনারা কি আগে সভাপতি পরিবর্তনের বিষয়টি দেখছেন? নাকি পুরো কমিটিই নতুন করে করতে যাচ্ছেন? ‘এ বিষয়টা আসলে আমরা বলতে পারবো না। প্রতিবেদন দেখে মন্ত্রণালয় যে নির্দেশনা দেবে আমরা সেভাবেই কাজ করবো’-বলেছেন এস এম শাহ হাবিবুর রহমান হাকিম।
আওয়ামী লীগ সরকারের মনোনয়ন দেওয়া সভাপতিদের মধ্যে সাবেক মন্ত্রী ছিলেন বেশ কয়েকজন। পতন হওয়া সরকারের মন্ত্রী পরিষদে যারা ছিলেন তারা হলেন-ক্রিকেট বোর্ডে নাজমুল হাসান পাপন, টেনিসে খালিদ মাহমুদ চৌধুরী, ক্যারমে জুনাইদ আহমেদ পলক, স্কোয়াশে কর্ণেল (অব) ফারুক খাঁন ও খিউকুশিন কারাতেতে ডা. দীপু মনি।
ক্রিকেট বোর্ডের সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন আত্মগোপনে আছেন। বাফুফে সভাপতি কাজী মো. সালাউদ্দিন রাজনীতিতে সম্পৃক্ত নন। ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভাই শেখ কামালের বন্ধু হিসেবে তিনি আওয়ামী লীগের আনুকুল্য পেয়ে এসেছেন। ৫ আগস্টের পর তিনি বাফুফে ভবনে না এলেও জানা গেছে, বাসা থেকে ফেডারেশনের দৈনন্দিন কাজ করছেন। দাবার সভাপতি পুলিশের সাবেক আইজি বেনজির আহমেদ। দুর্নীতির অভিযোগ মাথায় নিয়ে তিনি দেশের বাইরে।
বাংলাদেশ অ্যাথলেটিক ফেডারেশনের সভাপতি প্রধানমন্ত্রীর সদ্য বিদায়ী মুখ্য সচিব মো. তোফাজ্জল হোসেন মিয়া। অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর তার চুক্তি বাতিল করেছে। কাবাডির সভাপতি সভাপতি পুলিশের সাবেক আইজি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুন। বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার তার চুক্তিও বাতিল করেছে।
এছাড়া যারা বিভিন্ন দায়িত্বে আছেন, তারা হলেন-জুডোর সভাপতি ফয়জুর রহমান সদ্য সাবেক এমপি, তায়কোয়ানদো ফেডারেশনের সভাপতি ধানমন্ডির আওয়ামী লীগ নেতা কাজী মোর্শেদ হোসেন কামাল, কারাতের সভাপতি সাবেক সচিব ড. মোজাম্মেল হক খান, ভলিবলের সভাপতি আত্মগোপনে থাকা ঢাকা উত্তর সিটির মেয়র আতিকুল ইসলাম, কুস্তির সভাপতি সাবেক মন্ত্রী শাহজাহান খান, ব্যাডমিন্টনের সভাপতি তথ্য কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান ড. আবদুল মালেক, টেবিল টেনিসের সভাপতি সাবেক সচিব মেজবাহ উদ্দিন, বাস্কেটবলের সভাপতি সাবেক এমপি ডা. মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন, জিমন্যাস্টিকসের সভাপতি আবাহনীর পরিচালক শেখ বশির আহমেদ মামুন, মহিলা ক্রীড়া সংস্থার সভাপতি সাবেক এমপি মাহবুব আরা গিনি, রোইংয়ের সভাপতি স্বেচ্ছাসেবক লিগের সভাপতি ক্যাসিনো কাণ্ডের অন্যতম হোতা মোল্লা আবু কাওছার, মার্শাল আর্টের সভাপতি সাবেক মন্ত্রী হাসানুল হক ইনু, সাইক্লিংয়ের সভাপতি সাবেক মন্ত্রীপরিষদ সচিব কবির বিন আনোয়ার, রোলার স্কেটিংয়ের সভাপতি সাবেক এমপি আবুল কালাম আজাদ, উশুর সভাপতি আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক ও সাবেক এমপি আবদুস সোবহান গোলাপ, আন্তর্জাতিক তায়কোয়ান্দোর সভাপতি সাবেক এমপি মোজাম্মেল হক, বুত্থানের সভাপতি সাবেক রাষ্ট্রদূত সৈয়দ শাহেদ রেজা, তিনি অলিম্পিক অ্যাসোসিয়েশনেরও মহাসচিব, সার্ফিংয়ের সভাপতি সাবেক সংসদ সদস্য জাতীয় পার্টির নেতা কাজী ফিরোজ রশীদ, মাউন্টেনিয়ারিংয়ের সভাপতি আওয়ামী লীগের সাবেক হুইপ মিজানুর রহমান মানু, চুকবলের সভাপতি চট্টগ্রাম সিটির সাবেক মেয়র ও আওয়ামী লীগ নেতা আ জ ম নাছির উদ্দীন, জুজুৎসুর সভাপতি সাবেক সংসদ সদস্য ফারুক খন্দকার প্রিন্স।
আরআই/এমএমআর/জেআইএম